অবশেষে সূচকের বড় উত্থান
পতন
ঠেকাতে সূচক টেনে তোলার চেষ্টা অবশেষে গতকাল মঙ্গলবার সফল হয়েছে। ফলে এদিন
প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স
৭৯ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক
এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচকটি ২৪৩ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ
বেড়েছে। এদিন দুই বাজারে সূচক বাড়লেও লেনদেন কমেছে। বাজারসংশ্লিষ্ট
ব্যক্তিরা বলছেন, বড় ধরনের পতনের পর বাজার যখন ঘুরে দাঁড়ায় তখন বিক্রেতা কম
থাকে। এ কারণে লেনদেন কম হয়। বাজারের একাধিক ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট
ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকালের
বাজার টেনে তোলার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ
প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। পাশাপাশি কিছু
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও এদিন বাজারে সক্রিয় ছিল। এ কারণে গতকাল লেনদেনের
শুরুটা হয়েছে সূচকের ঊর্ধ্বগতি দিয়ে। এর আগে গত রোববার সপ্তাহের শুরুতে
শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতন ঘটে। ওই দিন দুই বাজারের সূচকই প্রায় সোয়া ২
শতাংশ কমেছে। সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে এ দরপতন ছিল সর্বোচ্চ। ফলে সাধারণ
বিনিয়োগকারীরা এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। আতঙ্ক দূর করতে সোমবার দিনভর সূচক
টেনে তোলার চেষ্টা ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি সফল হয়নি।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গতকাল সূচকের উত্থানে বড় ভূমিকা ছিল ব্যাংক
খাতের। আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টসের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে গতকাল লেনদেন
হওয়া ব্যাংক খাতের প্রতিটি শেয়ারের দাম গড়ে প্রায় পৌনে ৩ শতাংশ করে বেড়েছে।
এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩০ ব্যাংকের মধ্যে ২৮টিরই দাম বেড়েছে। কমেছে
মাত্র ২টির। জানতে চাইলে সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান অ্যালায়েন্স
ক্যাপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের
বাজারের সূচক এখনো যথাযথ প্রতিনিধিত্বমূলক না। তাই সূচকের উত্থান-পতন দেখে
বাজার সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গেলে তা অনেক ক্ষেত্রেই ভুল বার্তা দিতে
পারে। যেহেতু আমাদের বাজারের বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী সূচক দেখে প্রভাবিত হয়,
তাই বিদ্যমান সূচককে যথাযথ প্রতিনিধিত্বমূলক করা দরকার।
এ জন্য সূচকের
সংস্কার জরুরি। এখনো দেখা যায়, বাজারে সূচক কয়েক শ পয়েন্ট বাড়লে তার পেছনে
বড় ভূমিকা থাকে হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানির। অথচ বাজারে ৩ শতাধিক কোম্পানি
তালিকাভুক্ত। তাই সূচক দেখে প্রভাবিত না হয়ে বিনিয়োগকারীদের উচিত শেয়ারের
দাম দেখে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া। সেটি হলে সূচকের পতনে খুব বেশি
আতঙ্কিত হওয়ার কিছু থাকে না।’ শেয়ারবাজারের শীর্ষ পর্যায়ের ব্রোকারেজ হাউস
লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গতকালের বাজারে লেনদেনে
আধিপত্য ছিল ব্যাংক এবং ওষুধ ও রসায়ন খাতের। ঢাকার বাজারের গতকালের মোট
লেনদেনের ৩৭ শতাংশই ছিল এ দুই খাতের। এর মধ্যে ১৯ শতাংশই ছিল ব্যাংক খাতের।
আর ১৮ শতাংশ ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাতের। ঢাকার বাজারে গতকাল মূল্যবৃদ্ধির
শীর্ষে ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি ফার্মাএইড। এদিন কোম্পানিটির
প্রতিটি শেয়ারের দাম ৩৮ টাকা বা পৌনে ৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭৫ টাকায়।
কোম্পানিটি গতকাল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে লভ্যাংশ বিতরণ করেছে। ২০১৭ সালের
জুনে সমাপ্ত আর্থিক বছরের জন্য কোম্পানি ৩৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা
করেছিল, যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সেটি শেয়ারধারীদের মধ্যে বিতরণ করা
হয়েছে। ডিএসইতে গতকাল দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩২৩ কোটি টাকা, যা আগের
দিনের চেয়ে ১১৭ কোটি টাকা কম। চট্টগ্রামের বাজারে এদিন লেনদেনের পরিমাণ
ছিল প্রায় ১৮ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ২ কোটি টাকা কম।
No comments