চিকুনগুনিয়া জটিল রোগীদের মৃত্যুঝুঁকি বৃদ্ধি করে
চিকুনগুনিয়া জটিল রোগীদের মৃত্যুঝুঁকি বৃদ্ধি করে। এসব রোগীরা দীর্ঘ দিন রোগে ভোগেন বলে এদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। নতুন করে আরেকটি রোগে আক্রান্ত হলে তার মধ্যে অবশিষ্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও হ্রাস পায়। ফলে এসব রোগীর মৃত্যঝুঁকিও বাড়ে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, চিকুনগুনিয়া আক্রান্তদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা বেশি থাকার কারণে কেউ দ্রুত সেরে উঠেন আবার কারো সেরে উঠতে দীর্ঘ সময় লাগে। চিকুনগুনিয়ার প্রতিক্রিয়া কারো দেহে দীর্ঘ দিন থাকে আবার কেউ ১০ বা ১২ দিন পরই সেরে ওঠে। মেডিসিনের বিশিষ্ট চিকিৎসক স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: এম এ ফয়েজ জানিয়েছেন, চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে আক্রান্ত হলে গিটে ব্যথা হয়, মাংসপেশীতে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। জ্বর সেরে গেলে এ ব্যথা আরো কিছুদিন থাকে এবং কারো দীর্ঘ দিন থাকে। রোগীর দেহে রোগ প্রতিরোধ কতটুকু আছে এর ওপর নির্ভর করে রোগী কত আগে সুস্থ হয়ে যাবেন অথবা হয়তো তিনি কয়েক দিন বেশি ভুগতে পারেন। তিনি জানান, জটিল রোগে আক্রান্তদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে বলে তারা খুব দ্রুত আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন। এমনকি তাদের মৃত্যুও হতে পারে। ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম এ ফয়েজ জানান, অনেক সময় আক্রান্তরা দীর্ঘদিন ধরে ভুগতে পারেন। গিটে ব্যথা থাকতে পারে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, ভরা বর্ষার এ সময়টাতে নানা জটিল রোগে ভুগছেন অথবা বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছেন এমন রোগীদের সাবধানে থাকতে বলা হয়েছে। দিনের বেলা ঘুমানোর সময় রোগে আক্রান্তদের অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে যাতে তারা চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত না হয়। এ দিকে বেসরকারি ডায়গনস্টিক সেন্টারে চিকুনগুনিয়া টেস্ট করা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েই গেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, জাতীয় রোগ তত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে নিশ্চিত চিকুনগুনিয়া টেস্ট হওয়া সম্ভব নয়। চিকুনগুনিয়া সম্পর্কিত নিউলেটারে আইইডিসিআর একটি নির্দেশ জারি করেছে। আইইডিসিআর নির্দেশে বলেছে, ‘বিভিন্ন বেসরকারী ডায়গনস্টিক সেন্টারে চিকুনগুনিয়া পরীক্ষা করছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এসব পরীক্ষার ফল পজিটিভ হলে পরীক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা এবং রোগীর তথ্য নিবন্ধনের জন্য সংশ্লিষ্ট সব বেসরকারি ডায়গনস্টিক সেন্টারকে পজিটিভ হয়েছে এমন রক্তের নমুনা, রোগী নাম, বয়স, লিঙ্গ, ঠিকানা ও মোবাইলফোন নাম্বারসহ পরীক্ষার রিপোর্টের অনুলিপি জাতীয় রোগ তত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে প্রেরণের জন্য পরামর্শ দেয়া হলো।’ এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বলে স্বীকার করছেন। তিনি ঢাকা শহরে কী পরিমাণ চিকুনগুনিয়ার রোগী আছে এর নির্ণয় করবেন বলে মিডিয়ার সাথে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা সম্বন্ধে আমাদের কাছে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তাই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে কী পরিমাণ মানুষ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার। এ জন্য আমাদের প্রত্যেক আঞ্চলিক কর্মকর্তা ও কাউন্সিলরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এলাকাগুলোয় জরিপ শুরু করতে। আমরা আশা করছি খুব শিগগির এ বিষয়ে একটা ফল পাব।
No comments