পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ
দুর্নীতির
মামলায় আদালতে হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের পেছনে থাকা
বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। দফায় দফায়
ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলে পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে। বিক্ষুব্ধ
কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ
করতে লাঠিচার্জের পাশাপাশি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে আহত হয়েছেন বিএনপির
প্রায় ৩০ নেতাকর্মীসহ একাধিক পুলিশ সদস্য। সংঘর্ষ চলার সময় বিক্ষুব্ধ
নেতাকর্মীরা বেশকিছু যানবাহন ভাংচুর করে। এ সময় এক ট্রাফিক সার্জেন্টের
মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। মঙ্গলবার রাজধানীর হাইকোর্ট সংলগ্ন কদম
ফোয়ারা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এনপির নেতারা বলেছেন, পুলিশ বিনা উসকানিতে তাদের
নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। সংঘর্ষের সময় ঘটনাস্থল থেকে বিএনপির
ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হকসহ প্রায়
৫০ জনকে পুলিশ আটক করেছে বলে বিএনপির নেতারা দাবি করেন। তবে পুলিশ ওই ঘটনায়
১৫ জনকে আটকের কথা স্বীকার করেছে। শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান যুগান্তরকে
বলেন, অগ্নিসংযোগ এবং গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে চার শতাধিক
নেতাকর্মীকে আসামি করে শাহবাগ থানায় মামলা করেছে। জানা গেছে, জিয়া
চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আত্মসমর্পণের জন্য মঙ্গলবার সকালে বিএনপির
চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পুরান ঢাকার বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে
স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে যান। এর আগে আদালত চত্বরে বিপুলসংখ্যক দলীয়
নেতাকর্মী হাজির হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুপুর আড়াইটার দিকে
বিএনপির চেয়ারপারসন আদালত চত্বর থেকে গাড়িবহর নিয়ে বের হন। এ সময়
নেতাকর্মীরাও বিএনপির চেয়ারপারসনের গাড়িবহরের পিছু নেন। তাদের একটি দল জিরো
পয়েন্ট ধরে আবদুল গণি সড়কে আসার সময় পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এর পরপরই কিছু
নেতাকর্মী হঠাৎ করে গাড়ি ভাংচুর শুরু করেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক
আনোয়ার হোসেন যুগান্তরকে জানান, সচিবালয়ের সামনে দিয়ে শিক্ষা ভবনের দিকের
রাস্তায় আসার পথে হঠাৎ করেই পুলিশ বিএনপির কর্মীদের ধাওয়া করে। ধাওয়ার মুখে
দৌড়ে পালানোর সময় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা রাস্তায় চলাচলরত ও পার্ক করে রাখা
সরকারি-বেসরকারি গাড়ির কাচ ভাংচুর করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, বিএনপির
নেতাকর্মীরা এ সময় অর্ধশতাধিক গাড়ির সামনে ও পেছনের গ্লাস ভাংচুর করেছেন।
সংঘর্ষের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী শরীফ
জানান, বেলা ৩টার দিকে শিক্ষা ভবন এলাকায় ৫ শতাধিক লোক মিছিল নিয়ে যাওয়ার
সময় পুলিশ এগিয়ে এলে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। পুলিশ ধাওয়া দিলে
অপর পক্ষ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। এ সময় তারা পুলিশের প্রতি ইটপাটকেল
নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশের দৃঢ় অবস্থানের কারণে পিছু হটে বিক্ষুব্ধ
কর্মীরা। এ সময়ই পুলিশ প্রথমে লাঠিচার্জ করে। এরপর টিয়ারশেল ছুড়তে থাকে।
বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, আত্মপক্ষ
সমর্থনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বকশীবাজারে নিন্ম আদালতে হাজিরা
দিতে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে হাইকোর্ট-সংলগ্ন কদম ফোয়ারার কাছ থেকে
আমিনুল হকসহ ১৫-২০ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। আটকের পর তাদের প্রিজন
ভ্যানে করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশের দাবি, আদালতে হাজিরা দিয়ে খালেদা
জিয়া ফেরার সময় গাড়ি ভাংচুর করেছেন বিএনপির কর্মীরা। এ সময় সেখান থেকে বেশ
কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে বিএনপি কর্মী রফিকুল ইসলাম, আমিনুল
ইসলাম, নূরুন্নবী, জুয়েল ও দুলালের নাম জানা গেছে। এ ব্যাপারে পুলিশের রমনা
বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, খালেদা জিয়ার ফেরার সময়
বিএনপির নেতাকর্মীরা গাড়ি ভাংচুর করেছেন। এর মধ্যে পুলিশের গাড়িও রয়েছে।
ঘটনাস্থল থেকে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)
ঢাকা মহানগর (উত্তর) ও জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে
জানিয়েছে, পুলিশের লাঠিচার্জে তাদের ৩০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এরা হলেন :
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান, সিনিয়র
সহসভাপতি মুন্সি বজলুল বাছিত আঞ্জু, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক
দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল,
যুগ্ম সম্পাদক সাদরেজ জামান, ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি
ফখরুল ইসলাম রবিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক
নজরুল ইসলাম, সিনিয়র সহসভাপতি রফিক হাওলাদার, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের
সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনু মোহাম্মদ শামীম আজাদ, কামরুজ্জামান বিপ্লব,
এসএম সোহেল আহম্মেদ কাঞ্চন, মাসুম বিল্লাহ খান, ডালিম সিকদার, মাহফুজসহ
আরও অনেকে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, বিএনপির চেয়ারপারসন আদালত থেকে ফেরার সময়
বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছিল। পুলিশ সম্পূর্ণ বিনা
উসকানিতে অতর্কিত তাদের লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাস ছোড়ে, লাঠিচার্জ করে এবং
ধরপাকড়-গ্রেফতার করে। এর মধ্য দিয়ে সরকারের ‘স্বৈরাচারী মনোভাব’ আবারও
প্রকাশ পেল বলে মন্তব্য করেন তিনি। রাতে চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এক
জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
No comments