নিপাহ ভাইরাস-জনিত সংক্রমণ
এটি
‘নিপাহ নামক ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের প্রদাহজনিত
এক প্রকার মারাত্মক সংক্রামক রোগ। জ্বর ও শ্বাসকষ্ট এই রোগের অন্যতম
বৈশিষ্ট্য।
কিভাবে ছড়ায় : এ রোগ মূলত কতিপয় ফলখেকো বাদুড়ের সংক্রামক রোগের কারণ হিসেবে স্বীকৃত। তবে আক্রান্ত বাদুড়ের আংশিক খাওয়া বিভিন্ন ফল তথা- কলা, বরই, গাব এমনকি খেজুরের রস খেলে মানুষ সহজেই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ ছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তির বিভিন্ন দেহরস তথা- লালা, শ্লেষ্ণা, রক্ত, এমনকি মলমূত্রের সংস্পর্শে ও অন্য সুস্থ ব্যক্তি এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
রোগের লক্ষণ : সাধারণত জ্বর মাথাব্যথা, অবসাদ, দুর্বলতা, বমি বমি ভাব, মাথা ঝিমঝিম করা এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ। তবে রোগের শেষ পর্যায়ে স্নায়ুতন্ত্রে প্রদাহজনিত কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি হতবুদ্ধি হওয়া দৃষ্টিভ্রমতা, খিঁচুনি ও সংজ্ঞা লোপ পাওয়াসহ প্রভৃতি নানা উপসর্গে আক্রান্ত হতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষে শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত কারণে শ্বাসকষ্ট ও কাশি দেখা দিতে পারে।
প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ : বাংলাদেশ সর্বপ্রথম নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ২০০১ সালে মেহেরপুর জেলায় শনাক্ত হয়। অতঃপর ২০০৩ সালে নওগাঁয়, ২০০৪ সালে রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, জয়পুরহাট ও নাওগাঁয় ২০০৫, ২০০৭ ও ২০০৮ সালে দেশের মধ্য ও উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। সর্বশেষ ২০১১ সালে এখন পর্যন্ত দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১০০ জন। যার মধ্যে মৃতের সংখ্যা ২৮ জন। দুইজনের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। আর এই রোগের প্রধান প্রবাহ বাদুড় যেহেতু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় খাদ্যের সন্ধানে উড়তে সক্ষম, সেহেতু এই রোগ সম্পর্কে সঠিক জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে না পারলে দেশব্যাপী এই রোগ মহামারী আকারে দেখা দেয়াও অম্ভব কিছু নয়। আমাদের দেশে সাধারণত প্রতিবারই জানুয়ারি-মে মাসের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়।
রোগ নির্ণয় : মানবদেহে এই রেগের উপসর্গগুলো শনাক্তকরণের পাশাপাশি আক্রান্ত রোগীর রক্তে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে সৃষ্ট অ্যান্টিবডি শনাক্তকরণের মাধ্যমে রোগের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। কেননা, এই রোগ ছাড়াও বিভিন্ন রোগ তথাÑ মেনিনজাইটিস, অন্যান্য ভাইরাস অ্যানকেফালাইটির ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড প্রভৃতিতে আক্রান্ত রোগী একই উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসতে পারে। বাংলাদেশে একমাত্র আইইডিসিআরে এই রোগ শনাক্তকরণের ব্যবস্থা রয়েছে।
চিকিৎসা : এই রোগের এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসাপদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি। এই রোগের চিকিৎসা মূলত উপসর্গভিত্তিক। যেমন জ্বর, খিঁচুনি, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা দেয়া হয়। আর সংজ্ঞাহীন রোগীর জন্য নিবিড় চিকিৎসাপদ্ধতিই সর্বোত্তম।
প্রতিরোধে করণীয় : যেহেতু এই রোগে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর হার স্থানভেদে শতকরা ২৫-৪০ ভাগ, সেহেতু প্রতিরোধের মাধ্যমে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ সাফল্য লাভ করা যেতে পারে। কাজেই, এই রোগের প্রতিরোধে নিম্নলিখিত পন্থাগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে-
১. বাদুড়কর্তৃক আংশিক ভক্ষণকৃত ফল খাওয়া উচিত নয়। এ ছাড়া বিভিন্ন ফল ভক্ষণের আগে তা ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে খেতে হবে। খেজুরের রস ভালোভাবে অন্তত ২০ মিনিট গরম করে পান করা যেতে পারে।
২. আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ তথা আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে বসা, শোয়া, জড়িয়ে ধরা ও আদর করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩. আক্রান্ত রোগীর যতœ নেয়ার সময় নাক-মুখ ঢেকে রাখতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের অবশ্যই রোগী দেখার সময় শরীরে বিভিন্ন প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জামাদি তথাÑ হাতের দাস্তানা অ্যাপ্রণ, চমশা, মাস্ক ও টুপি পরিধান করতে হবে। রোগী দেখার পর সাবান-পানি দিয়ে হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। ব্যবহার শেষে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার্য পোশাক বিছানা ও বালিশের কভার প্রভৃতি ব্লিচিং পাউডারের ১:১০০ মাত্রার দ্রবণ দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। তবে রোগীর ব্যবহার্য বিভিন্ন ধাতব ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্র তথা- থালা, বাটি, গ্লাস, বেডপেন প্রভৃতি ব্লিচিং পাউডারের ১:১০ মাত্রার দ্রবণ দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই মূলমূত্র ত্যাগের সময় স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহার করতে হবে। এতে করে রোগের বিস্তার অনেকাংশে রোধ করা যেতে পারে। কোনো এলাকায় স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ব্যবস্থা না থাকলে আক্রান্ত ব্যক্তির মলমুত্র, কফ, বমি প্রভৃতি মাটিতে গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে। রোগের প্রকোপযুক্ত এলাকায় কোনো ব্যক্তিতে সংশ্লিষ্ট রোগের উপসর্গ দেখা দিলে তাকে তৎক্ষণাৎ নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। সেই সাথে নিশ্চিত করা যেতে পারে প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয়পূর্বক এর যথাযথ চিকিৎসার। সেই সাথে সংশ্লিষ্ট রোগী সম্পর্কে স্থানীয় স্বাস্থ্যসংক্রান্ত কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে।
কিভাবে ছড়ায় : এ রোগ মূলত কতিপয় ফলখেকো বাদুড়ের সংক্রামক রোগের কারণ হিসেবে স্বীকৃত। তবে আক্রান্ত বাদুড়ের আংশিক খাওয়া বিভিন্ন ফল তথা- কলা, বরই, গাব এমনকি খেজুরের রস খেলে মানুষ সহজেই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ ছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তির বিভিন্ন দেহরস তথা- লালা, শ্লেষ্ণা, রক্ত, এমনকি মলমূত্রের সংস্পর্শে ও অন্য সুস্থ ব্যক্তি এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
রোগের লক্ষণ : সাধারণত জ্বর মাথাব্যথা, অবসাদ, দুর্বলতা, বমি বমি ভাব, মাথা ঝিমঝিম করা এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ। তবে রোগের শেষ পর্যায়ে স্নায়ুতন্ত্রে প্রদাহজনিত কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি হতবুদ্ধি হওয়া দৃষ্টিভ্রমতা, খিঁচুনি ও সংজ্ঞা লোপ পাওয়াসহ প্রভৃতি নানা উপসর্গে আক্রান্ত হতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষে শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত কারণে শ্বাসকষ্ট ও কাশি দেখা দিতে পারে।
প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ : বাংলাদেশ সর্বপ্রথম নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ২০০১ সালে মেহেরপুর জেলায় শনাক্ত হয়। অতঃপর ২০০৩ সালে নওগাঁয়, ২০০৪ সালে রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, জয়পুরহাট ও নাওগাঁয় ২০০৫, ২০০৭ ও ২০০৮ সালে দেশের মধ্য ও উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। সর্বশেষ ২০১১ সালে এখন পর্যন্ত দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১০০ জন। যার মধ্যে মৃতের সংখ্যা ২৮ জন। দুইজনের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। আর এই রোগের প্রধান প্রবাহ বাদুড় যেহেতু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় খাদ্যের সন্ধানে উড়তে সক্ষম, সেহেতু এই রোগ সম্পর্কে সঠিক জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে না পারলে দেশব্যাপী এই রোগ মহামারী আকারে দেখা দেয়াও অম্ভব কিছু নয়। আমাদের দেশে সাধারণত প্রতিবারই জানুয়ারি-মে মাসের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়।
রোগ নির্ণয় : মানবদেহে এই রেগের উপসর্গগুলো শনাক্তকরণের পাশাপাশি আক্রান্ত রোগীর রক্তে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে সৃষ্ট অ্যান্টিবডি শনাক্তকরণের মাধ্যমে রোগের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। কেননা, এই রোগ ছাড়াও বিভিন্ন রোগ তথাÑ মেনিনজাইটিস, অন্যান্য ভাইরাস অ্যানকেফালাইটির ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড প্রভৃতিতে আক্রান্ত রোগী একই উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসতে পারে। বাংলাদেশে একমাত্র আইইডিসিআরে এই রোগ শনাক্তকরণের ব্যবস্থা রয়েছে।
চিকিৎসা : এই রোগের এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসাপদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি। এই রোগের চিকিৎসা মূলত উপসর্গভিত্তিক। যেমন জ্বর, খিঁচুনি, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা দেয়া হয়। আর সংজ্ঞাহীন রোগীর জন্য নিবিড় চিকিৎসাপদ্ধতিই সর্বোত্তম।
প্রতিরোধে করণীয় : যেহেতু এই রোগে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর হার স্থানভেদে শতকরা ২৫-৪০ ভাগ, সেহেতু প্রতিরোধের মাধ্যমে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ সাফল্য লাভ করা যেতে পারে। কাজেই, এই রোগের প্রতিরোধে নিম্নলিখিত পন্থাগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে-
১. বাদুড়কর্তৃক আংশিক ভক্ষণকৃত ফল খাওয়া উচিত নয়। এ ছাড়া বিভিন্ন ফল ভক্ষণের আগে তা ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে খেতে হবে। খেজুরের রস ভালোভাবে অন্তত ২০ মিনিট গরম করে পান করা যেতে পারে।
২. আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ তথা আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে বসা, শোয়া, জড়িয়ে ধরা ও আদর করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩. আক্রান্ত রোগীর যতœ নেয়ার সময় নাক-মুখ ঢেকে রাখতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের অবশ্যই রোগী দেখার সময় শরীরে বিভিন্ন প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জামাদি তথাÑ হাতের দাস্তানা অ্যাপ্রণ, চমশা, মাস্ক ও টুপি পরিধান করতে হবে। রোগী দেখার পর সাবান-পানি দিয়ে হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। ব্যবহার শেষে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার্য পোশাক বিছানা ও বালিশের কভার প্রভৃতি ব্লিচিং পাউডারের ১:১০০ মাত্রার দ্রবণ দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। তবে রোগীর ব্যবহার্য বিভিন্ন ধাতব ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্র তথা- থালা, বাটি, গ্লাস, বেডপেন প্রভৃতি ব্লিচিং পাউডারের ১:১০ মাত্রার দ্রবণ দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই মূলমূত্র ত্যাগের সময় স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহার করতে হবে। এতে করে রোগের বিস্তার অনেকাংশে রোধ করা যেতে পারে। কোনো এলাকায় স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ব্যবস্থা না থাকলে আক্রান্ত ব্যক্তির মলমুত্র, কফ, বমি প্রভৃতি মাটিতে গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে। রোগের প্রকোপযুক্ত এলাকায় কোনো ব্যক্তিতে সংশ্লিষ্ট রোগের উপসর্গ দেখা দিলে তাকে তৎক্ষণাৎ নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। সেই সাথে নিশ্চিত করা যেতে পারে প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয়পূর্বক এর যথাযথ চিকিৎসার। সেই সাথে সংশ্লিষ্ট রোগী সম্পর্কে স্থানীয় স্বাস্থ্যসংক্রান্ত কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে।
No comments