টঙ্গিবাড়ী ও লৌহজংয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী ও লৌহজং উপজেলার নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে ¯্রােতের তীব্রতায় পদ্মার ভাঙন শুরু হয়েছে। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে দুইটি উপজেলার অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি, ফসলি জমি, খেলার মাঠ, স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ ও দোকানপাট আকস্মিক ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। মারাত্মক ভাঙনের কবলে পড়েছে পদ্মা তীরবর্তী লৌহজংয়ের মেদেনীমন্ডল, গাঁওদিয়া, কুমারভোগ ও টঙ্গীবাড়ী উপজেলার কামারখাড়া, হাসাইল-বানারি, দিঘীরপাড়, পাঁচগাঁও ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম। ভাঙন কবলিত এলাকার শিশু, নারী-পুরুষেরা নির্ঘূম রাত কাটাচ্ছেন ভাঙন আতঙ্কে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থদের দাবী- নদী তীরবর্তী এলাকায় দ্রুত ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেয়া হউক। মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার কামারখাড়া, হাসাইল-বানারি, দিঘীরপাড়, পাঁচগাঁও, লৌহজং উপজেলার গাঁওদিয়া, কুমারভোগ ও মেদিনীমন্ডল ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রামে ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে টঙ্গীবাড়ী উপজেলার কামারখাড়া ইউনিয়নের বড়াইল বাগবাড়ি, চৌসার, জৈনসার, দিঘীরপাড়ের মিতারা, সরিষাবন, ধানকেড়া, পূর্ব হাসাইল, লৌহজংয়ের গাঁওদিয়া ইউনিয়নের গাঁওদিয়া, শামুরবাড়ি, পদ্মারচর, কুমারভোগ ইউনয়নের শিমুলিয়া বাজার, খড়িয়া গ্রাম, মেদিনীমন্ডল ইউনিয়নের কান্দিপাড়া গ্রাম, যশলদিয়া গ্রাম, মাওয়া পুরাতন ফেরিঘাটসহ নদীর তীরবর্তী বেশ কিছু এলাকায়ও দেখা দিয়েছে পদ্মার ভাঙন। প্রতিদিনই পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ¯্রােতের তীব্রতা বেড়ে গেছে। গত ৮ জুলাই কামারখাড়ার বাগবাড়ি এলাকা সংলগ্ন পদ্মা নদীর ¯্রােতে তলিয়ে গেছে রাজিব নামে এক যুবক। রাজিবের মরদেহের সন্ধান পায়নি স্বজনরা। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থরা নদী তীরবর্তী এলাকা ও আশপাশ এলাকায় স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া যেসব স্থাপনা পদ্মায় বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, সেসব স্থাপনা ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থরা বলেছেন, টঙ্গীবাড়ী উপজেলার দিঘীরপাড়ের আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক শীর্ষ নেতা ও তার লোকজন নদীর পাড় ঘেঁষে ড্রেজার বসিয়ে মাটি কেটে নেয়ায় ভাঙনের তীব্রতা আরো বেড়েছে। এদিকে, পদ্মার ভাঙন শুরু হওয়ায় লৌহজংয়ের গাঁওদিয়া ইউনিয়নেই বর্তমানে ভাঙনের মুখে রয়েছে জৈনপুরী পীর সাহেবের খানকা শরীফ, গাঁওদিয়া বাজারের মসজিদসহ ৩টি মসজিদ, একটি মাদ্রাসা, গাঁওদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গাঁওদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ, বিখ্যাত লেখক মানিক বন্দোপাধ্যায়ের নানার বাড়ি, গাওঁদিয়া বাজারের বাকি অংশ, কমিউনিটি ক্লিনিক ও একটি খেলার মাঠ, ৪টি ক্লাব, মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের এমপি সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলির শামুর বাড়ি গ্রামের বসতবাড়ি, ইউনুছ খান মেমোরিয়াল হাসপাতাল, মসজিদ, হাড়িদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, খেলার মাঠ, কবরস্থান ও প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনা। এমনকি লৌহজং-বেজগাঁও- গাঁওদিয়া বেড়িবাঁধটি এখন হুমকির মুখে পড়েছে। টঙ্গীবাড়ী উপজেলার কামারখাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন হালদার বলেছেন, তার ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রাম সবচেয়ে বেশি ভাঙনের মুখে রয়েছে। স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, নদীগর্ভে চলে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য মাপ-জোপ করে গেলেও তার কার্যক্রম শুরু হয়নি।
No comments