‘জুয়া ও কোটিপতির’ গ্রাম নিয়ে পাওয়া গেল ভয়ানক তথ্য by খান মাহমুদ আল রাফি
কোমরপুর গ্রামের আনসার মন্ডলের ছেলে ময়নদ্দিন ময়না কোনো বড় ব্যবসায়ী নন। তিনি মহাজনপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং মহাজনপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য। পাশাপাশি ব্র্যাক ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ব্যবসা করেন। কিন্তু এই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আড়ালে পরিচালনা করে আসছেন অনলাইন জুয়া। অল্প দিনেই তার হাতে আসে আলাদিনের চেরাগ। এলাকায় অভিযোগ উঠেছে, অবৈধ এসব আয়ের বৈধতা দিতেই ময়না এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবসা শুরু করেন।
গত ৫ আগস্টের পর আওয়ামীপন্থি সব নেতাকর্মী পালালেও ময়না প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। সমাজের বিভিন্ন বিচার-সালিশ করছেন। তার ভাই মশিউর রহমান মহাজনপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং মুজিবনগর ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি।
এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর জনপ্রিয় পত্রিকা ও অনলাইন কালবেলায় ‘অনলাইন জুয়া যেন এক গোলকধাঁধা, ‘ম্যাকানিজম’ বিদেশে বসেই’ শিরোনামে এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেই প্রতিবেদনের সূত্র ধরেই অনুসন্ধানে নামে কালবেলা। তাতেই বেরিয়ে আসে ‘জুয়া ও কোটিপতি’ খ্যাত গ্রাম নিয়ে ভয়ংকর সব তথ্য। সে গ্রামে জুয়ার ব্যবসা চালানোর অন্যতম হোতা ময়নদ্দিন ময়নার বিরুদ্ধে জানা গেল এসব তথ্য।
একই গ্রামের বাসিন্দা মো. শামীম রেজা। তার পৈতৃক বাড়িটি সংস্কারের পাশাপাশি কয়েকতলা বিশিষ্ট নতুন দুটি বাড়ির মালিক তিনি। বর্তমানে শামীম যে বাড়িতে বসবাস করেন, সেই বাড়ির পাইলিংয়ে তিনি খরচ করেছেন দুই কোটি টাকার বেশি। বাড়িটির নিচে দুই তলা আন্ডারগ্রাউন্ডসহ ওপরে রয়েছে তিন তলা। তার বাড়ির পাশে রয়েছে একটি আম-বাগান। এখন সেই বাগানের অর্ধেকও কিনে নিয়েছেন তিনি।
তারও বিষয়েও অনুসন্ধানে নামে কালবেলা। জানা যায়, মো. শামীম রেজার বাবা সাহজুল সর্দার ওরফে বিলু সর্দার ২০১৬ সালে একটি চালকল স্থাপন করেন। বাবার সঙ্গে চালকলের দেখাশোনা শুরু করেন শামীম। তিন বছর পর তার এক চাচাতো ভাই রাজুর সহায়তা ও জামান মাস্টার নামে এক ব্যবসায়ীর মাধ্যমে অনলাইন জুয়া পরিচালনার একটি ‘ওয়ান এক্স বেট মাস্টার’ চ্যানেল সংগ্রহ করেন তিনি। এর মাধ্যমে শুরু করেন অবৈধ আয়। এসব টাকা পাচারের জন্য জামান মাস্টারের ডাচ-বাংলার এজেন্ট ব্যাংকিং চ্যানেলকে ব্যবহার শুরু করেন শামীম। এক বছরের মধ্যে শামীম আরও দুটি মেল বেট চ্যানেলের মালিক বনে যান। এর প্রায় ছয় মাস পর রাশিয়া থেকে পরিচালিত লাইন বেটের সহকারী কান্ট্রি ম্যানেজার নিযুক্ত হন তিনি। এতে তারও হাতে চলে আসে আলাদিনের চেরাগ।
অবৈধ এই অনলাইন জুয়া পরিচালনার জন্য শামীম গড়ে তোলেন নিজস্ব বাহিনী। সাহেবপুর গ্রামের রতনকে ব্যক্তিগত ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় কয়েকজনের মাধ্যমে অনলাইন জুয়ার চ্যানেল চালানো শুরু করেন শামীম।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কোমরপুর গ্রামে যখন প্রথম হার্ডওয়্যারের ব্যবসা শুরু করেন শামীম, তখন প্রায় দুই কোটি টাকার মালামাল কেনেন তিনি। অল্প সময়ের মধ্যে কোমলপুর গ্রামেই ২৫ বিঘা জমি কিনেছেন তিনি। এ ছাড়া সাহেবপুর গ্রামে তার শ্বশুর ও স্ত্রীর নামে অনেক জমি কিনেছেন বলে অভিযোগ পেলেও বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সূত্রটি জানায়, বর্তমানে শামীমের মোট চ্যানেল সংখ্যা ১৪।
নিরাপত্তাজনিত কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোমরপুর গ্রামের কয়েকজন এই প্রতিবেদককে বলেন, টাকার গরমে এলাকায় মাদক ব্যবসা ও নারী কেলেঙ্কারিতেও জড়িয়ে পড়েছেন শামীম। কিছুদিন আগে তারই এক অনলাইন জুয়া চ্যানেলের পার্টনারকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে তার টাকা ও চ্যানেল আত্মসাৎ করে নেন বলেও জানান তারা।
শামীম-ময়না চার্জশিটভুক্ত আসামি
ময়না ও শামীম দুজনই অনলাইন জুয়ার এজেন্ট চ্যানেল পরিচালনা ও সাইবার ক্রাইমের দায়ে বিচারাধীন একটি মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। ২০২২ সালের ২৫ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মুজিবনগর থানায় মামলা করে পুলিশ। এ ছাড়া ঢাকার সিআইডিতে দুজনের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি করে মামলা রয়েছে। আর শামীম রেজা ওরফে শামীমের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সের চিঠির প্রেক্ষিতে মানি লন্ডারিংয়ের অনুসন্ধান চলমান বলে নিশ্চিত করেছে মালিবাগ সিআইডি হেডকোয়ার্টারের একটি সূত্র।
তবে মেহেরপুরে তিনবার অভিযান চালিয়েও শামীম রেজা ওরফে শামীমকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি সিআইডি। আওয়ামী লীগ নেতা আমাম হোসেন মিলুর ছত্রচ্ছায়ায় থেকে প্রতিবারই বেঁচে যান শামীম। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপরই খোলস পাল্টে ভিন্নমতের শীর্ষ এক রাজনৈতিক নেতার ছত্রচ্ছায়ায় চলে আসেন।
সিআইডি সূত্রে আরও জানা গেছে, একই ইউনিয়নের সাহেবপুর গ্রামের রতন ও শাহীন ঢাকায় বসে শামীম ও ময়নার অনলাইন জুয়ার কয়েকটি চ্যানেল পরিচালনা করছেন। সম্প্রতি ঢাকায় সিআইডির অভিযানে শামীমের দুটি চ্যানেল ধরা পড়েছে। তিনি রোজ ফ্যাশনের মাসুদের সঙ্গে যৌথভাবে চালাতেন চ্যানেল দুটি। ঢাকায় থেকে চ্যানেল দুটি চালাতেন সুমন ও শামীমের চাচাতো ভাই সাদ্দাম। এ সময় সিআইডির জালে সুমন ধরা পড়লেও গ্রেপ্তারের হাত থেকে বেঁচে যান সাদ্দাম ও শামীম। চ্যানেল দুটি উদ্ধারের পর সিআইডির পক্ষ থেকে যে মামলা করা হয়, তাতে এক নম্বর আসামি সাদ্দাম ও দুই নম্বর আসামি শামীম আর তিন নম্বর আসামি সুমন।
জেলায় জোর গুঞ্জন আছে, বিগত দিনে ময়না ও শামীম আওয়ামী লীগ নেতা আমাম হোসেন মিলু ও সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের স্ত্রী সৈয়দা মোনালিসার ছত্রচ্ছয়ায় থেকে অনলাইন জুয়ার সাম্রাজ্য চালিয়েছেন। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর খোলস পাল্টে ভিন্ন দলের নেতার আশ্রয়ে ঠাঁই নিয়েছেন তারা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শামীম রেজা করোনার প্রথম দিকে ওয়ান এক্স বেটে কাজ করলেও পরে রাশিয়ান লাইনবেট কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে একাই শুরু করেন অনলাইন জুয়ার ব্যবসা। কয়েকটি এজেন্ট চ্যানেল নিয়ে কাজে লাগান নিজ গ্রামের বেশ কয়েকজন যুবককে। তার এজেন্ট হিসেবে কাজ করে ইতোমধ্যে পুলিশের কাছে আটক হয়েছে নিমাই হালদার, প্রসেনজিৎ হালদার, সুমন আলী ও সুমন নামের চার যুবক। নিমাই হালদার, সুমন আলী ও সুমন শামীম রেজার হয়ে কাজ করেন বলে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শামীম রেজার এজেন্ট হয়ে কাজ করেন তার ছোট ভাই সোহাগ রানা, নিমাই হালদারের চাচাতো ভাই দিলিপ হালদার, কোমরপুর গ্রামের আজিবার আলীর ছেলে শিপলু রানা, কুদ্দুস আলীর ছেলে আকাশ আলী।
একাধিক সূত্র কালবেলাকে জানিয়েছে, ময়নদ্দিন ময়না ও শামীম রেজা দেশের বাইরে সিঙ্গাপুর ও দুবাইয়ে স্বজনদের মাধ্যমে স্বর্ণের ব্যবসাও পরিচালনা করছেন। তবে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কিন্তু তারা অবৈধভাবে অনলাইন জুয়ার এজেন্ট হিসেবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে সবাইকে ম্যানেজ করে চলছেন।
অভিযোগ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ময়নদ্দিন ময়না ও শামীম রেজার সঙ্গে যোগাযোগ করে কালবেলা। কিন্তু পরপর দুদিন কোমরপুর গ্রামে গিয়েও তাদের দেখা পাওয়া যায়নি। তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়।
অনেক চেষ্টার পর ময়নদ্দিন ময়না কালবেলাকে বলেন, আমাম হোসেন মিলু ও সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন শত্রুতামূলকভাবে আমাকে অনলাইন জুয়ার মামলায় ফাঁসিয়েছেন। মামলায় আমার নাম না থাকলেও আমাকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন আর সেই মামলার ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে থাকা ছাত্রলীগ নেতা হেলালের নাম বাদ দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আমি অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম শাহিনের মাধ্যমে ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গেলে তিনি আমাকে বলেন, তুমি মিলুর সঙ্গে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলো। এ সময় ময়নদ্দিন সাক্ষী হিসেবে যতারপুর ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সেলিম রেজা ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বেলাল হোসেনকে হাজির করেন। তারা তখন বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে মিলুর ভাই শিলু হেরে গেলে প্রতিহিংসমূলকভাবে ময়নদ্দিন ময়নাকে অনলাইন জুয়ার মামলায় ফাঁসানো হয়।
কিন্তু অল্প সময়ে এত সম্পদ কীভাবে হলো, এ নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিং আমার বোনের নামে আর মেহেরপুর শহরের বাড়িটি আমার প্রবাসী ছোট ভাইয়ের নামে। এ সময় রাজপ্রাসাদের মতো বাড়ির নির্মাণ খরচ ও দেশের বাইরে স্বর্ণের ব্যবসার কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, দেশে প্রথম অনলাইন জুয়া-সংক্রান্ত মামলার প্রধান আসামি বদুরুদ্দোজা রয়েলকে আটক করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তিতে ময়নদ্দিন ময়না ও শামীম রেজাসহ আরও ১৫ জনকে আসামি করে পুলিশ। শামীম রেজা ও ময়নদ্দিন ময়না সেই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।
জানতে চাইলে মেহেরপুর জেলা বিএনপি ও যুবদলের একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা এই মুহূর্তে কোনো বিষয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়া থেকে তাদের বিরত থাকার কথা জানান।
এ বিষয়ে মেহেরপুর জেলা পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের সদস্য উপপরিদর্শক (এসআই) মনির হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা মেহেরপুর থেকে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্সে দুই দফায় মোট ১৪ জনের নাম পাঠিয়েছি। অনলাইন ক্যাসিনোর মাধ্যমে অর্থ পাচারসহ অবৈধ পন্থায় সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধানের জন্যই নামগুলো দিয়ে চিঠি দিয়েছি। তদন্তের স্বার্থে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আমি নামগুলো জানাতে পারব না।’
সাইবার আইন জটিলতায় অধরা দুজন
মেহেরপুরের পুলিশ সুপার মাকসুদা আক্তার খানম কালবেলাকে বলেন, ‘মানি লন্ডারিং একটি অর্গানাইজ ক্রাইম। এটা তদন্ত করে সিআইডি। এতে আমাদের মামলাগুলো তদন্তের গতি কমার কোনো বিষয় বা সুযোগ নেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনলাইন জুয়ার অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা বা মামলা নেওয়া যেত। কিন্তু ২০২৩ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন হলে মামলার ধারা ‘আমলযোগ্য নয়’ করা হয়। ফলে অনলাইন জুয়ার আসামিদের গ্রেপ্তার বা তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি মামলা নেওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়।’
যা বলছেন সচেতন মহল মেহেরপুরে জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট সেলিম রেজা কল্লোল কালবেলাকে বলেন, ‘মুজিবনগর উপজেলার কোমরপুর কোটিপতিদের গ্রাম বলে খ্যাত। এই এক গ্রামেই রয়েছে ১০টি এজেন্ট ব্যাংকিং শাখা। এসব এজেন্ট ব্যাংকের বার্ষিক টার্নওভার অনেক ব্যাংকের প্রধান শাখার চেয়েও বেশি। অর্থ উপার্জন দোষের কিছু নয়। তবে সেটা হওয়া উচিত ধর্মীয় মূল্যবোধ ও রাষ্ট্রীয় আইনের প্রতি সম্মান ও আনুগত্য রেখে।’
সিপিবি নেতা অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান বলেন, ‘শুধু কোমরপুর গ্রাম নয়, এসব অপরাধ এখন দেশব্যাপী। আর্থিক লোভে পড়ে আইনবিরোধী এই কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে যুবসমাজ। হয়তো তারা এলাকার কারও ক্ষতি করছে না। কিন্তু এটা অপরাধ, আইন পরিপন্থী কাজ। এখন জুয়া খেলে কিশোররাও কোটিপতি হয়ে উঠছে। এটা দৃষ্টিকটু। কথিত আছে, এই গ্রামের অর্ধশত যুবক রাশিয়ায় বসে বাংলাদেশের অনলাইন জুয়াড়ি ও অনলাইন ক্যাসিনো এজেন্টের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। বিষয়গুলো প্রশাসনের খতিয়ে দেখা জরুরি।’
ময়নদ্দিন ময়না (বাঁয়ে) ও শামীম রেজা। ছবি : কালবেলা |
No comments