বিএনপি চায় হারানো দুর্গ আ’লীগ চায় জয়
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এখনই সরগরম হয়ে উঠেছে বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনের নেতাকর্মীরা। আগামী নির্বাচনে বিএনপি চায় তাদের হারানো দুর্গ ফিরে পেতে আর আওয়ামী লীগ চায় জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো বাকি প্রায় ১৬ মাস। তারপরও ভোট সামনে রেখে সরগরম নির্বাচনী এলাকা বরিশাল-১ আসনের (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) মানুষ। এখানে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নেমে পড়েছেন গণসংযোগে। জাতীয় পার্টির কোনো প্রার্থীর নাম এখনো শোনা না গেলেও নির্বাচনের সময় তারা প্রার্থিতা ঘোষণা করতে পারে। বর্তমানে সম্ভাব্য প্রার্থীরা কৌশলে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী এলাকাগুলোতে গণসংযোগ করছেন। চলছে দলীয় গ্রুপিং ও লবিং। প্রত্যেক ভোটারের মধ্যেই চলছে নানা আলোচনা। কে পাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন। এখানে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে, মরহুম আ: রব সেরনিয়াবাতের ছেলে এবং এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। এই আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান এবং কেন্দ্রীয় কমিটির বরিশাল বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল জেলা উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান। এখানে আওয়ামী লীগের উন্নয়নের প্রচারণা শুরু করেছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। অন্য দিকে দলীয় কোন্দল ও মামলার কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় কোন্দল মেটাতে না পারলে আসনটি হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে এমনটাই ধারণা করছে বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। আগৈলঝাড়া উপজেলায় বড় দুই দলের কমিটি না থাকায় ঝিমিয়ে পড়েছে কার্যক্রম। বিএনপি দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপি দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে। আগৈলঝাড়া ও গৌরনদী উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল-১ আসনে চারদলীয় ঐক্যজোট মনোনীত প্রার্থী ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান। নির্বাচনের পর তার সমর্থিত আ: লতিফ মোল্লাকে প্রধান করে আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠনের পরপরই অপর কেন্দ্রীয় নেতা আকন কুদ্দুসুর রহমান সমর্থিত নেতাকর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এরপর ২০০৯ সালের ২৭ নভেম্বর গৈলায় আ: লতিফ মোল্লার বাড়িতে দলীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে আ: লতিফ মোল্লা সভাপতি ও আফজাল শিকদারকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে কমিটি গঠিত হয়। এর পর থেকে বিএনপির স্থানীয় রাজনীতিতে গ্রুপিং সৃষ্টি হয়। দলীয় বিভক্তির কারণে হামলা-সংঘর্ষের আশঙ্কায় ২০১০ সালের ৯ অক্টোবর আগৈলঝাড়া বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয় কেন্দ্র থেকে। বিএনপির অপর কেন্দ্রীয় নেতা আকন কুদ্দুস সমর্থিত উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন লাল্টুকে আহ্বায়ক করে আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপির পাল্টা কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান সমর্থিত নেতাকর্মীরা প্রত্যাখ্যান করেন। পরে আফজাল শিকদারকে সভাপতি ও আবুল হোসেন লাল্টুকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬১ সদস্যবিশিষ্ট আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপির আরেকটি কমিটি ২০১১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বরিশাল জেলা উত্তর বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ ও সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান অনুমোদন করেন। বরিশালের বিভিন্ন আঞ্চলিক পত্রিকায় ওই কমিটি প্রকাশিত হলে আগৈলঝাড়ায় বিএনপির মধ্যে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবহান সমর্থিত নেতা ওই কমিটির সভাপতি আফজাল শিকদারকে প্রত্যাখ্যান করে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান এ নিয়ে কেন্দ্রে অভিযোগ দেয়ায় কেন্দ্রীয় বিএনপি বরিশাল জেলা উত্তর সভাপতি ও সম্পাদককে চিঠি দিয়ে নতুন কমিটির কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশ দেয়। গ্রুপিং এবং পুলিশের সভা-সমাবেশের অনুমতি না থাকায় উপজেলা বিএনপি কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারছে না বলে একাধিক নেতাকর্মী জানান। বিএনপির তিন নেতা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-১ আসন থেকে দলীয় মনোয়ন চাইবেন। তারা হলেন- জেলা উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান ও সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন। সংস্কারপন্থী বিএনপি নেতা স্বপন মনোনয়ন পেলে বিরোধিতা করতে পারে অপর দুই নেতাসহ বরিশালের প্রভাবশালী নেতারা। অন্য দিকে আওয়ামী লীগ দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ইউসুফ মোল্লার মৃত্যুর পর থেকেই কমিটিশূন্য হয়ে পরে দলটি। এর আগে দলীয় নির্দেশ অমান্য করে উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করায় দলের সাধারণ সম্পাদক যতীন্দ্র নাথ মিস্ত্রিকে ২০১৪ সালের ৮ মার্চ দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। সূত্রগুলো আরো জানায়, পদ-পদবি দিতে মাঠেঘাটে আলোচিত অনেক নেতাকে দীর্ঘদিন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ নিজে। সংগঠনের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে সর্বজন গ্রহণযোগ্য এক নেতার হাতেই তিনি নেতৃত্ব তুলে দিতে চান বলে জানা গেছে। দলীয় সূত্রে আরো জানা গেছে, ২০০১ সালে ইউসুফ মোল্লাকে প্রধান করে ২১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির দীর্ঘ ১৩ বছর পর ২০১৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর আগৈলঝাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিল শেষে ইউসুফ মোল্লাকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যতীন্দ্র নাথ মিস্ত্রির নাম ঘোষণা করা হয়। তবে তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে ব্যর্থ হওয়া এবং সভাপতির মৃত্যু ও সম্পাদকের বহিষ্কারে কমিটিশূন্য হয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ। এই উপজেলায় দু’টি গাড়ি পোড়ানোর মামলাসহ বিভিন্ন ঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীরা আসামি হওয়ায় দলীয় কর্মসূচি পালন হয় না। এসব মামলায় কারাগারে যেতে হয়েছে বহু নেতাকর্মীকে। এ কারণে কিছুটা আন্দোলনবিমুখ হয়ে পড়া দলটি সাংগঠনিকভাবে ঝিমিয়ে পড়েছে। বর্তমানে ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের নিয়ে পঞ্চাশ হাজার নতুন সদস্যর টার্গেট নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছেন। প্রতিটি ইউনিয়নেই নতুন সদস্যের কার্যক্রম নিয়ে নেতাকর্মীরা এখন অনেকটা উজ্জীবিত।
No comments