তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের বার্ষিকীতে শোডাউন
তুরস্কে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের বার্ষিকীতে হাজার হাজার সমর্থকের সামনে আবেগী বক্তব্য দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। এ সময় তিনি অভ্যুত্থানকারীদের ঠেকিয়ে দেয়ায় জনতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় সময় শনিবার রাতে বসফরাস প্রণালির সংযোগ সেতুসংলগ্ন এলাকায় দেয়া জনসে াতের সামনে বক্তব্য দেন এরদোগান। খবর বিবিসির। ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই তুরস্কে এরদোগান সরকারকে উৎখাতের জন্য সামরিক বাহিনীর একাংশ অভ্যুত্থানের চেষ্টা করে। তাদের সে চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয় জনগণ। সেদিন মারা যায় আড়াইশ’ লোক। অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকীতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘সেদিন রাতে মানুষের হাতে বন্দুক ছিল না। তাদের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা। আর আজ যারা বেরিয়েছে তাদের হাতেও জাতীয় পতাকা। বন্দুকের চেয়ে পতাকা বেশি শক্তিশালী। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাদের বিশ্বাস। আমি আমার জাতির প্রত্যেক সদস্যের কাছে কৃতজ্ঞ, যারা তাদের দেশকে রক্ষা করেছিল।’২৫০ জন মানুষ জীবন দিয়ে দেশকে রক্ষা করেছেন উল্লেখ করে এরদোগান বলেন, ‘অভ্যুত্থানকারীরা গত বছর এই রাতে সেতুটি বন্ধ করে দিয়েছিল। তারা বিশ্বকে দেখাতে চেয়েছিল যে তুরস্ক এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু লাখ লাখ মানুষ সেদিন দেশের সম্মানে রাস্তায় নেমে তাদের রুখে দেয়। তারা বিশ্বাসঘাতকদের ঘাড় মটকে দিয়েছে।’ অভ্যুত্থানকারী সেনাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়ার পক্ষে জোর সমর্থন দিয়ে এরদোগান বলেন, তাদের গুয়ানতানামো কারাগারের বন্দিদের মতো পোশাক পরানো উচিত। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি এই অভ্যুত্থানকারীদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিমের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তিনি (বিনালি) বলেছিলেন, ‘আদালতে তোলার সময় তাদের যেন গুয়ানতানামোর বন্দিদের মতো পোশাক পরানো হয়।’ তিনি বলেন, তুরস্ক সরকার পুনরায় মৃত্যুদণ্ড চালু করার বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে ভাবনা-চিন্তা করছে। প্রথমেই বিশ্বাসঘাতকদের মুণ্ডু কেটে ফেলা হবে বলেও এ সময় তিনি ঘোষণা করেন । ব্যর্থ এই অভ্যুত্থানে সমর্থন দেয়ার অভিযোগে দেড় লক্ষাধিক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বরখাস্ত করেছে তুরস্ক সরকার। অভ্যুত্থানচেষ্টায় সমর্থন দেয়ার অভিযোগে ৫০ হাজার জনকে গ্রেফতার করা হয়, যাকে ভিন্নমত দমনের কৌশল হিসেবে দেখছেন সমালোচকরা। বক্তব্যে ১৫ জুলাইকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন এরদোগান। একই অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী ইলদিরিম ১৫ জুলাইকে ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ’ হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এক বছর আগের এই রাতটি ছিল ভয়াবহ, বিভীষিকাময়। এ রাত ছিল দীর্ঘ, একটি ঝলমলে রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে প্রবেশের আগমুহূর্ত। সমাবেশে অংশ নেয়া জুলফিকার কাহারমান নামে একজন বলছেন, আমি জানি না সেই রাতে কেন যে আমার মৃত্যু হয়নি! এই কথা এখনও আমাকে তাড়া করে বেড়ায়। কেন আমি ট্যাঙ্কের সামনে সিনা টান করে দাঁড়াইনি? দেশের প্রয়োজনে আমি নিজেকে নির্ভয়ে উৎসর্গ করতে পারি।" এরদোগান এখনও ব্যাপক জনপ্রিয় : বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট এরদোগান এখনও তুরস্কে বিপুলভাবে জনপ্রিয়। তার বিরুদ্ধে যত অভিযোগই সমালোচকরা করুন না কেন, দেশটির অর্ধেক মানুষ এখনও তার সমর্থক। ইস্তাম্বুল থেকে বিবিসির মার্ক লোয়েন জানান, এরদোগানের জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে। তবে মার্ক লোয়েন বলছেন, তুরস্কে যদিও অভ্যুত্থানকারীদের বিরুদ্ধে কিছুদিন পর্যন্ত এরদোগান সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে একটা ঐক্য দেখা দিয়েছিল কিন্তু এখন দেশটিতে এই দুই শিবিরের মধ্যে বিভক্তি তীব্রতর হয়েছে। অন্যদিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গেও তুরস্কের সম্পর্ক চিড় ধরেছে। তুরস্কে সেই অভ্যুত্থানের রাতে মামরেস শহরে বিদ্রোহী সেনাদের হাতে ধরা পড়ার হাত থেকে অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিলেন এরদোগান। এর পর তার একটি ভিডিও বার্তা প্রচারিত হওয়ার পরই দ্রুত বদলে যেতে থাকে পরিস্থিতি। তবে তুরস্কে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জিম জেফরি বলেন, তার ধারণা অভ্যুত্থানের পেছনে ফেতুল্লা গুলেন এবং তার সমর্থকরাই ছিল কিন্তু কীভাবে তারা সামরিক বাহিনীতে অনুপ্রবেশ করেছিল তা এখনও কেউ জানে না। জেফরি বলেন, সমস্যা হচ্ছে ইইউ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ অভ্যুত্থানের নিন্দা করতে অনেক দেরি করেছিল। যদিও চূড়ান্ত বিচারে এটি ছিল গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে একটি গোষ্ঠীর অভ্যুত্থান।
No comments