ধর্মের নামে সংঘাত চলবে না
ভারতে ধর্মের নামে কোনো ধরনের সংঘাত-সহিংসতা মেনে নেয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারতের ৭০তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে মঙ্গলবার নয়াদিল্লির লালকেল্লায় দেয়া এক ভাষণে তিনি এ মন্তব্য করেন। রয়টার্স জানায়, মোদির দল ক্ষমতায় আসার পর দেশটিতে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে উগ্র হিন্দুদের হামলার ঘটনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থান দেশটির ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তিকে ক্ষুণœ করছে কিনা- এমন বিতর্ক দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবারের ভাষণে গোরক্ষা আন্দালনের নামে যারা সংখ্যালঘু মুসলিম ও নিন্মবর্ণের হিন্দুদের ওপর হামলা চালায় তাদের বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে মোদি বলেন, সন্ত্রাসবাদকে কোমল দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখা যাবে না। ভারতে ধর্মের নামে কোনো ধরনের সংঘাত মেনে নেয়া হবে না। লালকেল্লার এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- ভারতের লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি, ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী প্রমুখ। ভাষণে জম্মু-কাশ্মীর ইস্যুতে মোদি বলেন, বুলেট বা অত্যাচারের মাধ্যমে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান হবে না। কাশ্মীরের জনগণকে ভালোবেসে বুকে টেনে নেয়ার মাধ্যমেই এর সমাধান সম্ভব। বর্তমান সরকার কাশ্মীরের ‘ভূস্বর্গ’ খেতাব ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট জানিয়ে তিনি বলেন, জুম্মু ও কাশ্মীরকে এগিয়ে নিতে আমাদের কাজ করে যেতে হবে। জাতিগত বিভেদ ও সাম্প্রদায়িকতা আমাদের দেশের জন্য কখনই মঙ্গল বয়ে আনতে পারবে না। এ দেশ গৌতম বুদ্ধের ও মহাত্মা গান্ধীর। সন্ত্রাস আর সহিংসতায় ক্ষত-বিক্ষত এ রাজ্যকে গড়ে তুলতে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং তার জন্য রোডম্যাপ চূড়ান্ত করা হয়েছে। এনডিটিভি জানায়, কাশ্মীরের যুবসমাজ যেন হতাশাগ্রস্ত না হয়ে পড়ে তাই তাদের জন্য কিছু উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন মোদি। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে যুবসমাজকে শিক্ষিত করা, তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, তাদের সমাজের মূলধারায় নিয়ে আসা, ব্যবসা ও চাকরির সুযোগ বৃদ্ধি করা।
তিনি যুবসমাজকে রাষ্ট্রে ?সহিংসতা না করে মূলধারায় ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভারতের গণতন্ত্রে মনের সব কথা বলার সব অধিকার আপনাদের আছে। ভারতে অর্থনৈতিক সংস্কারে সরকার উদ্যোগী বলে জানান মোদি। তিনি বলেন, ভারতে এখন সততার উৎসব চলছে। মুখ লুকাচ্ছে দুর্নীতিগ্রস্তরা। ভারতে নোট বাতিল নিয়ে যে যাই বলুক, দেশবাসী নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত সমর্থন করেছে। ভারতকে স্বচ্ছতার পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে গোটা ভারত থেকে ইতিমধ্যে ৮০০ কোটি রুপির বেনামি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ভবিষ্যতে তার সরকার আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। ২০২২ সালের মধ্যে নতুন ভারত গড়ার অঙ্গীকারও করেন তিনি। এজন্য দেশবাসীকে শপথ নিতে হবে বলে জানান মোদি। নতুন ভারত গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোদি বলেন, আমাদের দেশে কোনো ছোট-বড় নেই। এখানে সবাই সমান। সবাই মিলে আমরা একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারি। মোদি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও আসাম রাজ্য প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। এ তিন রাজ্যকে ভারতের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা নিতে হবে। সন্ত্রাসবাদ ও নিরাপত্তার ইস্যুতে তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারত আজ একা নয়। গোটা বিশ্ব ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, যেকোনো হুমকি ও নিজেদের সীমান্ত রক্ষায় ভারত আজ যথেষ্ঠ শক্তিশালী। কিছুদিন আগে ভারতের ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ প্রমাণ করেছে ভারত কতটা শক্তিশালী। নিরাপত্তাই আমাদের অগ্রাধিকার।
No comments