মৎস্য ও পোল্ট্রি খাদ্যের দাম ৫০ শতাংশ কমানো সম্ভব
মাছসহ
মানুষ ও অন্যান্য জীবের জন্য খাদ্য হিসাবে স্পিরুলিনা বাণিজ্যিকভাবে চাষ
করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের
(বাকৃবি) মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের একোয়াকালচার বিভাগ। এ উপলক্ষে
থাইল্যান্ডের ইনারগাইয়্যা কোম্পানীর সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই বিভাগের একটি
সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ফলে ওই কোম্পানীর কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায়
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বাণিজ্যিকভাবে স্পিরুলিনা চাষের দ্বার উন্মোচিত
হতে যাচ্ছে। গবেষকরা আশা করেন স্পিরুলিনা থেকে প্রাপ্ত প্রোটিন মাছ ও
পোল্ট্রি খাদ্যের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ কমানো সম্ভব। মানুষের খাদ্য হিসেবেও
এর ব্যবহার রয়েছে। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের
একোয়াকালচার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর
অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড.
এম মাহফুজুল হক এবং থাইল্যান্ডের ইনারগাইয়্যা কোম্পানীর পক্ষে ব্যবস্থাপনা
পরিচালক মি. সাউমিল শাহ চুক্তি পত্রে স্বাক্ষর করেন। এসময় সেখানে উপস্থিত
ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম,
অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. গিয়াস উদ্দিন আহমদ, একোয়াকালচার বিভাগের প্রফেসর ড.
মো. আহসান বিন হাবিব, প্রফেসর ড. এস এম রহমত উল্লাহ, প্রফেসর ড. মো. রুহুল
আমীন, প্রফেসর ড. মো. আলী রেজা ফারুক, মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, সহকারী
প্রফেসর জান্নাতুল ফেরদৌস, সহকারী প্রফেসর কে এম শাকিল রানা। অন্যান্যদের
মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভেটেরিনারি অনুষদের প্যারাসাইটোলজি বিভাগের প্রফেসর ড.
মো. সহিদুজ্জামান, নয়া দিগন্তের বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা কৃষিবিদ মো:
আরিফুল ইসলাম প্রমুখ। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে গবেষকরা জানান, আমাদের
দেশের মাছ ও পোল্ট্রির খাদ্য বিভিন্ন উপাদান আমদানিনির্ভর হওয়ায় খাদ্যের
দাম অনেক বেশি হয়। ফলে লাভবান হতে পারছেন না চাষীরা। এদিকে খাদ্য উপাদান
আমদানী করতে দেশ থেকে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা বিদেশ চলে যাচ্ছে।
স্পিরুলিনা থেকে প্রাপ্ত প্রোটিন মাছ ও পোল্টির খাদ্যে প্রায় ৬০ থেকে ৭০
শতাংশ ব্যবহার করা সম্ভব। ফলে এসব খাদ্যের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনা
সম্ভব হবে। এতে লাভবান হবেন দেশের দরিদ্র খামারীরা এবং কমে আসবে দেশের
আমদানি ব্যয়।
স্পিরুলিনা গবেষক ও সমঝোতা চুক্তির প্রধান উদ্যোক্তা
একোয়াকালচার বিভাগের প্রফেসর ড. মো. আহসান বিন হাবিব জানান, স্পিরুলিনা
অত্যন্ত উন্নতমানের খাদ্য হিসাবে হ্রদের চারপাশের মানুষের কাছে বিশেষভাবে
সমাদিত। কারণ এতে প্রায় ৫৫-৬০% প্রোটিন থাকে যা প্রায় মাছের প্রোটিনের
সমান। এই প্রোটিন সমৃদ্ধ এককোষী নীলাভ-সবুজ উদ্ভিদতে লিপিডাস ৬-১০%, খনিজ
লবণ ১২-১৬% ও শর্করা জাতীয় উপাদান রয়েছে। এছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণে
অত্যাবশ্যকীয় উপাদান যেমন লিগমেন্টাস, ফাইকোসায়ানিন, ভিটামিন, মিনারেলস ও
হরোমোন তৈরী করে থাকে। তিনি আরও জানান, প্রোটিন ও লিপিডাসের সমন্বয়ে গঠিত
ফাইকোসায়ানিন যা অত্যন্ত আকর্ষণীয় রং তৈরী করে। ফলে এ রং প্রসাধনী সামগ্রী,
ঔষধ, পানীয় খাবার ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়। যার দাম প্রতি কেজি প্রায় ৮
লাখ টাকা। মাছের প্রোটিনের প্রায় সমান প্রোটিন থাকার কারণে স্পিরুলিনা
মানুষ ও অন্যান্য পশু-পাখি যেমন মুরগি, গরু, ছাগলের খাদ্যেও প্রোটিনের
প্রধান উৎস মাংস ও হাড়ের গুড়ার বিকল্প হিসেবে ৭৫ শতাংশ স্পিরুলিনা ব্যবহার
করা সম্ভব। গবেষণায় দেখা গেছে, মাছের খাদ্যে ৬০-৭০ শতাংশ স্পিরুলিনা
ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। ফলে ব্যাপক চাষ করে দেশের মৎস্য ও
প্রাণীখাদ্যের দাম কমিয়ে খামারীদের লাভবান করা সম্ভব।
No comments