গ্রাহকের কোটি টাকা নিয়ে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক লাপাত্তা
বগুড়ায়
শিবগঞ্জ উপজেলার রূপালী ব্যাংক মহাস্থানগড় শাখায় গ্রাহকের কোটি টাকা
হাতিয়ে নিয়ে শাখা ব্যবস্থাপক জোবায়েনুর রহমান স্মরণ নিখোঁজ হয়েছেন বলে
অভিযোগ উঠেছে। গত তিন দিন ধরে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন এমন খবর জানাজানির পর
মঙ্গলবার থেকে শত শত গ্রাহক ওই শাখায় এসে ভিড় জমাচ্ছেন তাদের হিসাব বিবরণ
জানতে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি সকালে তিনি চা পান করার কথা বলে শাখা থেকে বের
হওয়ার পর লাপাত্তা হন। ওই দিন মধ্যরাতে প্রিন্সিপাল অফিসার আবদুল মজিদ সদর
থানায় জিডি করলেও মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত তার সন্ধান পাওয়া যাযনি। এদিকে এই
শাখা ব্যবস্থাপক নিখোঁজ হওয়ার পর ওই শাখার কয়েক কোটি টাকার গরমিলের
অভিযোগ উঠেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আত্মগোপন
করেছেন। এ ঘটনায় ব্যাংকের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয় থেকে ৪ সদস্যের তদন্ত
টিম গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন- ব্যাংকটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা
এমএমজি তোফায়েল, সুলতান মাহমুদ, শাহীন মাহমুদ ও চিরঞ্জিত চক্রবর্তী।
ব্যাংকের ডিজিএম সরদার হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, তদন্ত টিম কাজ
করছে। এখন এ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করা যাবে না। বগুড়া সদর সার্কেলের
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সনাতন চক্রবর্তী জানান, কেউ স্বেচ্ছায়
আত্মগোপন করলে তাকে খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০০০ সালের
দিকে রূপালী ব্যাংক মহাস্থানগড়ে শাখা স্থাপন করা হয়। ওই শাখার ব্যবস্থাপক
হন বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার আগুনিয়াতাইর গ্রামের মন্তেজার রহমানের ছেলে
জোবায়েনুর রহমান স্মরণ। তিনি পরিবার নিয়ে বগুড়া শহরের নামাজগড় এলাকায় ভাড়া
বাসায় থাকেন। স্মরণ গত রোববার সকালে ব্যাংকে আসেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে
তিনি পাশের দোকানে চা খাওয়ার কথা বলে বের হন। এরপর আর ব্যাংকে ফিরে আসেননি।
তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
পরে দিবাগত রাত ১টার দিকে সদর থানায়
সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এদিকে শাখা ব্যবস্থাপক নিরুদ্দেশ হওয়ার খবর প্রচার
হলে আমানতকারীদের মাঝে আতংক দেখা দেয়। তারা ব্যাংকে এসে ভিড় করছেন। অনেক
গ্রাহকরা তাদের সঞ্চয়ের খোঁজ নিলে গরমিল দেখতে পান। রূপালী ব্যাংক
মহাস্থানগড় শাখার নতুন ব্যবস্থাপক আল-আমিন জানান, তিনি মঙ্গলবার সকালে এ
শাখায় যোগদান করেছেন। তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত
কোনো অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে মন্তব্য করা সম্ভব নয়।
মহাস্থানগড় এলাকার মুক্তি ফল ও বীজ ভাণ্ডারের মালিক রহেদুল ইসলাম জানান,
তার সঞ্চয়ের সাড়ে ১৫ লাখ টাকার সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। মহাস্থানগড়
মাজার কমিটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাহেদুর রহমান, নাসির কটকটির মালিক নাসির
উদ্দিন, ঠিকাদার জাহিদুর রহমান, আলহাজ আমজল হোসেনসহ অনেক গ্রাহক জানান,
তারা তাদের সঞ্চয়ের টাকা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাদের ধারণা, ব্যবস্থাপক স্মরণ
অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছেন। রূপালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার
আব্দুল মজিদ মণ্ডল জানান, ব্যবস্থাপক নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় সদর থানায় জিডি
করা হয়েছে। কোনো গ্রাহকের টাকা গরমিল আছে কিনা, তা তদন্ত কমিটি খতিয়ে
দেখছে। তদন্ত কাজ শেষ হলেই সবকিছু পরিষ্কার করে জানা যাবে।
No comments