সবুজ পাসপোর্টের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনুন
চাকরি,
ব্যবসা, ভ্রমণ, চিকিৎসা, শিক্ষা বা নানা কারণে এক দেশ থেকে অন্যদেশে যেতে
হলে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় হচ্ছে পাসপোর্ট। আজ দেশের বাইরে বিমানবন্দরে
বাংলাদেশীদের অস্বস্তির অন্যতম প্রধান কারণ এই সবুজ পাসপোর্ট। বাংলাদেশের
পাসপোর্ট, বাংলাদেশের ঠিকানা বিশ্বের অনেক দেশে কেমন অস্বস্তি, অমর্যাদা ও
কষ্টের- তা ভুক্তভোগী মাত্রই অবগত। এক সময় যে দেশগুলো পোর্ট এন্ট্রি ভিসা
দিত- সেই দেশগুলো এখন বাংলাদেশের সবুজ পাসপোর্ট দেখলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে,
বাঁকা চোখে তাকায়। বাংলাদেশির মর্যাদাহানি বিদেশে দিন দিন প্রকট হচ্ছে,
একই ফ্লাইটের অন্য দেশের যাত্রীরা ১০ মিনিটে এয়ারপোর্ট ছাড়তে পারলেও
বাংলাদেশীদের লাগছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। পাসপোর্ট ও অন্যান্য কাগজপত্র ঘণ্টার
পর ঘণ্টা কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই কাউন্টারে রেখে দেয়া হচ্ছে। কয়েক ঘণ্টা
দাঁড় করিয়ে রেখে বেশির ভাগ বাংলাদেশির আলাদা ইন্টারভিউ নিচ্ছে সেখানকার
কর্তৃপক্ষ। এই ইন্টারভিউগুলো কোনো অপরাধীকে জিজ্ঞাসাবাদের আদল পাচ্ছে।
বিশ্বের অনেক এয়ারপোর্টে বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেখানো মাত্র দুর্ব্যবহার শুরু
হয়। পড়তে হয় পাসপোর্ট জটিলতা ও বিড়ম্বনায়। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের
ভ্রূকুটি, তদন্ত ও প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। ভিনদেশের ইমিগ্রেশনের লাইনে
বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের অধিক সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, যা খুবই
বিরক্তিকর। অন্য সব দেশের নাগরিকরা এক লাইনে থেকে ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা
শেষ করতে পারলেও বাংলাদেশিদের নিয়ে যাওয়া হয় আলাদা লাইনে। এদেশের
নাগরিকদের জন্য এখন ভিসা না পাওয়া নিত্যদিনের ঘটনা। প্রতিদিন হাজার হাজার
বাংলাদেশির ভিসা আবেদন নাকচ হচ্ছে। এমনকি ভারত, নেপালও এ কাজ করছে। এটি
একটি নির্মম পরিহাস। যত দিন যাচ্ছে, অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। অথচ একজন
বাংলাদেশির কাছে পাসপোর্টের মূল্য অনেক। কারণ এটি অনেক কষ্টে অর্জিত এক
সম্পদ। সম্প্রতি হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের করা এক সূচকে ১৯৯টি দেশ জায়গা
পেয়েছে। হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের এ বছরের তথ্য অনুসারে, ওই ১৯৯ দেশের
মধ্যে মাত্র ১০টি দেশ আছে, যাদের পাসপোর্ট অন অ্যারাইভাল ভিসা পাওয়ার
ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পাসপোর্টের তুলনায় কম শক্তিশালী। আর ১৮৫টি দেশের
পাসপোর্ট এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চাইতে বেশি শক্তিশালী। হেনলি অ্যান্ড
পার্টনার্সের তথ্য বলছে, ২০০৮ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত এই সূচকে
বাংলাদেশের পাসপোর্টের মান নেমেছে ২৩ ধাপ। এ বছর ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকারের
ভিত্তিতে যে র্যাংকিং করা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের পাসপোর্ট ৯৬তম অবস্থানে
আছে। অথচ আগের বছর ছিল ৯৫তম অবস্থানে। তালিকা অনুসারে প্রায় একঘরে হয়ে থাকা
উত্তর কোরিয়া কিংবা যুদ্ধবিধ্বস্ত দক্ষিণ সুদানের পাসপোর্টও বাংলাদেশের
পাসপোর্টের চাইতে বেশি শক্তিশালী। এদিকে গত বছরের অক্টোবর মাসে প্রকাশিত
আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অ্যার্টন ক্যাপিটালের প্রকাশিত ‘পাসপোর্ট
ইনডেক্স’ প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশ ও ইয়েমেন যৌথভাবে ৯০তম অবস্থানে ছিল।
১৯৯টি দেশ নিয়ে তৈরি এ সূচকে বিশ্বের পঞ্চম দুর্বলতম পাসপোর্ট বাংলাদেশের।
উল্লেখ্য, একটি দেশের পাসপোর্ট দিয়ে ভিসা ছাড়াই কয়টি দেশে যাওয়া বা ঢোকা
যায়, তার ওপর দেশটির পাসপোর্ট র্যাংকিংয়ের মান নির্ভর করে। আশির দশকের
মধ্যভাগ পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকরা সবুজ রঙের- যার ওপর লেখা
‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার’ পাসপোর্ট দিয়ে ইউরোপ-আমেরিকাসহ পৃথিবীর
বেশির ভাগ দেশে পোর্ট এন্ট্রি ভিসা নিয়ে যাতায়াত করতে পারত। এক সময়
বাংলাদেশি সবুজ পাসপোর্টের মর্যাদা আজকের চেয়ে ভিন্ন ছিল। কতটা ভিন্ন ছিল,
সেটা ওপরের লেখা থেকেই বোঝা যায়। আর এখন কতটা খারাপ হয়েছে, সেটাও। পাসপোর্ট
অত্যন্ত জরুরি ও মূল্যবান একটি জিনিস। সব দেশের সব নাগরিকের কাছে যার যার
পাসপোর্ট তার আন্তর্জাতিক পরিচয়ের সনদ। আমরা বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যাশা
করি, দেশে ও বিদেশে আমরা যেন নিরাপদ থাকি। সম্মানজনক জীবনের অধিকারী হতে
পারি। কোথাও যেন আমরা অমানবিক আচরণ ও নির্যাতনের শিকার না হই। কোথাও যেন
অবহেলার সম্মুখীন না হই। এটা আমাদের মানবিক অধিকার, এটা ন্যায়সঙ্গত অধিকার।
এই অধিকার দেশে ও বিদেশে নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ
করে পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটিয়ে সরকারকে কৃতিত্ব দেখাতে হবে। কৃতিত্ব কেবল
পোস্টার, ব্যানার আর বক্তব্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না।
ব্যবসায়ী, কোরপাই, বুড়িচং, কুমিল্লা
moonzeerahcklham@gmail.com
ব্যবসায়ী, কোরপাই, বুড়িচং, কুমিল্লা
moonzeerahcklham@gmail.com
No comments