বিয়েতে রাজি না হওয়ায় খুন!
নিষিদ্ধ পেশায় ছিল আনিকা আক্তার (১৮)। আনিকার সঙ্গে বছরখানেক আগে পরিচয় হয় রমজানের (২২)। সবকিছু জেনেই আনিকার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায় রমজান। তাকে বিয়ে করবে বলে আশ্বাস দেয়। রমজানের আশ্বাসে পেশা পরিবর্তন করে সংসার করার স্বপ্ন দেখা শুরু করে আনিকা। সম্প্রতি কামরাঙ্গীরচরের একটি ফ্ল্যাটে আনিকার সঙ্গে রাত কাটাতে যায় রমজান। সেখানে তাকে বিয়ের জন্য চাপ দেয় আনিকা। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে বিয়ে করতে রাজি হয়নি রমজান। বিষয়টি নিয়ে দু’জনের মধ্যে সেই রাতেই তুমুল ঝগড়া হয়। এর কয়েকদিন পর কেরানীগঞ্জ থেকে রমজানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনা অনুসন্ধানে পুলিশ জানতে পারে, কলগার্ল আনিকাকে বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় রমজানকে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যার সঙ্গে আনিকা, সাথী, জাহিদুল ও জাফরসহ বেশ কয়েকজন জড়িত। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার নাজির আহমেদ খান যুগান্তরকে বলেন, ২৮ এপ্রিল থেকে নিখোঁজ ছিল রমজান। ১৩ মে এ ঘটনায় কামরাঙ্গীরচর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন রমজানের বাবা আয়নাল। পরে ১৬ জুন অপহরণের মামলা হয়। লাশ উদ্ধারের পর নিহতের বাবা বাদী হয়ে কেরানীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। এডিসি নাজির আহমেদ বলেন, ঘটনা তদন্তে নেমে তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে দেখা যায়, ঘটনার দিন রাত ১২টার পর বেশ কয়েকবার রমজান ও আনিকার মধ্যে ফোনালাপ হয়েছে। ওই রাতে আনিকার রুম থেকে রমজানের লাশ সাথী, জাহিদুল, জাফর, রাশেদ ও আরমান একটি নোহা গাড়িতে করে বসিলা ব্রিজ এলাকায় ফেলে দেয়। এ ঘটনায় সাথী, রাশেদ ও আরমান আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। আদালতে দেয়া জবানবন্দি ও মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রমজান কামরাঙ্গীরচরে উজ্জ্বল নামের এক ব্যক্তির ফার্নিচারের দোকানে কাজ করত। ঘটনার দিন রাতে রমজান তার বন্ধু সাগর ও মনিরকে নিয়ে মদপান করে। এরপর ইয়াবা সেবন করে। ইয়াবা সেবনের একপর্যায়ে আনিকাকে ফোন দিয়ে কামরাঙ্গীরচরের একটি ফ্ল্যাটে যায় রমজান। ওই ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিল সাথী নামের আরেক কলগার্ল। সেখানে সাথীর তত্ত্বাবধানে ৪-৫ জন মেয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ চালাত। সাথী ছিল তাদের সর্দার। ঘটনার দিন রাতে সাথী ওই বাসায় ছিল। সাথীর দেয়া জবানবন্দি ও জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানান, রাত ১২টার পর ওই বাসায় যায় রমজান। সাথী তাদের এক রুমে রেখে পাশের রুমে ঘুমাচ্ছিল। রাতে একবার ওই রুম থেকে চিৎকার শুনতে পায় সাথী। সকালে আনিকা সাথীকে ডেকে তার রুমে নিয়ে যায়। গিয়ে সাথী দেখে আনিকার ওড়না গলায় পেঁচিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে রমজান। ঘটনাটি থানা পুলিশকে না জানিয়ে সাথী তার ভাই জাহিদুলকে জানায়। জাহিদুল একটি নোহা গাড়ির ব্যবস্থা করে। সাথী তার বন্ধু আরমান ও রাশেদকেও খবর দেয়। তারা বাসায় এসে ওড়না কেটে লাশ নিচে নামিয়ে আনে। লাশটি দড়ি দিয়ে বেঁধে প্যাকেট করে গাড়িতে তোলে। পরে রাশেদ, আরমান, সাথী ও গাড়ির চালক জাফর মিলে লাশটি বসিলা ব্রিজ পার হয়ে একটি জঙ্গলে ফেলে দেয়। সাথী, আরমান ও রাশেদ তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলে, তারা রমজানকে আনিকার রুম থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ফেলে দেয়। পুলিশ জানায়, আনিকার বয়স কম হলেও খুব চালাক মেয়ে।
এ হত্যার ঘটনা সে মুখে স্বীকার করেনি। গ্রেফতারের পর তাকে কাশিমপুর কারাগারে শিশু সেলে রাখা হয়েছে। তাকে পুনরায় পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তদন্ত কর্মকর্তা কামরাঙ্গীরচর থানার এসআই মো. ফরিদ যুগান্তরকে বলেন, মামলার তদন্ত ও আসামিদের জবানবন্দিতে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, এটি হত্যাকাণ্ড। আনিকাকে গ্রেফতারের সময় আমাদের কাছে তেমন তথ্য ছিল না। এখন এ ঘটনায় তিনজন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। রমজানকে হত্যা করা হয়েছে, এমন অনেক তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। তাই আনিকাকে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একদিনের সময় মঞ্জুর করেছেন। থানা সূত্রে জানা যায়, রমজানের বাবা আয়নাল খাঁর গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর জেলার জবশাহ থানার বুজেশ্বর গ্রামে। আর আনিকার মা রেহেনা। তিনি ইডেন কলেজে বুয়ার কাজ করেন। এ ঘটনার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ রেহেনাকে চাকরিচ্যুত করেছে বলে জানায় পুলিশ। মামলার বাদী আয়নাল খাঁ যুগান্তরকে বলেন, ঘটনার এক সপ্তাহ আগে আনিকা বিয়ের জন্য তার বাসায় আমার ছেলে আটক করে। পরে তার কয়েকজন বন্ধু আশ্বাস দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে। বিষয়টি আমরা জানতাম না। আমরা জানলে এ ঘটনা ঘটত না। তিনি বলেন, ঘটনার দিন আমার ছেলেকে ডেকে বাসায় নিয়ে যায় আনিকা। ছেলেকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় আনিকা ও তার কয়েকজন বন্ধু মিলে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। আমি জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
No comments