প্রকাশ্যে নয় তোড়জোড় এবার পর্দার আড়ালে
এবার বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের প্রকাশ্যে তেমন হাঁকডাক নেই। তবে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পর্দার আড়ালে তোড়জোড় চলছে। উন্নয়ন সহযোগীসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা নির্বাচনে সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জানিয়েছে, তারা নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে। জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচনে সহায়তার ধরন নির্ধারণ করতে বাংলাদেশ সফর করে গেছে। আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা দেখা দেয়ায় পশ্চিমা বিশ্ব এ নিয়ে উৎসাহী হয়ে উঠেছে। এদিকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনে সমর্থন দিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে থাকা প্রতিবেশী ভারত এবার কোন পথে, সে ব্যাপারে রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল আছে। ইইউ রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদোন রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ করেছেন। সাক্ষাতের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক অবস্থার প্রশংসা করে বিদায়ী ইইউ রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে ইইউ নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রস্তাবকে স্বাগত জানান এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে তাদের উদ্যোগে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের প্রশংসা করেন। বাংলাদেশে নির্বাচনে ইইউ সবচেয়ে বেশি পর্যবেক্ষক পাঠিয়ে থাকে। তবে অর্থবহ নির্বাচন না হওয়ার আশঙ্কা থাকলে তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে না। ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি বাংলাদেশে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। ইইউ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠিয়েছিল।
কিন্তু নির্বাচনের আগে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে ভোটের আগেই তারা পর্যবেক্ষক দল প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর নির্বাচন স্থগিত হয় এবং ওয়ান-ইলেভেনের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দল অংশ নেয়ায় পর্যবেক্ষক পাঠিয়েছিল ইইউ। তবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা পর্যবেক্ষক পাঠায়নি। জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির সোমবার যুগান্তরকে বলেন, ‘আমাদের নির্বাচন নিয়ে বিদেশি বন্ধুদের সব সময়ই আগ্রহ থাকে। এবারও তারা সুষ্ঠু নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং সবার অংশগ্রহণ চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। আমাদের বিদেশি বন্ধুরা ততটুকুই সহায়তা করবে, আমরা যতটা চাইব। এক্ষেত্রে নির্বাচনী উপকরণ, পর্যবেক্ষক কিংবা সক্ষমতা দিয়ে বিদেশিরা সহায়তা করতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনকে নিজেদেরই শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে হবে।’ এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ‘সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা’ হিসেবে উল্লেখ করে সমর্থন করেছিল প্রতিবেশী ভারত। আগামী নির্বাচনে ভারতের অবস্থান কী হবে, তা স্পষ্ট না করলেও প্রতিবেশী দেশটি গোটা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিপরীত অবস্থানে ছিল। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশ সফর করবেন বলে কূটনৈতিক মহলে আলোচনা আছে। সুষমার সফর হলে নির্বাচন নিয়ে এবার ভারতের অবস্থান কী হবে, তা জানা যাবে। আগামী নির্বাচনে ভারতের অবস্থান কী হবে জানতে চাইলে বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীণা সিক্রি সোমবার টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচন এখনও অনেক দূরে। ফলে এ সম্পর্কে মন্তব্য করার এটা উপযুক্ত সময় নয়। নির্বাচনের সময় কাছাকাছি এলে বোঝা যাবে।’ তিনি অবশ্য এটা বলেন যে, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক এখন অনেক ভালো যাচ্ছে। অনেক কাজ হচ্ছে। এসব কাজের মাধ্যমে উভয় দেশই উপকৃত হচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও নিরাপত্তার জন্য যা ভালো, সেটা হচ্ছে। ভারতের অর্থনীতি ও নিরাপত্তার জন্য যা ভালো, সেটাও হচ্ছে।’ ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইলেকশন কমিশনকে (ইসি) সহায়তা দিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। কিন্তু ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের পর ইসির প্রকল্পে বিদেশি সহায়তা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিদেশিরা আগ্রহ ব্যক্ত করেন। বিদেশি কূটনীতিকরা নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎ চান। কিন্তু সরকার এ সাক্ষাতে অনুমতি দেয়নি। তারপর ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী রবার্ট উইটকিনসের নেতৃত্বে কূটনীতিকরা প্রধান নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদার সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় ভোটে কোনো সহায়তা লাগবে কিনা- বিদেশিরা ইসির কাছে জানতে চান। কমিশন জানিয়েছে, তারা চাহিদা-সংবলিত একটি চিঠি জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কাছে পাঠাবে। এ চিঠি পাঠানোর পর জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনে কী ধরনের সহায়তা প্রয়োজন, তা জানতে সফর করে গেছে। ‘নিড অ্যাসেসমেন্ট টিম’ নামে এ প্রতিনিধি দলের কাছে নির্বাচন কমিশন উচ্চগুণগত মানসম্পন্ন নির্বাচনী উপকরণ দিয়ে সহায়তা করার জন্য জাতিসংঘের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে।
No comments