যেভাবে শিশু মৃত্যুহার রোধ করেছে বাংলাদেশ -ইকোনমিস্ট
দুঃসাহসিক
ভ্রমণকারীদের জন্য ডায়রিয়া কেবলই একটা লজ্জাকর উপদ্রব হলেও দরিদ্র জনগণের
জন্য মৃত্যুর কারণ হতে পারে। বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর কলেরা ও আমাশয়ের মতন
আন্ত্রিক রোগে প্রায় ৫ লাখ শিশু মারা যায়। বারবার সংক্রমণের দরুন তারা
দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন নিউমোনিয়ার মতন প্রাণঘাতী রোগে মারা যাওয়ার সম্ভাবনাও
বেড়ে যায়। ডায়রিয়া এমনকি ব্যক্তির শারীরিক গঠনেও পরিবর্তন আনতে পারে।
ভারতীয় শিশুরা একই ধরনের পরিবারে বেড়ে ওঠা সাব-সাহারান আফ্রিকার শিশুদের
চেয়ে খাটো হয়। কারণ, তারা প্রায়শই অসুস্থ হয়ে পড়ে।
আর তাই এটা রিপোর্ট করতে পারা আনন্দের বিষয় যে, এশিয়ার সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর একটি- বাংলাদেশ এই রোগ মোকাবিলায় ব্যাপক অগ্রগতি লাভ করেছে। ভালো তথ্য পাওয়া যায়, দেশের একটি বিশেষ অংশে ডায়রিয়া ও অন্যান্য আন্ত্রিক রোগের ফলে মৃত্যুর হার গত দুই দশকে ৯০ শতাংশ কমে এসেছে। শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বিস্তৃত টিকাদান প্রোগ্রামের পাশাপাশি সুস্থিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ভূমিকা রেখেছে। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশে ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুহার ছিল পুরো বিশ্বের গড় শিশু মৃত্যুহারের চেয়ে ৫৪ শতাংশ বেশি। আর এখন তা বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে ১৬ শতাংশ কম। ১৬ কোটির বেশি মানুষের এই দেশের জন্য এটা মানব দুর্ভোগ লাঘবের ক্ষেত্রে বিশাল সফলতা। আর বাংলাদেশের এই সফলতা থেকে একই ধরনের রোগের কবল থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে এমন অন্যান্য দরিদ্র দেশগুলো শিক্ষা নিতে পারে। এক্ষেত্রে প্রথম শিক্ষা হচ্ছে সস্তা, সহজ, অপূর্ণ সমাধানই প্রায় সময় যথেষ্ট।
অসীম নগদ অর্থ ও বৈশ্বিক সুষ্ঠু শাসন সমপন্ন কোনো আদর্শ দুনিয়ায় সবাই ট্যাপ থেকে বের হওয়া ক্লোরিনযুক্ত পানি পান করতো আর ড্রেনের ময়লা পানি পাইপের মধ্য দিয়ে কোনো পরিশোধন প্রকল্পে পাঠিয়ে দিত। বাস্তব জীবনে অবশ্য, আপনি আধা-ব্যবস্থায়ই অনেক দূর যেতে পারবেন। বাংলাদেশের গ্রামগুলো ছোট ছোট স্যানিটারি ল্যাট্রিন ও নলকূপ দিয়ে ভর্তি। এগুলোর বেশির ভাগই বাড়ির গৃহস্থদের নিজেদের হাতে তৈরি। অথবা তাদের নিজেদের অর্থে ভাড়া করা শ্রমিক দিয়ে তৈরি। যদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ল্যাট্রিন আর নলকূপের দূরত্ব আশঙ্কাজনকভাবে কম। তবে তাতে সমস্যা নেই। গবেষকরা বের করেছেন যে, মাটির নিচে জীবাণু বেশিদূর ভ্রমণ করতে পারে না। যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হচ্ছে, এই ল্যাট্রিনগুলো যতটা সুবিধাজনক, মানুষজন তত বেশি এগুলো ব্যবহার করবে।
দ্বিতীয় শিক্ষা হচ্ছে, শুধুমাত্র হার্ডওয়ার যথেষ্ট নয়। তার সঙ্গে সফটওয়ার বা মানুষের আচরণও সমান গুরুতপূর্ণ। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত ভর্তুকি দিয়ে বহু ল্যাট্রিন নির্মাণ করেছে। তবে সে চেষ্টা সত্ত্বেও (আর যদিও মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে বাংলাদেশের চেয়ে ভারত দ্বিগুণ ধনী রাষ্ট্র) অনেক ভারতীয়ই এখনো খোলা জায়গায়ই প্রাকৃতিক কাজকর্ম সেরে থাকেন। বাংলাদেশ সরকার ও দাতব্য সংস্থাগুলোও ল্যাট্রিন নির্মাণ করে দিয়েছে। কিন্তু তারা খোলা জায়গায় মলত্যাগ রোধ করার দিকে বেশি জোর দিয়েছেন। প্রায়ই তারা দরিদ্রদের জন্য ল্যাট্রিন নির্মাণ করে দিয়ে ধনীদেরকে দরিদ্রদের অনুসরণ করতে উসকে দেয়। একটি নতুন, অবাক করা আবিষ্কার হচ্ছে, সমাজে নিজের চেয়ে উঁচু শ্রেণির মানুষদের অনুসরণ করার যে প্রত্যাশা থাকে তার চেয়ে এই পদ্ধতি আরো বেশি কার্যকরী।
বাবা-মায়ের সাধারণ একটা কাজে অনেক জীবন বেঁচে গেছে। ’৬০ এর দশকের শুরুর দিকে আমেরিকান সামরিক চিকিৎসক ও গবেষকরা ঢাকায় তীব্র ডায়রিয়ার জন্য একটি থেরাপি আবিষ্কার করেন- একটি মিষ্টি, লবণাক্ত মৌখিক রি-হাইড্রেশন সমাধান (ওরস্যালাইন)। এটা এখন অত্যন্ত সস্তা ও সহজলভ্য। শেষ সমীক্ষা অনুসারে, ৮৪ শতাংশ বাংলাদেশি বাবা-মা তাদের সন্তানকে এটাই খাওয়ান। এর মধ্যে মাত্র এক তৃতীয়াংশ ডায়রিয়া হলে চিকিৎসকের কাছে যান। আফ্রিকার জনবহুল দেশগুলোতে এই সস্তা ওরস্যালাইন পেতেও হিমশিম খাচ্ছে। একটি আশাপ্রদ আইডিয়া হচ্ছে, কোকা-কোলার সঙ্গে এর একটি করে ব্যাগ বণ্টন করে দেয়া। কেননা কোকা-কোলা দুনিয়ার সবখানে যায়।
ন্যূনতম মান একেবারে সহজ বার্তাটি হচ্ছে মৌলিক স্বাস্থ্যবিধির গুরুত্ব সম্বন্ধে। মানুষের হাতে প্রায়ই ব্যাক্টোরিয়া থাকে। তা খাবারে কয়েকগুণ বেশি পরিমাণে ছড়িয়ে পড়ে। কোন গরিব দেশে, যেখানে কোনো মা খালি হাতে তার বাচ্চাকে খাইয়ে দেয়, তখন সে তার বাচ্চার ভেতর এত পরিমাণ জীবাণু ঢুকিয়ে দিতে পারে যতটা তার বাচ্চা কোনো ট্যাপ থেকে পানি খেলেও ঢুকতো না। বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে নিয়ন্ত্রিত প্রশিক্ষণ থেকে দেখা যায় যে, মায়েদের হাত ধোয়ার শিক্ষা ও খাবার ধুয়ে খাওয়ানোর শিক্ষা দিলে তা বেশির ভাগ জীবাণু মুছে ফেলে। এই প্রশিক্ষণ সস্তা। কিন্তু রোগ এড়াতে ও জীবন বাঁচাতে এর উপকার ব্যাপক।
(দ্য ইকোনমিস্টে প্রকাশিত প্রতিবেদনের অনুবাদ)
আর তাই এটা রিপোর্ট করতে পারা আনন্দের বিষয় যে, এশিয়ার সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর একটি- বাংলাদেশ এই রোগ মোকাবিলায় ব্যাপক অগ্রগতি লাভ করেছে। ভালো তথ্য পাওয়া যায়, দেশের একটি বিশেষ অংশে ডায়রিয়া ও অন্যান্য আন্ত্রিক রোগের ফলে মৃত্যুর হার গত দুই দশকে ৯০ শতাংশ কমে এসেছে। শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বিস্তৃত টিকাদান প্রোগ্রামের পাশাপাশি সুস্থিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ভূমিকা রেখেছে। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশে ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুহার ছিল পুরো বিশ্বের গড় শিশু মৃত্যুহারের চেয়ে ৫৪ শতাংশ বেশি। আর এখন তা বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে ১৬ শতাংশ কম। ১৬ কোটির বেশি মানুষের এই দেশের জন্য এটা মানব দুর্ভোগ লাঘবের ক্ষেত্রে বিশাল সফলতা। আর বাংলাদেশের এই সফলতা থেকে একই ধরনের রোগের কবল থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে এমন অন্যান্য দরিদ্র দেশগুলো শিক্ষা নিতে পারে। এক্ষেত্রে প্রথম শিক্ষা হচ্ছে সস্তা, সহজ, অপূর্ণ সমাধানই প্রায় সময় যথেষ্ট।
অসীম নগদ অর্থ ও বৈশ্বিক সুষ্ঠু শাসন সমপন্ন কোনো আদর্শ দুনিয়ায় সবাই ট্যাপ থেকে বের হওয়া ক্লোরিনযুক্ত পানি পান করতো আর ড্রেনের ময়লা পানি পাইপের মধ্য দিয়ে কোনো পরিশোধন প্রকল্পে পাঠিয়ে দিত। বাস্তব জীবনে অবশ্য, আপনি আধা-ব্যবস্থায়ই অনেক দূর যেতে পারবেন। বাংলাদেশের গ্রামগুলো ছোট ছোট স্যানিটারি ল্যাট্রিন ও নলকূপ দিয়ে ভর্তি। এগুলোর বেশির ভাগই বাড়ির গৃহস্থদের নিজেদের হাতে তৈরি। অথবা তাদের নিজেদের অর্থে ভাড়া করা শ্রমিক দিয়ে তৈরি। যদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ল্যাট্রিন আর নলকূপের দূরত্ব আশঙ্কাজনকভাবে কম। তবে তাতে সমস্যা নেই। গবেষকরা বের করেছেন যে, মাটির নিচে জীবাণু বেশিদূর ভ্রমণ করতে পারে না। যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হচ্ছে, এই ল্যাট্রিনগুলো যতটা সুবিধাজনক, মানুষজন তত বেশি এগুলো ব্যবহার করবে।
দ্বিতীয় শিক্ষা হচ্ছে, শুধুমাত্র হার্ডওয়ার যথেষ্ট নয়। তার সঙ্গে সফটওয়ার বা মানুষের আচরণও সমান গুরুতপূর্ণ। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত ভর্তুকি দিয়ে বহু ল্যাট্রিন নির্মাণ করেছে। তবে সে চেষ্টা সত্ত্বেও (আর যদিও মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে বাংলাদেশের চেয়ে ভারত দ্বিগুণ ধনী রাষ্ট্র) অনেক ভারতীয়ই এখনো খোলা জায়গায়ই প্রাকৃতিক কাজকর্ম সেরে থাকেন। বাংলাদেশ সরকার ও দাতব্য সংস্থাগুলোও ল্যাট্রিন নির্মাণ করে দিয়েছে। কিন্তু তারা খোলা জায়গায় মলত্যাগ রোধ করার দিকে বেশি জোর দিয়েছেন। প্রায়ই তারা দরিদ্রদের জন্য ল্যাট্রিন নির্মাণ করে দিয়ে ধনীদেরকে দরিদ্রদের অনুসরণ করতে উসকে দেয়। একটি নতুন, অবাক করা আবিষ্কার হচ্ছে, সমাজে নিজের চেয়ে উঁচু শ্রেণির মানুষদের অনুসরণ করার যে প্রত্যাশা থাকে তার চেয়ে এই পদ্ধতি আরো বেশি কার্যকরী।
বাবা-মায়ের সাধারণ একটা কাজে অনেক জীবন বেঁচে গেছে। ’৬০ এর দশকের শুরুর দিকে আমেরিকান সামরিক চিকিৎসক ও গবেষকরা ঢাকায় তীব্র ডায়রিয়ার জন্য একটি থেরাপি আবিষ্কার করেন- একটি মিষ্টি, লবণাক্ত মৌখিক রি-হাইড্রেশন সমাধান (ওরস্যালাইন)। এটা এখন অত্যন্ত সস্তা ও সহজলভ্য। শেষ সমীক্ষা অনুসারে, ৮৪ শতাংশ বাংলাদেশি বাবা-মা তাদের সন্তানকে এটাই খাওয়ান। এর মধ্যে মাত্র এক তৃতীয়াংশ ডায়রিয়া হলে চিকিৎসকের কাছে যান। আফ্রিকার জনবহুল দেশগুলোতে এই সস্তা ওরস্যালাইন পেতেও হিমশিম খাচ্ছে। একটি আশাপ্রদ আইডিয়া হচ্ছে, কোকা-কোলার সঙ্গে এর একটি করে ব্যাগ বণ্টন করে দেয়া। কেননা কোকা-কোলা দুনিয়ার সবখানে যায়।
ন্যূনতম মান একেবারে সহজ বার্তাটি হচ্ছে মৌলিক স্বাস্থ্যবিধির গুরুত্ব সম্বন্ধে। মানুষের হাতে প্রায়ই ব্যাক্টোরিয়া থাকে। তা খাবারে কয়েকগুণ বেশি পরিমাণে ছড়িয়ে পড়ে। কোন গরিব দেশে, যেখানে কোনো মা খালি হাতে তার বাচ্চাকে খাইয়ে দেয়, তখন সে তার বাচ্চার ভেতর এত পরিমাণ জীবাণু ঢুকিয়ে দিতে পারে যতটা তার বাচ্চা কোনো ট্যাপ থেকে পানি খেলেও ঢুকতো না। বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে নিয়ন্ত্রিত প্রশিক্ষণ থেকে দেখা যায় যে, মায়েদের হাত ধোয়ার শিক্ষা ও খাবার ধুয়ে খাওয়ানোর শিক্ষা দিলে তা বেশির ভাগ জীবাণু মুছে ফেলে। এই প্রশিক্ষণ সস্তা। কিন্তু রোগ এড়াতে ও জীবন বাঁচাতে এর উপকার ব্যাপক।
(দ্য ইকোনমিস্টে প্রকাশিত প্রতিবেদনের অনুবাদ)
No comments