কলকাতার মেয়রের প্রেম নিয়ে রসালো আলোচনা
কলকাতার
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবীর সঙ্গে সম্পর্ক এবং স্ত্রীর বিরুদ্ধে
নিত্যনতুন তোলা অভিযোগ নিয়ে দু’সপ্তাহ ধরে রসালো আলোচনা চলছে। অনেকের মতে,
মেয়রের ব্যক্তিগত জীবন এখন মেগা সিরিয়ালের থেকে বেশি টানটান উত্তেজনায়
ভরপুর। আলোচনা চলছে রাজনীতির অঙ্গনেও। সরস সেই আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায়ও যোগ দিয়েছেন। শোভনকে মমতা আদর করে ডাক নাম কানন বলেই
ডাকেন। সেই কাননের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রকাশ্যে যে আলোচনা চলছে তাতে তিনি
অখুশি। মেয়রকে তাই শোধরাতে ভালো করে কাজ করার ব্যাপারে মনোযোগী হতে
বলেছেন। তবে মমতা তার প্রিয় কাননের প্রেম নিয়ে কৌতূহল চেপে রাখতে পারেননি।
তাই শুক্রবার বিধানসভায় শোভনকে দেখে মমতা বলেছেন, ‘শুধুই প্রেম করছিস, নাকি
কাজও করছিস।’ তখন মেয়র বলেছেন, ‘আমি ও সব করি নাকি!’ এবার মমতাও পাল্টা
বলেন, ‘ঠিক আছে, সবার সামনে ভোট হোক। দেখি কতজন তোর পক্ষে।’ আসলে শোভন
চট্টোপাধ্যায় শুধু কলকাতার মেয়রই নন। দু’দুটি মন্ত্রকের মন্ত্রী। দলের হয়ে
একটি জেলার দায়িত্বও তার কাঁধে ছিল। মমতাকে মা বলে ডাকেন মেয়র। তার মোবাইলে
মমতার নম্বরটি মা বলেই সেভ করা। এহেন শোভনের ব্যক্তিগত জীবনের কাদা
ছোড়াছুড়িতে বিরক্ত দলের নেত্রী থেকে সবাই। কিছুদিন আগেই স্ত্রী রত্না
চট্টোপাধ্যায়কে ডিভোর্সের নোটিশ দিয়েছেন মেয়র। তার শুনানি চলছে। রত্না
সমঝোতার পক্ষে হলেও মেয়র শোভন তাতে রাজি নন। আসলে তৃতীয় এক নারীর উপস্থিতি
মেয়রের ব্যক্তিগত জীবনে নাটকীয় মোড় এনে দিয়েছে। কলকাতার একটি কলেজের
ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে আজকাল মেয়রের পাশে পাশে দেখা
গেছে। বৈশাখীকে বন্ধু বলে পরিচয় দিলেও মেয়র এক কাপড়ে পৈতৃক বাড়ি ছেড়ে
আলাদা একটি ফ্ল্যাটে বাস করার পর থেকে এই বৈশাখীই তাকে মানসিক ও
শারীরিকভাবে সহায়তা করে আসছেন। এমনকি প্রতিদিন খাবারও পৌঁছে দিচ্ছেন।
বৈশাখী নিজেকে মেয়রের পারিবারিক বন্ধু বলে পরিচয় দিলেও মেয়রের স্ত্রী তা
মানতে রাজি নন। বরং মেয়রের শ্বশুর পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন মেয়রের বাসস্থান
থেকে রাত তিনটেয় বৈশাখীর বের হয়ে আসা নিয়ে। বৈশাখীর স্বামী যাদবপুর
বিশ্ববিদ্যালযের ইংরেজির অধ্যাপক মানস মণ্ডল অবশ্য স্ত্রীর কর্মকাণ্ডকে
সমর্থন দিয়েছেন। তবে মেয়র শোভন যেভাবে বুক বাজিয়ে বলেছেন এমন বন্ধুত্ব তিনি
‘বুক’ দিয়ে আগলে রাখতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করবেন না, তাতে দুই বিবাহিত
নর-নারীর সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আবার বৈশাখী কোনোরকম লুকোছাপা না করে
মিডিয়ার কাছে নিয়মিত মেয়রের হয়ে পারিবারিক ব্যাপারেও মন্তব্য করছেন। বৈশাখী
বলেছেন, শোভন চট্টোপাধ্যায় তাকে বলেন, বিয়ে না করে দল করলেই তার ভালো হতো।
এখন তার মনে হয় বিয়ে করেই তিনি ভুল করেছেন এবং সেই জন্যই এত সমস্যা তাকে
সইতে হচ্ছে। বৈশাখী এও জানিয়েছেন, তার জন্য এমন ‘অকারণে’ মেয়রকে মানসিকভাবে
বিপর্যস্ত হতে দেখে তিনি নিজেও খুব দুঃখিত। বৈশাখী অবশ্য বলেছেন, আমি তো
সম্পর্কের কথা অস্বীকার করিনি। কিন্তু সম্পর্কটা কী রকম, সেটা তো বুঝতে
হবে। শোভনদার সঙ্গে আমার অত্যন্ত ভালো বন্ধুত্ব রয়েছে। শোভনদা আমার অত্যন্ত
কাছের জন। সেই সম্পর্ক জীবনের শেষদিন পর্যন্ত থাকবে। অবশ্য তার ও মেয়রের
মধ্যেকার সম্পর্কের সমীকরণ নিয়ে যে মুচমুচে আলোচনা চলছে সে সম্পর্কে
বৈশাখীর সাফ জবাব, এই গোটা পর্বটা আমার কাছে একটা অপ্রাপ্তমনস্ক সমাজের
প্রতিফলন। সম্পর্ক কত রকমের হয়, তার কত রকম রং হয়, নির্যাস হয়, আমাদের সমাজ
সেটা এখনও ঠিকমতো বোঝে না।
No comments