এমএনপি সেবা নিয়ে পাল্টাপাল্টি by কাজী সোহাগ
নম্বর
অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর বদলের সুযোগ (মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি) বা
এমএনপি সেবা চালু নিয়ে তৈরি হয়েছে পাল্টাপাল্টি অবস্থা। মোবাইল অপারেটরদের
সংগঠন এসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (এমটব) সেবাটি
চালুর জন্য সময় চেয়েছে দুই মাস। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ
টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) জানিয়েছে এত সময় দেয়া হবে না।
এমন পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমে সময় চাওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে বার্তা পাঠায়
এমটব। অন্যদিকে নিজেদের অবস্থানে অনড় রয়েছে বিটিআরসি। বিষয়টি নিয়ে দুপক্ষের
কেউই এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আলোচনায় বসেনি। সংশ্লিষ্টরা জানান, মূলত এ
ধরনের পাল্টাপাল্টি অবস্থায় ঝুলে যেতে পারে এমএনপি সেবার কার্যক্রম।
বিটিআরসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এমএনপি সেবা বিলম্বিত করার কোনো সুযোগ
নেই। অপারেটররা এমএনপি সেবা চালু করা প্রসঙ্গে ৫০ থেকে ৬০টি বিষয়ের অবতারণা
করেন। এগুলোর বেশির ভাগই আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বিটিআরসি ও
মোবাইল ফোন অপারেটরস (এমএনও) ও এমএনপি অপারেটর প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত
একটি কমিটি সেবাটি বাস্তবায়নে চারবার বৈঠকও করেছে। গত বছরের ৩০ নভেম্বর
ইনফোজিলিয়ন বিডি-টেলিটেক কনসোর্টিয়াম লিমিটেডকে এমএনপি লাইসেন্স দেয়া হয়।
তাদের ১৮০ দিনের মধ্যে সেবাটি চালুর জন্য সময় বেঁধে দেয় বিটিআরসি।
বিটিআরসির দেয়া এই শর্তে মার্চেই এমএনপি সেবা চালুর ঘোষণা দিয়েছিল
ইনফোজিলিয়ন বিডি-টেলিটেক। সে অনুযায়ী সব প্রস্তুতিও নিয়েছে কোম্পানিটি। ঠিক
এ অবস্থায় এমএনপি সেবা চালু করতে আরো দুই মাস সময় চেয়েছে অপারেটররা।
যুক্তি তুলে ধরে এমটবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এমএনপি একটি জটিল প্রক্রিয়া
যাতে গ্রাহকদের লেনদেনের বিষয়টি জড়িত। বাংলাদেশ সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র দেশ
যেখানে ৬০টি গেটওয়ে (ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ, ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে,
ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) এবং বহু অ্যাকসেস নেটওয়ার্ক সার্ভিস
অপারেটর (মোবাইল অপারেটরস, আইপিটিএসপি, বিডব্লিওএ অপারেটর, পিএসটিএন
অপারেটর ইত্যাদি) রয়েছে- এ থেকেই বোঝা যায় বিষয়টি কতটা জটিল। এমটব
জানিয়েছে, বর্তমান টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের জটিলতা মাথায় রেখে আমাদের চাওয়া
এসব স্টেকহোল্ডারের মধ্যে একটি সঠিক সমন্বয়। বিটিআরসি, মোবাইল অপারেটর ও
এমএনপি লাইসেন্স-প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত একটি ওয়ার্কিং কমিটি
গ্রাহক-বান্ধব এমএনপি প্রক্রিয়া চালুর জন্য কাজ করছে। একটি কার্যকর এমএনপি
প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার পরপরই এমএনপি লাইসেন্স-প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান সব
স্টেকহোল্ডারের সমন্বয়ে যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়নের
পর সেবাটি চালু করবে। সঠিক পরিকল্পনা, অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার নকশা ও
বাস্তবায়ন, তথ্য প্রযুক্তি ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি, এমএনপির প্লাটফর্ম ও
পরীক্ষা-নিরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য এ সময় প্রয়োজন। এমটব জানিয়েছে,
সেবাটি চালু করতে প্রত্যেকটি অপারেটরকে নাম্বার পোর্টিং সংক্রান্ত কারিগরি
নির্দেশনা দেয়া নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় মোবাইল ফোন অপারেটররা
এখনও এমন কোন নির্দেশনা পায়নি। যদিও, কার্যকর এমএনপি সেবা চালুর জন্য
মোবাইল অপারেটররা সবসময়ই এ বিষয়ে জোর দিয়ে আসছে। টেলিযোগাযোগশিল্প দৃঢ়ভাবে
বিশ্বাস করে, অপারেটরদের মধ্যে একটি সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করতে
সেবার গুণগত মানের দিকেই জোর দিতে হবে। এর আগে ২০১৬ সালের মে মাসে এমএনপি
সেবা চালু করার বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। ওইসময়
সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম মানবজমিনকে জানান, ২০১৬
সালের সেপ্টেম্বরে এমএনপি সেবা চালু হবে। এমএনপির নীতিমালায় উল্লেখ করা
হয়েছে, এই সুবিধা দিতে অপারেটররা গ্রাহকদের কাছ থেকে ৩০ টাকা নিতে পারবে।
বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয় আগেই অনুমোদন করেছে। একবার এমএনপি সুবিধা নেয়ার পর
গ্রাহক আবার নতুন কোনো অপারেটরে যেতে চাইলে তাকে ৪৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে।
বর্তমানে ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশ ছাড়াও প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানে
এমএনপি সেবা চালু রয়েছে। অপারেটর বদলের সুযোগ দিয়ে বিটিআরসি প্রস্তাবনা
তৈরির পর ২০১৫ সালের ২রা ডিসেম্বর এমএনপি নীতিমালা অনুমোদন দেয় অর্থ
মন্ত্রণালয়। উল্লেখ্য, নম্বর না বদলে গ্রাহকদের অন্য অপারেটরে যাওয়ার সুযোগ
করে দিতে ২০১৩ সালের জুনে মোবাইল ফোন অপারেটরদের নির্দেশ দেয় বিটিআরসি।
গাইড লাইন না থাকায় অপারেটররা ওই নির্দেশ অনুযায়ী সঠিক সময়ে সেবাটি চালু
করতে পারেনি।
No comments