চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা যে কারণে বাড়ানো প্রয়োজন by প্রকৌশলী নাজমুল হোসেন
কোটা
পদ্ধতি কোনো রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি সঠিক কোনো সিদ্ধান্ত হতে পারে
না। নিয়মানুযায়ী পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে একটা নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরে এই
কোটার আওতায় এনে সুবিধা দিয়ে একে নতুনভাবে সংস্কার করা প্রয়োজন। আমাদের
পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতেও কোটা প্রথা আছে।
তবে এর মধ্যে যত জটিলতা ও ভুল ছিল সামপ্রতিককালে সেটার সংস্কার করা হয়েছে। কোটা রাখার বিধান এবং তার প্রয়োগ যে নিয়মে বাংলাদেশ সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে বাস্তবে তার মিল খুবই কম। শুধুমাত্র পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নেয়ার জন্যই বাড়তি সুবিধা হিসেবে এই কোটা প্রথার সৃষ্টি। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে যাদের জন্য এটা প্রযোজ্য নয় তাদের অনেকেও এই সুবিধা ভোগ করছেন। যুদ্ধাহত, পঙ্গু এবং ভাতার ওপর নির্ভরদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে, তাই বলে সকল মুক্তিযোদ্ধার ক্ষেত্রে সেটা প্রযোজ্য হতে পারে না। সে জন্য এই ক্ষেত্রে সংস্কার করে এটাকে ‘প্রপরশন রেট অফ অ্যাভারেজ’ আকারে নিয়ে আসা যেতে পারে। চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বয়সের সীমাবদ্ধতা এর চেয়েও মারাত্মক সমস্যা। এই দাবিতেও ছাত্রছাত্রীদের একটা বড় অংশ দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক মেধাবী ছাত্র মো. ইমতিয়াজ হোসেন ও এমএ আলীর নেতৃত্বে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ’ নামের অপর একটি অরাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের ব্যানারে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। তবে এই পুরাতন ও সুদীর্ঘ আন্দোলন আজও সফলতার মুখ দেখেনি। যদিও এ নিয়ে ঢাকা সহ সারা দেশে কম আন্দোলন হয় নি।
তবে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের চেয়ে বয়স বৃদ্ধিতে সম্পৃক্ত আন্দোলনকারীরা শক্তিতে ও সংখ্যায় একটু কম। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কলামিস্ট, সচেতন মহলও এর পক্ষে জোরালো মত পোষণ করে আসছেন তাদের কথায়, ভাষ্যে আর লেখনীতে। তাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের মতো বয়সবৃদ্ধিকরণের আন্দোলনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে এবং আসা উচিত। কারণ সেশন জট, নিয়োগ বাণিজ্য, দলীয় রাজনৈতিক প্রভাব, বিভিন্ন নতুন নিয়োগে আবেদনের আগেই বিদ্যমান চাকরিজীবীরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেতে মামলা করে সেটা স্থগিত করার মতো কারণ, যথাসময়ে নিয়োগ কার্যক্রম না হওয়া, পদ খালি থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি না থাকা ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য কারণ। একটা মানুষের মেধা, প্রতিভা, যোগ্যতা আর দক্ষতার পরিচয় ২৭-৩০ বছরের মধ্যে কখনই প্রকাশ পায় না। কয়েক লাখ বেকার এই ২৭-২৮ বছরে সেশন জটে আক্রান্ত হয়ে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ করেছেন।
তাছাড়া বিদ্যমান সেশন জটের মাত্রা কিছুটা কমলেও সামপ্রতিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি কলেজেও সেশন জট চলমান রয়েছে। এর সঙ্গে উপরে উল্লিখিত সমস্যাগুলো যোগ করলে তাদের প্রকৃত যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ থাকে না বললেই চলে। তাছাড়া সরকারে বয়সের এই সীমাবদ্ধতার নিয়মের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন প্রাইভেট সেক্টরও নিয়োগ দিচ্ছে না। ফলে এদিকে প্রবেশটাও সংকুচিত হয়ে গেছে। পাশাপাশি ব্রেন-ড্রেনের মতো কারণ তো রয়েছেই। তাহলে দেশ কীভাবে বেকারমুক্ত হবে আর এই সব উচ্চ শিক্ষিতরাই কোথায় যাবেন? বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশে বয়সের সীমাবদ্ধতা বাস্তবতার নিরীখে একটি মারাত্মক সমস্যা। দেশের প্রায় ৮০% মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে। মোট শ্রম শক্তির একটা বড় অংশ কর্মহীন। অথচ নিম্ন মধ্যম আয়ের এ দেশে বহু কষ্টে টাকা-পয়সা খরচ করে পড়াশুনার মূল লক্ষ্যই হলো কর্মসংস্থান।
একেকটা উচ্চ শিক্ষিত ছেলেমেয়ে পড়ালেখা শেষ করে চাকরির আশায় মুখিয়ে থাকে। কিন্তু হাতে থাকা অবশিষ্ট সময় অর্থাৎ ২/৩ বছরে চাকরির জন্য বাড়তি পড়াশুনা করে নিজেকে প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করতে করতে এই সময়টুকু শেষ হয়ে যায় এই বয়সের প্রাচীরের কারণে। তাহলে কি ১৭/১৮ বছরের অর্জিত মূল্যবান সনদের মেয়াদ ২/৩ বছরেই শেষ হয়ে যাবে? এই প্রশ্নটা গোটা জাতির বিবেকের কাছেই থাকুক। সরকারের নিশ্চয় অজানা নয়, গত কয়েক বছরে এই হতাশায় অনেক হতদরিদ্র মেধাবী, প্রতিবন্ধীরাও তাদের কষ্টার্জিত মূল্যবান সনদ সরকার বরাবর বিভিন্ন মাধ্যমে জমা দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, এতে অনেক মেধাবী আত্মহত্যার পথও বেছে নিয়েছেন। মূলত এটা একটা সর্বজনীন, মৌলিক, গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকারও বটে।
কোটা বাতিলের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করতে সরকার নিশ্চয় একটা নতুন নীতিমালা তৈরি করবে। এক্ষেত্রে আবেদনে সাধারণ প্রার্থীদের সঙ্গে অন্যদের বিদ্যমান বয়সের যে সীমা অর্থাৎ বিভাগীয় প্রার্থীদের জন্য ৪০, জুডিশিয়ালদের জন্য ৩২, ডাক্তারদের জন্য ৩২, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩২ এবং নার্সদের জন্য ৩৬ রয়েছে। এসব ক্ষেত্রেও নিশ্চয় পরিবর্তনের একটা প্রভাবে পড়বে। তবে সেই পরিবর্তন বিদ্যমান বয়স কমানো না বাড়ানোর মাধ্যমে হবে সেটা এখনই বোঝা যাচ্ছে না। এমনকি সেটা অভিন্নও হতে পারে। তবে সরকারের বোধোদয় হওয়া উচিত হবে সেটাকে বিদ্যমান সর্বোচ্চ সীমার সঙ্গে আরো বর্ধিত করা। যাতে করে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের যেমন একদিকে দীর্ঘদিনের এই দাবি মেনে নেয়া হবে তেমনি অন্যদিকে জনগণের মতামত ও সাংবিধানিক অধিকার প্রাপ্তির প্রতিফলন ঘটবে।
অনেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কয়েক বছর অস্থায়ী চাকরি করে বাড়তি অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা আর দক্ষতা নিয়ে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করতে পারবেন। কিন্তু তার জন্য তো পর্যাপ্ত সুযোগ থাকতে হবে। এতে করে দেশ ও সরকারি ক্ষেত্রগুলো যোগ্য লোক পাবে। কারণ সরকারি কর্মকর্তাদের হাতেই দেশের ভালো-মন্দ নির্ভর করে বহুলাংশে। আর এর মোক্ষম সময় হতে পারে ২৫-৩৫ বা তার চেয়ে বেশি বয়স। তাই কোটার মতো করে বয়সের এই সীমাবদ্ধতাও সরকারের তুলে দেয়া উচিত। গড় আয়ু যখন ৪৫ বছর ছিল তখন চাকরিতে প্রবেশের বয়স ছিল ২৭ বছর। ৫০ বছর অতিক্রম করলে সেটা ২৭ থেকে ৩০ বছরে উন্নীত করে সরকার। এদেশের মানুষের বর্তমান গড় আয়ু ৭১.৬০। তাহলে গড় বিবেচনায় নিশ্চয় বয়সসীমা বর্ধিত করা শতভাগ যৌক্তিক।
আরো একটা উল্লেখযোগ্য বিষয়, বিসিএস-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সব ক্যাডার নিয়োগের ক্ষেত্রে দেশের সবচেয়ে উচ্চ মর্যাদার এই সব পদগুলোতে একটা ম্যাচুউরিটি বা পরিপক্বতা থাকা দরকার। কারণ এই নিয়োগে যেসব পদে এই তরুণ-তরুণীরা প্রবেশ করেন তার চেয়েও তাদের অধীনস্থ বিদ্যমান নিম্ন পদের অনেক চাকরিজীবীই রয়েছেন যারা অনেক বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। অথচ পদমর্যাদা বিবেচনায় উল্টো তাদেরকেই সম্মান করতে হয় এবং শতভাগ ভুল হলেও তাদের নির্দেশও মানতে হয়। অন্যদিকে তারা একেকটা বড় এলাকার দায়-দায়িত্ব নিয়েও থাকেন। ভুলে গেলে চলবে না- এই পদধারীরাই একদিন পদোন্নতির শীর্ষে গিয়ে অদূর ভবিষ্যতে দেশের সর্বেসর্বা হিসেবে কাজ করবেন। তাই এই পদগুলোর ক্ষেত্রেও ৩০ থেকে ৩৫ বা তার চেয়ে বেশি বয়স নির্ধারিত করা উচিত এবং একটা ন্যূনতম সময়সীমার অভিজ্ঞতা সংশ্লিষ্ট পদের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক করা উচিত।
সময়ের সেরা সরকার ব্যবস্থা দেশে চলমান রয়েছে। দেশের উন্নয়নে, দেশকে আধুনিক বাংলাদেশে রূপান্তরের ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের গৃহীত ও বাস্তবায়িত সব উদ্যোগই প্রশংসনীয়। তবে তার সঙ্গে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের দাবি দীর্ঘদিনের এই বয়সের সীমাবদ্ধতা তুলে দিয়ে সেটা ৩৫ বা তার চেয়ে বেশি করলে সরকারের ব্যাপক সচেতনতারই পরিচয় প্রকাশ পাবে। পাশাপাশি এটাও হবে বর্তমান সরকারের একটা আলোচিত এবং সময়োপযোগী সেরা উদ্যোগ। তাছাড়া সব ক্ষেত্রে কেন আন্দোলন করতে হবে? জনগণের কল্যাণে, দেশের স্বার্থে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকারকে নিজ থেকেই উদ্যোগ নিতে হয়।
তবে এর মধ্যে যত জটিলতা ও ভুল ছিল সামপ্রতিককালে সেটার সংস্কার করা হয়েছে। কোটা রাখার বিধান এবং তার প্রয়োগ যে নিয়মে বাংলাদেশ সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে বাস্তবে তার মিল খুবই কম। শুধুমাত্র পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নেয়ার জন্যই বাড়তি সুবিধা হিসেবে এই কোটা প্রথার সৃষ্টি। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে যাদের জন্য এটা প্রযোজ্য নয় তাদের অনেকেও এই সুবিধা ভোগ করছেন। যুদ্ধাহত, পঙ্গু এবং ভাতার ওপর নির্ভরদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে, তাই বলে সকল মুক্তিযোদ্ধার ক্ষেত্রে সেটা প্রযোজ্য হতে পারে না। সে জন্য এই ক্ষেত্রে সংস্কার করে এটাকে ‘প্রপরশন রেট অফ অ্যাভারেজ’ আকারে নিয়ে আসা যেতে পারে। চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বয়সের সীমাবদ্ধতা এর চেয়েও মারাত্মক সমস্যা। এই দাবিতেও ছাত্রছাত্রীদের একটা বড় অংশ দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক মেধাবী ছাত্র মো. ইমতিয়াজ হোসেন ও এমএ আলীর নেতৃত্বে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ’ নামের অপর একটি অরাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের ব্যানারে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। তবে এই পুরাতন ও সুদীর্ঘ আন্দোলন আজও সফলতার মুখ দেখেনি। যদিও এ নিয়ে ঢাকা সহ সারা দেশে কম আন্দোলন হয় নি।
তবে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের চেয়ে বয়স বৃদ্ধিতে সম্পৃক্ত আন্দোলনকারীরা শক্তিতে ও সংখ্যায় একটু কম। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কলামিস্ট, সচেতন মহলও এর পক্ষে জোরালো মত পোষণ করে আসছেন তাদের কথায়, ভাষ্যে আর লেখনীতে। তাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের মতো বয়সবৃদ্ধিকরণের আন্দোলনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে এবং আসা উচিত। কারণ সেশন জট, নিয়োগ বাণিজ্য, দলীয় রাজনৈতিক প্রভাব, বিভিন্ন নতুন নিয়োগে আবেদনের আগেই বিদ্যমান চাকরিজীবীরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেতে মামলা করে সেটা স্থগিত করার মতো কারণ, যথাসময়ে নিয়োগ কার্যক্রম না হওয়া, পদ খালি থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি না থাকা ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য কারণ। একটা মানুষের মেধা, প্রতিভা, যোগ্যতা আর দক্ষতার পরিচয় ২৭-৩০ বছরের মধ্যে কখনই প্রকাশ পায় না। কয়েক লাখ বেকার এই ২৭-২৮ বছরে সেশন জটে আক্রান্ত হয়ে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ করেছেন।
তাছাড়া বিদ্যমান সেশন জটের মাত্রা কিছুটা কমলেও সামপ্রতিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি কলেজেও সেশন জট চলমান রয়েছে। এর সঙ্গে উপরে উল্লিখিত সমস্যাগুলো যোগ করলে তাদের প্রকৃত যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ থাকে না বললেই চলে। তাছাড়া সরকারে বয়সের এই সীমাবদ্ধতার নিয়মের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন প্রাইভেট সেক্টরও নিয়োগ দিচ্ছে না। ফলে এদিকে প্রবেশটাও সংকুচিত হয়ে গেছে। পাশাপাশি ব্রেন-ড্রেনের মতো কারণ তো রয়েছেই। তাহলে দেশ কীভাবে বেকারমুক্ত হবে আর এই সব উচ্চ শিক্ষিতরাই কোথায় যাবেন? বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশে বয়সের সীমাবদ্ধতা বাস্তবতার নিরীখে একটি মারাত্মক সমস্যা। দেশের প্রায় ৮০% মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে। মোট শ্রম শক্তির একটা বড় অংশ কর্মহীন। অথচ নিম্ন মধ্যম আয়ের এ দেশে বহু কষ্টে টাকা-পয়সা খরচ করে পড়াশুনার মূল লক্ষ্যই হলো কর্মসংস্থান।
একেকটা উচ্চ শিক্ষিত ছেলেমেয়ে পড়ালেখা শেষ করে চাকরির আশায় মুখিয়ে থাকে। কিন্তু হাতে থাকা অবশিষ্ট সময় অর্থাৎ ২/৩ বছরে চাকরির জন্য বাড়তি পড়াশুনা করে নিজেকে প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করতে করতে এই সময়টুকু শেষ হয়ে যায় এই বয়সের প্রাচীরের কারণে। তাহলে কি ১৭/১৮ বছরের অর্জিত মূল্যবান সনদের মেয়াদ ২/৩ বছরেই শেষ হয়ে যাবে? এই প্রশ্নটা গোটা জাতির বিবেকের কাছেই থাকুক। সরকারের নিশ্চয় অজানা নয়, গত কয়েক বছরে এই হতাশায় অনেক হতদরিদ্র মেধাবী, প্রতিবন্ধীরাও তাদের কষ্টার্জিত মূল্যবান সনদ সরকার বরাবর বিভিন্ন মাধ্যমে জমা দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, এতে অনেক মেধাবী আত্মহত্যার পথও বেছে নিয়েছেন। মূলত এটা একটা সর্বজনীন, মৌলিক, গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকারও বটে।
কোটা বাতিলের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করতে সরকার নিশ্চয় একটা নতুন নীতিমালা তৈরি করবে। এক্ষেত্রে আবেদনে সাধারণ প্রার্থীদের সঙ্গে অন্যদের বিদ্যমান বয়সের যে সীমা অর্থাৎ বিভাগীয় প্রার্থীদের জন্য ৪০, জুডিশিয়ালদের জন্য ৩২, ডাক্তারদের জন্য ৩২, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩২ এবং নার্সদের জন্য ৩৬ রয়েছে। এসব ক্ষেত্রেও নিশ্চয় পরিবর্তনের একটা প্রভাবে পড়বে। তবে সেই পরিবর্তন বিদ্যমান বয়স কমানো না বাড়ানোর মাধ্যমে হবে সেটা এখনই বোঝা যাচ্ছে না। এমনকি সেটা অভিন্নও হতে পারে। তবে সরকারের বোধোদয় হওয়া উচিত হবে সেটাকে বিদ্যমান সর্বোচ্চ সীমার সঙ্গে আরো বর্ধিত করা। যাতে করে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের যেমন একদিকে দীর্ঘদিনের এই দাবি মেনে নেয়া হবে তেমনি অন্যদিকে জনগণের মতামত ও সাংবিধানিক অধিকার প্রাপ্তির প্রতিফলন ঘটবে।
অনেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কয়েক বছর অস্থায়ী চাকরি করে বাড়তি অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা আর দক্ষতা নিয়ে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করতে পারবেন। কিন্তু তার জন্য তো পর্যাপ্ত সুযোগ থাকতে হবে। এতে করে দেশ ও সরকারি ক্ষেত্রগুলো যোগ্য লোক পাবে। কারণ সরকারি কর্মকর্তাদের হাতেই দেশের ভালো-মন্দ নির্ভর করে বহুলাংশে। আর এর মোক্ষম সময় হতে পারে ২৫-৩৫ বা তার চেয়ে বেশি বয়স। তাই কোটার মতো করে বয়সের এই সীমাবদ্ধতাও সরকারের তুলে দেয়া উচিত। গড় আয়ু যখন ৪৫ বছর ছিল তখন চাকরিতে প্রবেশের বয়স ছিল ২৭ বছর। ৫০ বছর অতিক্রম করলে সেটা ২৭ থেকে ৩০ বছরে উন্নীত করে সরকার। এদেশের মানুষের বর্তমান গড় আয়ু ৭১.৬০। তাহলে গড় বিবেচনায় নিশ্চয় বয়সসীমা বর্ধিত করা শতভাগ যৌক্তিক।
আরো একটা উল্লেখযোগ্য বিষয়, বিসিএস-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সব ক্যাডার নিয়োগের ক্ষেত্রে দেশের সবচেয়ে উচ্চ মর্যাদার এই সব পদগুলোতে একটা ম্যাচুউরিটি বা পরিপক্বতা থাকা দরকার। কারণ এই নিয়োগে যেসব পদে এই তরুণ-তরুণীরা প্রবেশ করেন তার চেয়েও তাদের অধীনস্থ বিদ্যমান নিম্ন পদের অনেক চাকরিজীবীই রয়েছেন যারা অনেক বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। অথচ পদমর্যাদা বিবেচনায় উল্টো তাদেরকেই সম্মান করতে হয় এবং শতভাগ ভুল হলেও তাদের নির্দেশও মানতে হয়। অন্যদিকে তারা একেকটা বড় এলাকার দায়-দায়িত্ব নিয়েও থাকেন। ভুলে গেলে চলবে না- এই পদধারীরাই একদিন পদোন্নতির শীর্ষে গিয়ে অদূর ভবিষ্যতে দেশের সর্বেসর্বা হিসেবে কাজ করবেন। তাই এই পদগুলোর ক্ষেত্রেও ৩০ থেকে ৩৫ বা তার চেয়ে বেশি বয়স নির্ধারিত করা উচিত এবং একটা ন্যূনতম সময়সীমার অভিজ্ঞতা সংশ্লিষ্ট পদের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক করা উচিত।
সময়ের সেরা সরকার ব্যবস্থা দেশে চলমান রয়েছে। দেশের উন্নয়নে, দেশকে আধুনিক বাংলাদেশে রূপান্তরের ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের গৃহীত ও বাস্তবায়িত সব উদ্যোগই প্রশংসনীয়। তবে তার সঙ্গে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের দাবি দীর্ঘদিনের এই বয়সের সীমাবদ্ধতা তুলে দিয়ে সেটা ৩৫ বা তার চেয়ে বেশি করলে সরকারের ব্যাপক সচেতনতারই পরিচয় প্রকাশ পাবে। পাশাপাশি এটাও হবে বর্তমান সরকারের একটা আলোচিত এবং সময়োপযোগী সেরা উদ্যোগ। তাছাড়া সব ক্ষেত্রে কেন আন্দোলন করতে হবে? জনগণের কল্যাণে, দেশের স্বার্থে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকারকে নিজ থেকেই উদ্যোগ নিতে হয়।
No comments