যে কারণে কালোমেঘে ঢেকে যায় দিনের আলো by সঞ্চিতা সীতু
বৃষ্টি, কালবৈশাখী ঝড় আর বজ্রপাতে বিপর্যস্ত মানুষ। ঝড়ের আগে রাজধানীর
আকাশ হয়ে যায় রাতের মতো অন্ধকার। ঘন কালো মেঘে ঢেকে যায় দিনের আলো। এই
ঘনকালো মেঘকে বলা হয় বজ্রমেঘ। ঘন ঘন বজ্রমেঘ সৃষ্টির কারণে বজ্রপাত বেড়েছে
বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত বজ্রাঘাতে প্রায়
অর্ধশত মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান, বজ্রমেঘের ঘনত্ব বেশি হওয়ার কারণে ঢাকা
পড়ছে দিনের আলো। এরপর প্রবল বৃষ্টি ঝরে হালকা হচ্ছে মেঘ। কালবৈশাখীর সময়
বজ্রমেঘ সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও
তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। উত্তর আন্দামান সাগর ও আশেপাশের এলাকায়
লঘুচাপ বিরাজ করছে। এ কারণে বজ্রমেঘের ঘনঘটা বাড়ায় আজ বুধবার সকাল ৯টা থেকে
পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ,বরিশাল,চট্টগ্রাম ও
সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া এবং বিজলি
চমকানোসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি বর্ষণ ও শিলাবৃষ্টি হতে পারে।
এতে আরও বলা হয়, সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে
পারে। আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ।
জানা যায়— বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা, ধোঁয়া, কয়লার সূক্ষ্মকণা, গ্যাসের
অণু প্রভৃতিকে আশ্রয় করে জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়। বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উচ্চতায়
ভেসে বেড়ায় এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণা। এগুলোকেই বলা হয় মেঘ। এর ওপর সূর্য
কিরণ প্রতিফলিত বা প্রতিসারিত হয়ে বিচিত্র বর্ণ ধারণ করে।
১৮০৩ সালে ইংরেজ রসায়নবিদ লিউক হাওয়ার্ড মেঘের শ্রেণিবিন্যাসে বিশেষ
তৎপর হন এবং আকৃতি ও চেহারা অনুযায়ী মেঘকে চার ভাগে বিভক্ত করেন। এগুলো
হলো— সিরাস বা অলোক মেঘ, স্ট্র্যাটাস বা স্তর মেঘ, কিউমুলাস বা স্তূপ মেঘ ও
নিম্বাস বা ঝঞ্ঝা মেঘ।
এছাড়া মেঘের উচ্চতার অবস্থান অনুযায়ী অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠ থেকে মেঘের উচ্চতা
অনুযায়ী মেঘকে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে— উঁচু আকাশের মেঘ,
মাঝারি আকাশের মেঘ ও নিচু আকাশের মেঘ।
আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সমিতি ১৮৯৪ সালে আকার ও উচ্চতা অনুযায়ী মেঘকে ১০
ভাগে বিভক্ত করে। পরবর্তী সময়ে আকাশের বুকে ২৮ রকম মেঘের কথা বলা হয়।
আবহাওয়াবিদরা বলেন, কিছু কিছু মেঘ আছে যা আকাশে ছড়িয়ে না গিয়ে
লম্বালম্বিভাবে বাড়তে থাকে। এমন মেঘ দুই ধরনের হয়— কিউমুলাস ও
কিউমুলোনিম্বাস। এর মধ্যে কিউমুলোনিম্বাস মেঘকে বলা হয় বজ্রমেঘ। এই মেঘ
ভারী বৃষ্টিপাত, বজ্রপাত এমনকি টর্নেডোরও সহায়ক। ঝড় কোনদিকে যাচ্ছে তা এই
মেঘের গতি দেখে বোঝা যায়। কিউমুলোনিম্বাস মেঘের উচ্চতা ১০-১২ কিলোমিটার
পর্যন্ত হতে পারে। এই মেঘ সৃষ্টি করে তীব্র বজ্র।
চলতি মৌসুমে বজ্রমেঘ সৃষ্টির বিষয়ে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বাংলা
ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই মৌসুমে কালবৈশাখীর আগে কালো মেঘ হওয়া স্বাভাবিক।
বজ্রমেঘের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ঘন ও কালো হবে। মেঘের উচ্চতা যদি বেশি হয় তাহলে
তাকে আমরা বজ্রমেঘ বলি। কালবৈশাখী ঝড়ের বৈশিষ্ট্য এমনই। এমন সময় একদিকে
বজ্রমেঘ, অন্যদিকে বাতাসের তীব্র গতি থাকবে। মেঘের ঘনত্ব বেড়ে গেলে সৃষ্টি
হয় বজ্রমেঘ। প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে এমন মেঘ হওয়া খুবই স্বাভাবিক।’
তবে এই আবহাওয়াবিদ উল্লেখ করেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার মেঘের আকার ও
পরিমাণ বেশি। তিনি বলেন, ‘সাধারণত মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে এ ধরনের মেঘ
সৃষ্টি হয়। এই ঋতুতে এমন মেঘের সৃষ্টি স্বাভাবিক। গতকালও (২৯ এপ্রিল) এ
ধরনের মেঘ হয়েছে। মেঘের ঘনত্ব ও উচ্চতার ওপর নির্ভর করে আবহাওয়াবিদরা
পরবর্তী সময়ে আবহাওয়া কেমন হবে তা নির্ণয় করে থাকেন।’
No comments