প্রশ্ন ফাঁসের দায়ভার সাধারণ পরীক্ষার্থীরা বইবে কেন?
এ
বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ পাওয়া গেলেই
পরীক্ষা বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও
উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন। ২৫ জানুয়ারি সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত
জাতীয় মনিটরিং কমিটির সভার শুরুতেই এ কথা জানান তিনি। প্রয়োজনে একই পরীক্ষা
১০ বার নিয়ে ফল প্রকাশের কথাও বলা হয়। কিন্তু প্রশ্ন ফাঁসের পর পরীক্ষা
বাতিলের সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক? অর্থের মোহে একদল মানুষ প্রশ্নপত্র ফাঁস
করছে, এর বিপরীতে যদি লাখো শিক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ না
করে বরং প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। প্রশ্নপত্র
ফাঁস হলে আমরা কি শিক্ষার্থীদের দোষারোপ করতে পারি? তবে কেন পরীক্ষা বাতিল
করে তাদের শাস্তি দেয়া হচ্ছে? শাস্তি যদি দিতে হয়, তবে দোষীদের দিতে হবে।
দোষীদের শাস্তির আওতায় না এনে পরীক্ষা বাতিল করা হলে তা রীতিমতো অন্যায় করা
হবে। প্রশ্ন ফাঁস রোধের ব্যর্থতা কার? ব্যর্থতা যারই হোক দায়ভার কিন্তু
সংশ্লিষ্ট সবার।সুতরাং সংশ্লিষ্টরা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে এর দায়
কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর চাপানো ঠিক হবে না। যারা কষ্ট ও অর্থ খরচ করে
সারা বছর পড়াশোনা করে পরীক্ষা দিল, পরীক্ষা বাতিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে তাদের
সবকিছু অর্থহীন করে দেয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। বর্তমানে প্রায় সব পরীক্ষার
প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। কয়টা পরীক্ষা বাতিল করা সম্ভব?
তাই এর একমাত্র
সমাধান হল, যে কোনো মূল্যে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করতে হবে। আইনের সঠিক
প্রয়োগ এবং অপরাধীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান করা হলে
প্রশ্ন ফাঁস অবশ্যই রোধ হবে। আমরা ইতিমধ্যে প্রশ্ন ফাঁসকারী অনেককেই ধরা
পড়তে শুনেছি বা দেখেছি। পত্রিকা বা টেলিভিশনে তাদের চেহারা স্পষ্ট দেখানো
হয় না। পরবর্তী সময়ে তাদের কী শাস্তি হল, সে খবরও গণমাধ্যমে আসছে না।
প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রকাশ বা বিতরণের সঙ্গে জড়িত থাকার শাস্তি ন্যূনতম ৩ বছর
থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। পাবলিক
পরীক্ষা (অপরাধ) আইন, ১৯৮০ এবং সংশোধনী ১৯৯২-এর ৪ নম্বর ধারায় এ শাস্তির
বিধান রয়েছে। কিন্তু আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, এমনকি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন
অনেক কর্মকর্তাই শাস্তির এ বিধান সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন না। প্রশ্ন
ফাঁসের পর তদন্ত কমিটি হয়। অনেক ক্ষেত্রেই অভিযোগ প্রমাণিত হয়, কিন্তু
অপরাধীদের শাস্তি হয় না। ফলে অপরাধীরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এদের
সমূলে বিনাশ করতে হবে। পরীক্ষার্থী, অভিভাবকরা বলছেন- পরীক্ষার যে
প্রশ্নপত্রটি তারা অনলাইনে পেয়েছেন, তার সঙ্গে পরীক্ষা নেয়া প্রশ্নের হুবহু
মিল থাকে। এর ফলে অনেক শিক্ষার্থী পরিশ্রম করে পড়ালেখা করতে চায় না। তাদের
ভাবনায় থাকে- প্রশ্ন তো আগের রাতে পেয়েই যাব। আবার অনেকেই প্রশ্নগুলো আগের
রাতে পেয়েও দেখে না, তারা পরে আফসোস করতে থাকে! কড়া নিরাপত্তার মধ্যে
জাতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হুবহু ফাঁস হয় কী করে? প্রশ্নপত্র ফাঁস
হচ্ছে- এটা সবাই দেখছেন, জানছেন অথচ কর্তৃপক্ষ কেন দেখছেন না? প্রশ্নপত্র
ফাঁসের ঘটনা স্পষ্ট হলেও সংশ্লিষ্টরা এর দায় কেন নিচ্ছেন না? কেন তারা পাশ
কাটিয়ে যাচ্ছেন? এ অবস্থা চলতে থাকলে ‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড’ কথাটি ভুল
প্রমাণিত হবে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। শিক্ষার মান বলে কিছু
থাকবে না। প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে জাতি, অন্ধকারে পতিত হবে দেশ।
প্রভাষক, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ, ঢাকা
প্রভাষক, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ, ঢাকা
No comments