৯৮ বছরের এপার-ওপারে কী পেলেন চা শ্রমিকরা by রিপন দে
দিনের
পর দিন অবর্ণনীয় শোষণ-নির্যাতন ও মানবেতর জীবনযাপনে অতিষ্ঠ হয়ে একসময় চা
শ্রমিকেরা কাজ ছেড়ে নিজেদের এলাকায় ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯২১ সালের
২০ মে ‘মুল্লক চলো’ আওয়াজ তুলে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক চাঁদপুরে পৌঁছেছিলেন
স্টিমারে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যাওয়ার জন্য। কিন্তু সেখানে বাধা দেয়
মালিকপক্ষ। বাগান মালিকদের স্বার্থরক্ষাকারী ব্রিটিশ সরকারের গোর্খা
সৈন্যরা সেদিন পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে শত শত মেহনতি মানুষকে। পরে
তাদের লাশ ভাসিয়ে দেয়া হয় মেঘনা নদীতে। আজ থেকে ৯৮ বছর আগের এই ঘটনার পর
থেকে ২০ মে দিনটিকে চা শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
ব্রিটিশ শাসনামলে ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সিলেট অঞ্চলে চা উৎপাদন শুরু করেন ব্রিটিশ মালিকরা। উন্নত জীবনের লোভ দেখিয়ে উপমহাদেশের দারিদ্র্যপীড়িত বিভিন্ন এলাকা থেকে গরিব মানুষদের এনে চা-বাগানের কাজে লাগিয়েছিলেন বাগান মালিকেরা। নামমাত্র মজুরিতে অমানসিক পরিশ্রম করতে বাধ্য করা হতো ওই অসহায় শ্রমিকদের।
সেই দিবসের ৯৮ বছর পর কেমন আছেন চা শ্রমিকরা?
সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে মৌলভীবাজারের কয়েকটি চা বাগানে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে তাদের বাসস্থানে গিয়ে দেখা যায় এখনও মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এখনো লড়ছেন এ মানুষগুলো। ২০ মে ‘চা শ্রমিক দিবস’ ঘোষণা করা, দৈনিক মজুরি বাড়ানোসহ বিভিন্ন দাবিতে চা শ্রমিকদের ন্যায়সংগত সংগ্রাম চলছে।
চা গাছ ছেঁটে ছেঁটে ২৬ ইঞ্চির বেশি বাড়তে দেয়া হয় না। চা শ্রমিকের জীবনটাও ছেঁটে দেয়া চা গাছের মতোই, লেবার লাইনের ২২২ বর্গফুটের একটা কুঁড়ে ঘরে বন্দি। মধ্যযুগের ভূমিদাসের মতোই চা বাগানের সঙ্গে বাধা তাদের নিয়তি।
চা শিল্প বাংলাদেশের অন্যতম একটি বৃহৎ শিল্প। জাতীয় অর্থনীতিতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু চা শ্রমিক ইউনিয়নের তথ্যমতে দেশের প্রায় ১৬৫টি চা বাগানের শ্রমিকরা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। প্রায় ২০০ বছর ধরে মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানে বংশ পরম্পরায় কাজ করছেন চা শ্রমিকরা। তাদের শ্রমে এই শিল্পের উন্নয়ন হলেও শ্রমিকদের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে না। দৈনিক একজন শ্রমিকের মজুরি ১০২ টাকা। আর সেই সঙ্গে সপ্তাহ শেষে তিন কেজি খাওয়ার অনুপযোগী আটা। তাও আবার ওজনে কম।
ব্রিটিশ শাসনামলে ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সিলেট অঞ্চলে চা উৎপাদন শুরু করেন ব্রিটিশ মালিকরা। উন্নত জীবনের লোভ দেখিয়ে উপমহাদেশের দারিদ্র্যপীড়িত বিভিন্ন এলাকা থেকে গরিব মানুষদের এনে চা-বাগানের কাজে লাগিয়েছিলেন বাগান মালিকেরা। নামমাত্র মজুরিতে অমানসিক পরিশ্রম করতে বাধ্য করা হতো ওই অসহায় শ্রমিকদের।
সেই দিবসের ৯৮ বছর পর কেমন আছেন চা শ্রমিকরা?
সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে মৌলভীবাজারের কয়েকটি চা বাগানে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে তাদের বাসস্থানে গিয়ে দেখা যায় এখনও মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এখনো লড়ছেন এ মানুষগুলো। ২০ মে ‘চা শ্রমিক দিবস’ ঘোষণা করা, দৈনিক মজুরি বাড়ানোসহ বিভিন্ন দাবিতে চা শ্রমিকদের ন্যায়সংগত সংগ্রাম চলছে।
চা গাছ ছেঁটে ছেঁটে ২৬ ইঞ্চির বেশি বাড়তে দেয়া হয় না। চা শ্রমিকের জীবনটাও ছেঁটে দেয়া চা গাছের মতোই, লেবার লাইনের ২২২ বর্গফুটের একটা কুঁড়ে ঘরে বন্দি। মধ্যযুগের ভূমিদাসের মতোই চা বাগানের সঙ্গে বাধা তাদের নিয়তি।
চা শিল্প বাংলাদেশের অন্যতম একটি বৃহৎ শিল্প। জাতীয় অর্থনীতিতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু চা শ্রমিক ইউনিয়নের তথ্যমতে দেশের প্রায় ১৬৫টি চা বাগানের শ্রমিকরা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। প্রায় ২০০ বছর ধরে মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানে বংশ পরম্পরায় কাজ করছেন চা শ্রমিকরা। তাদের শ্রমে এই শিল্পের উন্নয়ন হলেও শ্রমিকদের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে না। দৈনিক একজন শ্রমিকের মজুরি ১০২ টাকা। আর সেই সঙ্গে সপ্তাহ শেষে তিন কেজি খাওয়ার অনুপযোগী আটা। তাও আবার ওজনে কম।
মৌলিক চাহিদা পূরণে দীর্ঘদিন ধরে মজুরি বৃদ্ধি, ভূমি অধিকার, বাসস্থান ও চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নসহ বিভিন্ন দাবি তাদের। কিন্তু বাস্তবায়ন না হওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন চা শ্রমিক পরিবারের সদস্যরা। চা বাগানের শ্রমিকরা তাদের শ্রম দিয়ে চা বাগান আগলে রাখলেও তাদের শিক্ষা ও চিকিৎসা এখন সেই অবহেলিত রয়ে গেছে।
সরকার তাদের আবাস্থল নিজ নিজ মালিকানায় করে দেবে বললেও এখনো এর কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। আর এ জন্য দীর্ঘদিন ধরে ভূমি নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছেন চা শ্রমিকরা।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের উপদেষ্টা পরাগ বাঁড়ই জানান, চা শ্রমিকরা সেই ব্রিটিশ আমল থেকে এ দেশে বাস করছে। তারা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযোদ্ধে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিল। কিন্তু তারা আজও অবহেলিত।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাম ভজন কৈরী জানান, চা শ্রমিকদের ২০ দফা দাবি মালিকপক্ষকে লিখিত দেয়ার পর কয়েক দফা দ্বি-পক্ষীয় আলোচনা হয়েছে। তবে মালিকপক্ষ কালক্ষেপণ করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বালিশিরা বাগান ভ্যালীর সভাপতি বিজয় হাজরা বলেন, বিভিন্ন দিবস এলে সবাই আমাদের খোঁজ নেয়, বক্তৃতা বিবৃতি দেয়। কিন্তু আমাদের যে মূল দাবি সেগুলো নিয়ে কেউ ভাবে না ৷ আমাদের মূল দাবি হলো আমাদের ভূমির অধিকার৷ চাকরি না থাকলে ভূমিও থাকবে না। এরকম অমানবিক নিয়মের মধ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি ৷ প্রশাসন ও বাগান মালিকদের কাছে চা শ্রমিকরা মানুষ কিনা সেটা স্পষ্ট হওয়া উচিত। তা না হলে শ্রমিকদের সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করা হতো না।
তিনি জানান, আইন অনুযায়ী বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য প্রতিটি পরিবারে একটি টিউবওয়েল বসানোর কথা। অথচ পানি সংগ্রহ করতে গিয়ে ঢাকা শহরের মতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
No comments