ভারতকে টার্গেট করছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট, অভিযোগ বিজেপির

গত দুই দশকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে বেশ এগিয়েছে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। এ সময়ের মধ্যে নিজেদের কূটনীতি, রাজনীতি, ব্যবসা ও সামরিক ইস্যুতে সম্পর্কে বেশ গুরুত্ব দিয়েছে দুই দেশ। এশিয়াতে চীনের উত্থান ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বরাবরই গুরুত্ব পেয়েছে দিল্লি। তবে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ইস্যুতে এই সম্পর্কে ফাটলের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। কেননা ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে এবার অভিযোগের আঙুল তুলেছে মোদির হিন্দুত্ববাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে একজোট হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং ডিপ স্টেট উপাদানগুলো ভারতকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছে বিজেপি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন জিও নিউজ।

এতে বলা হয়, মোদি সরকার আসার আগ থেকেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে দিল্লির যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে সেদিক থেকে বিজেপির অভিযোগটি বেশ আশ্চর্যজনকই বটে। কেননা দুই দেশের মধ্যে কিছু মতানৈক্য থাকলেও উভয়ই নিজেদের সম্পর্ক জোরালো করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে। বৃহস্পতিবার ভারতের ক্ষমতাসীন দলটি অভিযোগ তুলেছে যে, মোদি এবং তার ঘনিষ্ঠ আদানি গ্রুপকে দুর্বল করতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্টের (ওসিসিআরপি) প্রতিবেদন ব্যবহার করছে গান্ধীর কংগ্রেস পার্টি। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এসব প্রতিবেদন কেবল মোদি এবং আদানি গ্রুপকেই নিশানা করেছে। গত মাসে আদানি গ্রুপ এবং তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ২৬৫ বিলিয়ন ডলারের ঘুষকাণ্ডের অভিযোগ তুলেছে নিউইয়র্কের একটি আদালত।

এরপর তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে। যদিও অভিযোগটি ‘ভিত্তিহীন’ বলে নাকচ করেছে আদানি গ্রুপ। এর আগে ওসিসিআরপি জানিয়েছে, রাষ্ট্রীয় মদদে ভারতীয় হ্যাকাররা ইসরাইলি পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে সরকারবিরোধীদের টার্গেট করেছে। যদিও এসব অভিযোগ নাকচ করেছে দেশটির সরকার। এর আগেও মোদির সমালোচনার জন্য রাহুল, ওসিসিআরপি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ৯২ বছর বয়সী বিলিয়নিয়ার জর্জ সোরোসকে দায়ী করেছিল বিজেপি। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ফরাসি গণমাধ্যমের একটি প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে বিজিপি বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এবং সোরসের মতো ডিপ স্টেট ব্যক্তিদের কাছ থেকে অর্থ সহায়তা পাচ্ছে ওসিসিআরপি। এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে টার্গেট করে ভারতকে অস্থিতিশীল করা ডিপ মার্কিন ডিপ স্টেটের একটি স্পষ্ট উদ্দেশ্য বলেও এক্সের একাধিক পোস্টে দাবি করেছে বিজেপি। এক্সের পোস্টে আরও অভিযোগ করা হয়েছে, ওসিসিআরপিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে সবসময়ই তৎপর যুক্তরাষ্ট্রের ডিপ স্টেট উপাদানগুলো।

বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করেছে বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র এবং সংসদ সদস্য সম্বিত পাত্র। ফ্রান্সের একটি গণমাধ্যম প্রতিবেদনে জানিয়েছে ওসিসিআরপি’র অর্থায়নের ৫০ ভাগের জোগান দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রদপ্তর। পাত্র বলেছেন, ডিপ স্টেটের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে মিডিয়া টুল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ওসিসিআরপি। এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইউএসএইড, সোরোস এবং কংগ্রেস পার্টি তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। বিজেপির অভিযোগ নিয়ে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে এক বিবৃতিতে ওসিসিআরপি বিজেপির অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, মার্কিন সরকার কিছু অর্থায়ন করলেও তাদের সম্পাদকীয় নীতি ও প্রতিবেদনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাব নেই। সম্প্রতি গৌতম আদানির বিরুদ্ধে মার্কিন অভিযোগের জেরে বিপাকে পড়েছে ভারত সরকার। কংগ্রেসের নেতাদের অভিযোগ হচ্ছে সবসময়ই আদানিকে রক্ষা করে এসেছে মোদি ও তার দল। গত সপ্তাহে এ বেশ কয়েকবার সংসদীয় অধিবেশন স্থগিত করেছে ভারতের পার্লামেন্ট।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.