বন্যার নতুন রেকর্ড : তলিয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা
দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হচ্ছে। কোনো কোনো স্থানে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অতীতের রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। জামালপুরের বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনার পানি মঙ্গলবার বিপদসীমার ১৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যার সময় এই পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদসীমার ১১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানির প্রবল তোড়ে অনেক জেলায় বেড়িবাঁধ ও সড়ক ভেঙে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন জনপদ। অনেক জেলা ও উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। রেললাইন তলিয়ে যাওয়ায় কয়েক স্থানে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ দিকে বন্যার পানিতে ডুবে লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, সৈয়দপুর, চিরিরবন্দর, ফুলছড়ি ও দিনাজপুরে নারী ও শিশুসহ আরো ১৫ জন মারা গেছে। সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেটের উঁচু এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করলেও নিচু এলাকায় বন্যার পানি বাড়ছে। এ কারণে পরিস্থিতি আরো অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার থেকে ফেঞ্চুগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা নতুন করে প্লাবিত হতে শুরু করেছে। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাওয়া তথ্য মতে, গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় কানাইঘাটে সুরমা নদী বিপদসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার, সিলেটে সুরমা বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার, শেওলায় কুশিয়ারা বিপদসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার, অমলসীদে কুশিয়ারা বিপদসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার এবং শেরপুরে কুশিয়ারা বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ দিকে সিলেটে সুরমা নদীর পানি বাড়ায় নগরীর নিচু এলাকায় প্রবেশ করছে পানি। সিটি করপোরেশনের সূত্র জানায়, বন্যার পানি নগরীর মাছিমপুর, কালিঘাট, শিবগঞ্জ, উপশহর, মেন্দিভাগ, তেররতন এলাকায় প্রবেশ করেছে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে কিছু পানি নামলেও নিচু এলাকার বিভিন্ন ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় আবারো বন্যা দেখা দিয়েছে। অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুশিয়ারার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোসহ উপজেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যাকবলিত গ্রামগুলোর হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় বসতবাড়িতে অবস্থান করছেন। ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার প্রধান সড়কে পানি ওঠে যাওয়ায় যোগাযোগব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো: আনিছুর রহমান বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। দিনাজপুর সংবাদদাতা জানান, দিনাজপুরে বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে। তিন দিন পর মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে ধীরে ধীরে দিনাজপুর শহরসহ বিভিন্ন স্থানে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও খাদ্য সঙ্কট। বন্যায় আরো এক শিশুর (১০) মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে গত দুই দিনে জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ জনে। এ ছাড়া নিখোঁজ রয়েছে হুমায়ুন (১৫) নামে এক কিশোর। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫০ লাখ টাকা ও ৩০০ টন চালের চাহিদা পাঠালেও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে এখন পর্যন্ত এসেছে মাত্র ৫০০ পরিবারের জন্য শুকনো খাবার। জেলায় মঙ্গলবার পর্যন্ত বন্যাজনিত কারণে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ জনে। বিদ্যুতায়িত হয়ে মৃত্যু ও দুর্ঘটনা এড়াতে বন্যাকবলিত এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এ দিকে বানভাসির মানুষের জন্য আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ হতে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। জেলার ৪৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২৬৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৬৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ। লালমনিরহাটে বন্যার পানিতে ১ শিক্ষকসহ ২ শিশুর মৃত্যু ও একই পরিবারের নিখোঁজ ৩ মোট ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। লালমনিরহাট সংবাদদাতা জানান, বন্যায় লালমনিরহাটে একজন শিক্ষক ও দু’টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া একই পরিবারের তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন। লালমনিরহাট পৌরসভার বানভাসা মোড়ের নুর হোসেন (৬০) বন্যার পানিতে পড়ে মারা যান। তিনি ভেলা বাড়ি দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক। এ ছাড়াও সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নে রোববার দুপুরে বন্যার প্রবল স্রোতে শিশুসহ একই পরিবারের চারজন ভেসে যায়। পরে শিশুটির লাশ উদ্ধার হলেও বাকি তিনজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। এ ছাড়া বন্যার পানিতে ডুবে মোস্তফা বাবু (৬) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। জেলার আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের চওড়াটারী গ্রামে গত শনিবার সন্ধ্যায় বন্যায় জমে থাকা নর্দমার পানিতে ডুবে মোস্তফা বাবু (৬) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তার বাবার নাম আলতাব আলী। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সারপুকুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম প্রধান। জামালপুর সংবাদদাতা জানান, জামালপুরে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। হুহু করে বাড়ছে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি। গতকাল মঙ্গলবার বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদসীমার ১৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বন্যার পানিতে রেললাইন তলিয়ে যাওয়ায় সোমবার রাত ৯টা থেকে জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। জেলার সদর, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, বকশীগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলায় তিন লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বন্ধ হয়ে গেছে জামালপুর-মাদারগঞ্জ সড়ক যোগাযোগ। মাদারগঞ্জ উপজেলায় সোমবার গভীর রাতে যমুনা নদীর চাঁদপুর-নাংলা নাদাগারী অংশের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ৩০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। পানির তোড়ে ভেসে গেছে ১০টি বসতবাড়ি ও দুই শতাধিক পুকুরের মাছ। বন্যাদুর্গত এলাকায় দেখা দিয়ে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও খাদ্য সঙ্কট। পানি ঢুকে পড়ায় জেলায় এ পর্যন্ত ১৬৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ করা হয়েছে। জেলার সাত উপজেলায় পাঁচ হাজার ১৮০ হেক্টর জমির রোপা আমন, আমন বীজতলা, সবজি, শশা ও কলা বাগান তলিয়ে গেছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়। এ দিকে জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর সোমবার ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন। বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়ার ধুনটে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের একাধিক জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে চুনিয়াপাড়া পয়েন্টের ফাটল। এলাকাবাসী রাত জেগে বাঁধ পাহারা দিচ্ছে। বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়ার আতঙ্কে রয়েছে পার্শ্ববর্তী গোসাইবাড়ী ইউনিয়নের মানুষ। জানা গেছে, ধুনটের চুনিয়াপাড়ায় মানাস নদীর মুখে যমুনার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের নিচ দিয়ে পানি ঝরছে। চুনিয়াপাড়ার আরেকটি জায়গায় ইঁদুরের গর্ত দিয়ে পানি ঝরতে শুরু করেছে। এ ছাড়াও শিমুলবাড়ীর দু’টি পয়েন্ট, বানিয়াজানের দু’টি পয়েন্ট, রঘুনাথপুরের একটি পয়েন্ট এবং পুকুরিয়া ভুতবাড়ীর তিনটি পয়েন্ট দিয়ে পানি ঝরছে। সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন বালুভর্তি বস্তা ফেলে পানি বন্ধ করার চেষ্টা করছে। তাদের সাথে যোগ দিয়েছে এলাকার মানুষ। তারা স্বেচ্ছায় বাঁধ মেরামতের কাজ করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাব-অ্যাসিস্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মো: হারুনুর রশীদ জানান, ধুনটের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১০টি পয়েন্টে পানি ঝরছে। সেখানে বালুর বস্তা দিয়ে পানি বন্ধ করার কাজ চলছে। ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা জানান, ঠাকুরগাঁও শহরের ইসলামপুর এলাকার রমজান আলীর অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া ছেলে রানা (১৬) মঙ্গলবার সকালে নিখোঁজ হলে স্থানীয় শুক নদীতে তার লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। এ ছাড়া বন্যার পানিতে নিখোঁজ হওয়া যুবক রিয়াদের (২০) লাশ তিন দিন পর উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে সদর উপজেলার গড়েয়া মিলনপুর গ্রামের খোকন মিয়া (৩৭) ও তার স্ত্রী শিল্পী খাতুন (৩৫) সোমবার রাতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। সদর থানা সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে শহরের টাঙ্গন নদী থেকে লাশটি উদ্ধার করে স্থানীয়রা। নিহত রিয়াদ (২০) শহরের কলেজপাড়া এলাকার হাফিজ উদ্দীনের ছেলে। ওসি মশিউর রহমান এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে বলেন, গত শনিবার শহরের কলেজপাড়া এলাকার বস্তিতে বন্যার পানি ঢোকে। সেখানকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার সময় রিয়াদ টাঙ্গন নদীতে তলিয়ে যায়। ইসলামপুর (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, ইসলামপুরে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৯৫ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জামালপুর পাউবো সূত্র জানায়, যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে মঙ্গলবার বিপদসীমার ১৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সমগ্র উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। বনভাসিরা জানান, ইসলামপুরে এবারের বন্যা ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যাকে অতিক্রম করেছে। বিভিন্ন বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র ও উঁচু ব্রিজ-কালভার্টে আশ্রয় নেয়া দুর্গত লোকজন চোর-ডাকাতের ভয়ে আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন। জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ-রৌমারী-রাজিবপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ইসলামপুর উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন দরিয়াবাদ নামক স্থানে ভেঙে যাওয়ায় ঢাকা ও জামালপুরের সাথে এসব উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। রেললাইন তলিয়ে যাওয়ায় ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জে সরাসরি রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ও উঁচু ব্রিজ-কালভার্টে আশ্রয় নেয়া দুর্গতরা চোর-ডাকাত আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন। উপজেলা দুর্যোগ ও ত্রাণ শাখা জানায়, সরকারি হিসাবে উপজেলার সাত ইউনিয়নে ১৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যাকবলিত পাথর্শী ও চিনাডুলী ইউপি চেয়ারম্যানসহ অনেকে জানান, পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা সরকারি হিসাবে তিনগুণ ছাড়িয়ে যাবে। ইসলামপুর থানার ওসি দ্বীন-ই আলম জানান, বন্যার্তদের নিরাপত্তার জন্য চর মুন্নিয়া ও বেরকুশা এলাকায় দু’টি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প খোলা হয়েছে। বন্যার কারণে মাধ্যমিক পর্যায়ের ৬০টি স্কুল-কলেজ, মাদরাসা এবং ১০৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ হয়েছে। গাইবান্ধা সংবাদদাতা জানান, জেলায় বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিস্তামুখ ঘাট পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অন্য দিকে ঘাঘট নদীর পানি গাইবান্ধা শহর পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ও সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মাহবুবুর রহমান জানান, জেলার প্রায় ৭৮ কিলোমিটার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের মধ্যে ফুলছড়ির সিংড়িয়া এলাকায় ব্রহ্মপুত্র বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১০টি পয়েন্টে লিকেজ দেখা দেয়। বালুর বস্তা এবং বাঁশের পাইলিং করে ওই স্থানগুলো রক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ঠিকাদারের শ্রমিক ছাড়াও সেনাবাহিনীর রংপুর-৬৬ ডিভিশনের ৮৫ জনের একটি টিম সেসব স্থানে কাজ করছে। নওগাঁ সংবাদদাতা জানান, নওগাঁয় বন্যায় দুই লক্ষাধিক লোক পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। ছোট যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ও আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ২০৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নওগাঁ শহরের রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ডিসি ও এসপির বাসায় ৩ ফিট পানি উঠেছে। সোমবার রাতে রানীনগর উপজেলার গোনা ইউনিয়নের ঘোষগ্রাম নামক স্থানে নওগাঁ-আত্রাই সড়কের তিনটি, নান্দাইবাড়ী নামক স্থানে একটি স্থানে সড়ক ভেঙে গেছে। এ ছাড়া এ ইউনিয়নের ছোট যমুনা নদীর বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ নান্দাইবাড়ী ভেড়িবাঁধ ও বেতগাড়ী ভেড়িবাঁধ ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জেলা সদরের সাথে রানীনগর, আত্রাই উপজেলার ও নাটোর জেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। বন্যার পানিতে নওগাঁর ছয়টি উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক বিঘার ফসলি জমি তলিয়ে গেছে এবং কয়েক হাজার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ১৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ১২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে চরাঞ্চল ও নদীতীরবর্তী লোকালয়ে শত শত ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। সিরাজগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম জানান, যমুনার পানি যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে আগামী দুই দিনের মধ্যে এক শ’ বছরের রেকর্ড ভঙ্গের আশঙ্কা রয়েছে। যমুনার প্রবল স্র্রোতে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো ক্রমে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমারসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অপরিবর্তিত রয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৯ উপজেলার ৬০ ইউনিয়নের ৭৬৩ গ্রামের প্রায় চার লক্ষাধিক মানুষ। ঘরবাড়ি ছেড়ে বানভাসিরা আশ্রয় নিয়েছে পাকা সড়ক উঁচু বাঁধ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। গত তিন দিনে বন্যার পানিতে ডুবে ও সাপের কামড়ে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে দুইজন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক মো: শফিকুল ইসলাম জানান, গত ১২ ঘণ্টায় সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি ১৫ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার, নুন খাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির প্রবল স্রোতে ভেসে গেছে প্রায় চার শতাধিক ঘরবাড়ি। ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ বন্যাদুর্গত এলাকার বেশির ভাগ মানুষের। কুড়িগ্রামের টগরাইহাট এলাকায় বন্যার পানির তোড়ে রেল সেতুর গার্ডার দেবে যাওয়ায় সারা দেশের সাথে রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারী সড়ক তলিয়ে চারটি পয়েন্টে ধসে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সোনাহাট স্থলবন্দরসহ নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়ী উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে পাঁচ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠন। তলিয়ে গেছে ৫০ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ক্ষেত।
বাগমারা (রাজশাহী) সংবাদদাতা জানান, বন্যার পানি বৃদ্ধির কারণে উপজেলার বাসুপাড়া, গোবিন্দপাড়া, শুভডাঙ্গা, কাচারী কোয়ালীপাড়া, দ্বীপপুর ও নরদাশ ইউনিয়নের আরো ২০টি গ্রাম নতুনভাবে বন্যা প্লাবিত হয়েছে। এতে তিন শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। উপজেলার সোনাডাঙ্গা ইউনিয়নের মীরপুর উচ্চবিদ্যালয় ও হুলিখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ঢুকেছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া কয়েকটি বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) সংবাদদাতা জানান, ভয়াবহ বন্যায় চিরিরবন্দরের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এদিকে বন্যার পানির ¯্রােতে ভেসে যাওয়া তিন শিশুর মধ্যে একটিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে, একটির লাশ পাওয়া গেছে ও আরেক শিশুর লাশ পাওয়া যায়নি। গত রোববার বিকেলে উপজেলার নান্দেড়াই গ্রামের পঞ্চায়েত পাড়ার ঈমান আলীর মেয়ে ঈশু (৮) ও গোলাম মোস্তফার মেয়ে মোস্তারিনা (৮) সহ বাড়ির পার্শ্বে একসাথে বন্যার পানিতে ভেসে গেলেও মোস্তারিনাকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও ঈশুর লাশ মঙ্গলবার পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। একই দিন দুপুরে উপজেলার ঘুঘুরাতলির পূর্বে খান সাহেব পাড়ার আমিনুল হকের ছেলে আরাফাত হোসেন বন্যায় ভেসে গেলে সোমবার তার লাশ উদ্ধার করা হয়। নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, নাগেশ্বরীতে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। রাস্তাঘাট, ব্রিজ কালভার্ট ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে। পাটেশ্বরী এলাকার তিন জায়গায় ১০০ মিটার ভেঙে যাওয়ায় জেলা সদর ও ঢাকার সাথে নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ী ও ভুরুঙ্গামারী এই তিন উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। শিশু খাদ্য, গো-খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। পানিবন্দী মানুষের তুলনায় ত্রাণসামগ্রী অপ্রতুল। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হায়াত মো: রহমতুল্লাহ জানান, ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। ফুলছড়ি (গাইবান্ধা) সংবাদদাতা জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। এদিকে সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের জিগাবাড়ী গ্রামের বাবলু মিয়ার শিশুপুত্র হানিফ মিয়া (৫) বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে। নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, সৈয়দপুরে বন্যার পানিতে গোসল করার সময় শহরের হাতিখানার আরিফ হোসেন (১৫) ও পাটোয়ারীপাড়ার মোহাম্মদ রতন (১৬) ডুবে মারা গেছে। সোমবার রাতে সৈয়দপুর উপজেলার পশ্চিম পাটোয়ারী পাড়ায় ধসে যাওয়া শহর রক্ষা বাঁধ এলাকা থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। রংপুর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরী দল তিন ঘণ্টা নদীর তলদেশে তল্লাশি চালিয়ে রাতে ধসে যাওয়া বাঁধের ভাটির প্রায় ৩০০ মিটার দূর থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে। সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। মনোহরদী (নরসিংদী) সংবাদদাতা জানান, মনোহরদীতে টানা ভারী বর্ষণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। পচে যাচ্ছে আমন ধানের চারা, সবজি ও পানের বরজ। পাড় ডুবে বের হয়ে গেছে পুকুরের মাছ। ফলে কৃষকরা সম্মুখীন হচ্ছেন ব্যাপক ক্ষতির। কৃষক আব্দুল মুতালিব জানান, আর দু-এক দিন জমিতে পানি থাকলে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের চারা পচে যাবে। কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) সংবাদদাতা জানান, কিশোরগঞ্জ উপজেলায় বন্যাপরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। তবে পানিবন্দী ২০ হাজার মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। মাগুড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার মমতাজুর রহমান সুজন বলেন, আমার ওয়ার্ডে পানিবন্দী এক হাজার ২০০ মানুষ চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। জেলা প্রশাসন ৪০০ মানুষের ১০ কেজি করে চাল ও উপজেলা প্রশাসন এক কেজি চিঁড়া ও আধা কেজি চিনি বরাদ্দ দিলেও পানিবন্দী মানুষ তা চোখেও দেখেনি। ইবি (কুষ্টিয়া) সংবাদদাতা জানান, বন্যার কারণে আজ বুধবারের ফাজিল দ্বিতীয় বর্ষ ২০১৬ এর উলুমুল আরাবিয়াহ ওয়াশ শরীয়াহ প্রথম পত্র (কোড ২০১) পরীক্ষা স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিতব্য এ পরীক্ষার তারিখ পরে ঘোষণা করা হবে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ কে আজাদ লাভলু। পরবর্তী পরীক্ষাগুলো পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে। ধামইরহাট (নওগাঁ) সংবাদদাতা জানান, ধামইরহাটে ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে বাড়িঘর ও ক্ষেতের ফসল, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। উপদ্রুত এলাকায় এখনো ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়নি। জামালগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, জামালগঞ্জের হাওরের শতাধিক গ্রামের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বন্যার কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চলমান দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ ও সাচনা-সুনামগঞ্জ সংযোগ সড়ক পানিতে ডুবে বসতবাড়িতে প্রবেশ করছে। বন্যায় রোপা আমন ও বীজতলা ডুবে গেছে। উপজেলা সদরের সাথে ফেনারবাঁক, ভীমখালী, বেহেলী, সাচনা ও উত্তর ইউনিয়নের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, দেওয়ানগঞ্জে বন্যাপরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। পৌরসভাসহ আট ইউনিয়নে এক লাখ ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন এবং ১৪৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। পাউবো সূত্র জানায়, মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত যমুনার বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ১৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সোমবার থেকে দেওয়ানগঞ্জ-জামালপুর রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে খোলা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) সংবাদদাতা জানান, ফুলবাড়ীতে তিলাই খাল ও শাখা যমুনা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার প্লাবিত হয়েছে এলাকার নি¤œাঞ্চল। কোথাও কোথাও নদীর দু’পাড় ভেঙে নদীতে বিলীন যাচ্ছে। বন্যার পানির নিচে তলিয়ে গেছে কৃষকের সবজি ক্ষেত ও রোপা আমনের চারা। যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে কয়েকটি এলাকার গ্রামের সাথে। পানিবন্দী মানুষের অনেকেই বাড়ি-ঘর ছেড়ে গবাদি পশুসহ ঠাঁই নিয়েছেন নিকটস্থ বিভিন্ন স্কুল কলেজের ভবনগুলোতে। সাঘাটা (গাইবান্ধা) সংবাদদাতা জানান, যমুনা ও কাটাখালী নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বন্যার কারণে প্রায় দেড় হাজার বানভাসী মানুষ এখন ব্রহ্মপুত্র বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন। হাজার হাজার একর জমি রোপা আমন ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। সরিষাবাড়ী (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, সরিষাবাড়ীতে বন্যাপরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। যমুনার পানি মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত বিপদসীমার ১৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের চরাঞ্চলে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলার সাতপোয়া, পোগলদিঘা, আওনা, পিংনা, ভাটারা ও কামরাবাদ ইউনিয়ন ও পৌরসভায় বন্যার পানিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। পৌর এলাকার আরামনগর বাজার ও এ আর এ জুট মিল লিমিটেড পানির কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। ৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি উঠায় পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা জানান, এলাকায় এখনো কোনো সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কেউ আমাদের খোঁজখবর নেয়নি। সিংড়া (নাটোর) সংবাদদাতা জানান, সিংড়ায় বন্যাপরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। আত্রাই নদী ও চলনবিলে গত দুদিনে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে পৌরসভার কয়েকটি মহল্লায় বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। মহেশচন্দ্রপুর মহল্লায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ যেকোনো সময় ধসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল আহসান বলেন, বন্যার পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাণীনগর (নওগাঁ) সংবাদদাতা জানান, রাণীনগরে বন্যাপরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। গত দু’দিনে বাঁধ ও পাকা সড়ক ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ৩২ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমির ফসল। নওগাঁ-আত্রাই পাকা সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাকা সড়ক ভেঙে যাওয়ায় জেলা শহরের সাথে আত্রাই উপজেলার সম্পূর্ণ ও রাণীনগর উপজেলার আংশিক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এখনো এলাকায় পৌঁছেনি কোনো ত্রাণসামগ্রী। রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোনিয়া বিনতে তাবিব জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন ও পরিবারের তথ্য সংগ্রহে কাজ চলছে।
বাগমারা (রাজশাহী) সংবাদদাতা জানান, বন্যার পানি বৃদ্ধির কারণে উপজেলার বাসুপাড়া, গোবিন্দপাড়া, শুভডাঙ্গা, কাচারী কোয়ালীপাড়া, দ্বীপপুর ও নরদাশ ইউনিয়নের আরো ২০টি গ্রাম নতুনভাবে বন্যা প্লাবিত হয়েছে। এতে তিন শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। উপজেলার সোনাডাঙ্গা ইউনিয়নের মীরপুর উচ্চবিদ্যালয় ও হুলিখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ঢুকেছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া কয়েকটি বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) সংবাদদাতা জানান, ভয়াবহ বন্যায় চিরিরবন্দরের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এদিকে বন্যার পানির ¯্রােতে ভেসে যাওয়া তিন শিশুর মধ্যে একটিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে, একটির লাশ পাওয়া গেছে ও আরেক শিশুর লাশ পাওয়া যায়নি। গত রোববার বিকেলে উপজেলার নান্দেড়াই গ্রামের পঞ্চায়েত পাড়ার ঈমান আলীর মেয়ে ঈশু (৮) ও গোলাম মোস্তফার মেয়ে মোস্তারিনা (৮) সহ বাড়ির পার্শ্বে একসাথে বন্যার পানিতে ভেসে গেলেও মোস্তারিনাকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও ঈশুর লাশ মঙ্গলবার পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। একই দিন দুপুরে উপজেলার ঘুঘুরাতলির পূর্বে খান সাহেব পাড়ার আমিনুল হকের ছেলে আরাফাত হোসেন বন্যায় ভেসে গেলে সোমবার তার লাশ উদ্ধার করা হয়। নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, নাগেশ্বরীতে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। রাস্তাঘাট, ব্রিজ কালভার্ট ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে। পাটেশ্বরী এলাকার তিন জায়গায় ১০০ মিটার ভেঙে যাওয়ায় জেলা সদর ও ঢাকার সাথে নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ী ও ভুরুঙ্গামারী এই তিন উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। শিশু খাদ্য, গো-খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। পানিবন্দী মানুষের তুলনায় ত্রাণসামগ্রী অপ্রতুল। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হায়াত মো: রহমতুল্লাহ জানান, ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। ফুলছড়ি (গাইবান্ধা) সংবাদদাতা জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। এদিকে সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের জিগাবাড়ী গ্রামের বাবলু মিয়ার শিশুপুত্র হানিফ মিয়া (৫) বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে। নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, সৈয়দপুরে বন্যার পানিতে গোসল করার সময় শহরের হাতিখানার আরিফ হোসেন (১৫) ও পাটোয়ারীপাড়ার মোহাম্মদ রতন (১৬) ডুবে মারা গেছে। সোমবার রাতে সৈয়দপুর উপজেলার পশ্চিম পাটোয়ারী পাড়ায় ধসে যাওয়া শহর রক্ষা বাঁধ এলাকা থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। রংপুর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরী দল তিন ঘণ্টা নদীর তলদেশে তল্লাশি চালিয়ে রাতে ধসে যাওয়া বাঁধের ভাটির প্রায় ৩০০ মিটার দূর থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে। সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। মনোহরদী (নরসিংদী) সংবাদদাতা জানান, মনোহরদীতে টানা ভারী বর্ষণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। পচে যাচ্ছে আমন ধানের চারা, সবজি ও পানের বরজ। পাড় ডুবে বের হয়ে গেছে পুকুরের মাছ। ফলে কৃষকরা সম্মুখীন হচ্ছেন ব্যাপক ক্ষতির। কৃষক আব্দুল মুতালিব জানান, আর দু-এক দিন জমিতে পানি থাকলে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের চারা পচে যাবে। কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) সংবাদদাতা জানান, কিশোরগঞ্জ উপজেলায় বন্যাপরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। তবে পানিবন্দী ২০ হাজার মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। মাগুড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার মমতাজুর রহমান সুজন বলেন, আমার ওয়ার্ডে পানিবন্দী এক হাজার ২০০ মানুষ চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। জেলা প্রশাসন ৪০০ মানুষের ১০ কেজি করে চাল ও উপজেলা প্রশাসন এক কেজি চিঁড়া ও আধা কেজি চিনি বরাদ্দ দিলেও পানিবন্দী মানুষ তা চোখেও দেখেনি। ইবি (কুষ্টিয়া) সংবাদদাতা জানান, বন্যার কারণে আজ বুধবারের ফাজিল দ্বিতীয় বর্ষ ২০১৬ এর উলুমুল আরাবিয়াহ ওয়াশ শরীয়াহ প্রথম পত্র (কোড ২০১) পরীক্ষা স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিতব্য এ পরীক্ষার তারিখ পরে ঘোষণা করা হবে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ কে আজাদ লাভলু। পরবর্তী পরীক্ষাগুলো পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে। ধামইরহাট (নওগাঁ) সংবাদদাতা জানান, ধামইরহাটে ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে বাড়িঘর ও ক্ষেতের ফসল, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। উপদ্রুত এলাকায় এখনো ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়নি। জামালগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, জামালগঞ্জের হাওরের শতাধিক গ্রামের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বন্যার কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চলমান দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ ও সাচনা-সুনামগঞ্জ সংযোগ সড়ক পানিতে ডুবে বসতবাড়িতে প্রবেশ করছে। বন্যায় রোপা আমন ও বীজতলা ডুবে গেছে। উপজেলা সদরের সাথে ফেনারবাঁক, ভীমখালী, বেহেলী, সাচনা ও উত্তর ইউনিয়নের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, দেওয়ানগঞ্জে বন্যাপরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। পৌরসভাসহ আট ইউনিয়নে এক লাখ ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন এবং ১৪৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। পাউবো সূত্র জানায়, মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত যমুনার বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ১৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সোমবার থেকে দেওয়ানগঞ্জ-জামালপুর রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে খোলা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) সংবাদদাতা জানান, ফুলবাড়ীতে তিলাই খাল ও শাখা যমুনা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার প্লাবিত হয়েছে এলাকার নি¤œাঞ্চল। কোথাও কোথাও নদীর দু’পাড় ভেঙে নদীতে বিলীন যাচ্ছে। বন্যার পানির নিচে তলিয়ে গেছে কৃষকের সবজি ক্ষেত ও রোপা আমনের চারা। যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে কয়েকটি এলাকার গ্রামের সাথে। পানিবন্দী মানুষের অনেকেই বাড়ি-ঘর ছেড়ে গবাদি পশুসহ ঠাঁই নিয়েছেন নিকটস্থ বিভিন্ন স্কুল কলেজের ভবনগুলোতে। সাঘাটা (গাইবান্ধা) সংবাদদাতা জানান, যমুনা ও কাটাখালী নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বন্যার কারণে প্রায় দেড় হাজার বানভাসী মানুষ এখন ব্রহ্মপুত্র বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন। হাজার হাজার একর জমি রোপা আমন ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। সরিষাবাড়ী (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, সরিষাবাড়ীতে বন্যাপরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। যমুনার পানি মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত বিপদসীমার ১৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের চরাঞ্চলে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলার সাতপোয়া, পোগলদিঘা, আওনা, পিংনা, ভাটারা ও কামরাবাদ ইউনিয়ন ও পৌরসভায় বন্যার পানিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। পৌর এলাকার আরামনগর বাজার ও এ আর এ জুট মিল লিমিটেড পানির কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। ৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি উঠায় পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা জানান, এলাকায় এখনো কোনো সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কেউ আমাদের খোঁজখবর নেয়নি। সিংড়া (নাটোর) সংবাদদাতা জানান, সিংড়ায় বন্যাপরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। আত্রাই নদী ও চলনবিলে গত দুদিনে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে পৌরসভার কয়েকটি মহল্লায় বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। মহেশচন্দ্রপুর মহল্লায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ যেকোনো সময় ধসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল আহসান বলেন, বন্যার পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাণীনগর (নওগাঁ) সংবাদদাতা জানান, রাণীনগরে বন্যাপরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। গত দু’দিনে বাঁধ ও পাকা সড়ক ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ৩২ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমির ফসল। নওগাঁ-আত্রাই পাকা সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাকা সড়ক ভেঙে যাওয়ায় জেলা শহরের সাথে আত্রাই উপজেলার সম্পূর্ণ ও রাণীনগর উপজেলার আংশিক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এখনো এলাকায় পৌঁছেনি কোনো ত্রাণসামগ্রী। রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোনিয়া বিনতে তাবিব জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন ও পরিবারের তথ্য সংগ্রহে কাজ চলছে।
No comments