বন্যায় ভাসছে দক্ষিণ এশিয়া
ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট বন্যায় এ পর্যন্ত অন্তত ২২০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। প্রায় ১৫ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে পানিবন্দী হয়ে পড়া গ্রামগুলোতে তল্লাশি চালিয়েছেন উদ্ধারকারীরা। কর্মকর্তারা গতকাল মঙ্গলবার এ কথা জানিয়েছেন। ভারতে নজিরবিহীন বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে শতাধিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। বন্যা ও ভূমিধসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আসাম, মেঘালয়, বিহার, হিমাচল প্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কলকাতা প্রতিনিধি জানান, গতকাল মঙ্গলবার ভারতের স্বাধীনতা দিবসে বন্যাকবলিত এলাকার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছে হাঁটুসমান পানিতে দাঁড়িয়ে। পশ্চিমবঙ্গে নদীর পানিতে ডুবছে একের পর এক এলাকা। দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুরে পানিতে ডুবে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। সেখানকার বন্যা পরিস্থিতি এখনো অপরিবর্তিত। গতকাল বৃষ্টি কম হলেও পানি কমেনি। ভুটান, নেপাল ও বিভিন্ন বাঁধের ছেড়ে দেওয়া পানির তোড়ে ভেসে গেছে বহু এলাকা। মালদহে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। ডুবেছে হরিশ্চন্দ্রপুর। মহানন্দার পানিতে প্লাবিত হয়েছে চাঁচল ও ইংরেজ বাজার। রায়গঞ্জে ফুঁসছে গামারি, কুলিক ও নাগর নদ। প্লাবিত হয়েছে বহু গ্রাম। দক্ষিণ দিনাজপুরের বংশীহারি নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে বহু এলাকা। ডালখোলায় ভেঙে পড়েছে রেলসেতু। আসামে এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং ২২ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। মেঘালয় ও আসামের পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসে ওই অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি আরও নাজুক হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীকে তলব করা হয়েছে এবং বিমানবাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বন্যাকবলিত রাজ্যগুলোতে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা পাঠানো হচ্ছে বলে এক টুইটার বার্তায় জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিন দিন ধরে নেপালসহ বিহারে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় রাজ্যের পাঁচটি জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। মহানন্দা ও কানকাই নদের পানি বেড়ে পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে পড়েছে। ট্রেন চলাচলও মারাত্মক বিঘ্নিত হচ্ছে।
এদিকে, কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গগামী বহু ট্রেন গতকালও বাতিল করা হয়েছে। এখনো ডুবে আছে কিষাণগঞ্জ রেলস্টেশন। কলকাতা থেকে দার্জিলিং, নিউ জলপাইগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, গুয়াহাটি, আগরতলাগামী কোনো ট্রেনই ছাড়েনি কলকাতা থেকে। বন্ধ রয়েছে কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গগামী দূরপাল্লার সব বাস। বন্ধ আছে কলকাতা-ভুটান বাসও। ফলে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ভারতের সাত রাজ্যের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শিলিগুড়ি হলো উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার। এখান থেকে সড়কপথে আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মণিপুর রাজ্যে যোগাযোগের পথ রয়েছে। ফলে কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি সড়ক ও রেলপথে আসা বন্ধ হয়ে গেছে বন্যার কারণে। এতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে কলকাতার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের সড়ক ও রেল যোগাযোগ। নেপালের দক্ষিণাঞ্চলের জনবহুল নিচু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। হাজার হাজার বাড়িঘর পানিতে ডুবে গিয়ে এলাকার অন্তত ২০ শতাংশ মানুষ দুর্ভোগের কবলে পড়েছে। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনার্দন শর্মা গতকাল পার্লামেন্টে জানান, ‘আমাদের হাতে এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুসারে ১১১ জন মারা গেছেন। ৩৫ জন নিখোঁজ আছেন। তাঁদের সন্ধানে অভিযান চলছে।’ বন্যায় বাংলাদেশেরও বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। দেশটিতে এ পর্যন্ত অন্তত ২৯ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান রিয়াজ আহমেদ বলেন, বন্যায় ১৫ লাখ মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। তাঁদের আশ্রয় দিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১ হাজার ২০০টি আশ্রয় শিবির তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন নদীর ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামত এবং বন্যাকবলিতদের সহযোগিতা ও বন্যায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
No comments