মধ্যপ্রাচ্যে কূটনৈতিক ঝড়- কাতারের সঙ্গে সৌদিসহ ৭ দেশের সম্পর্কচ্ছেদ
উপসাগরীয়
আরব দেশ কাতারের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করেছে চার আরব দেশ। সৌদি আরব, মিশর,
বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত এ চারটি দেশ কাতারের বিরুদ্ধে উপসাগরীয়
অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অভিযোগ এনে সম্পর্কচ্ছেদ করেছে। এরপর সৌদি
আরবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে একই পথ ধরেছে ইয়েমেনের নির্বাসিত সরকার, লিবিয়ার
একটি পক্ষ ও মালদ্বীপ। আরব দেশগুলোর দাবি, মুসলিম ব্রাদারহুড, আইএস, আল
কায়েদা’সহ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের সমর্থন দিচ্ছে কাতার। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।
সৌদি রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা এসপিএ বলেছে, কাতারের সঙ্গে নিজেদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে সৌদি আরব। স্থল, সমুদ্র ও আকাশ পথের যোগাযোগও বন্ধ। কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিপদ থেকে জাতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখতে’ এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মিশরও নিজেদের আকাশসীমা ও বন্দর কাতারগামী পরিবহনের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি জানিয়েছে। অপরদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) দেশটিতে নিযুক্ত সকল কাতারি কূটনীতিককে দেশত্যাগের জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়েছে। আবু ধাবির অভিযোগ, সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে সমর্থন, অর্থায়ন ও আলিঙ্গন করছে দোহা। বাহরাইনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা বলেছে, বাহরাইনের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা হুমকিতে ফেলা ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কাতারের নাক গলানোর প্রতিবাদে দেশটির সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করেছে সরকার।
সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন আরব জোট বাহিনী ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়ছে। সেখানে রয়েছে কাতারি সেনা। এই জোট থেকেও কাতারি সেনাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে কাতারের চর্চা সন্ত্রাসবাদকে শক্তিশালী করে।
উল্লেখ্য, কয়েকদিন ধরেই কাতার ও তার প্রতিবেশী আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। মূলত, কাতারের আমীরের একটি ভুয়া বিবৃতি দিয়ে নতুন এই উত্তেজনার শুরু। ওই ভুয়া বক্তব্যের বিবরণীতে কাতারের আমীর ইরানের প্রশংসা করেন। বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে আরব রাষ্ট্রগুলোর শত্রুতা পোষণ করা উচিত নয়। তিনি মুসলিম ব্রাদারহুড সহ ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের প্রতিও সমর্থন ঘোষণা করেন।
ইরানকে নিজেদের সবচেয়ে বড় শত্রু মনে করে সৌদি আরব ও অন্যান্য আরব দেশ। তাই উপসাগরীয় আরব দেশ হয়েও এ ধরনের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে চার আরব দেশেই আল জাজিরা সহ কাতারের অর্থায়নে পরিচালিত সংবাদ মাধ্যমগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে কাতারি কর্তৃপক্ষ দাবি করে, তাদের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা হ্যাক হয়েছে। আর বার্তা সংস্থায় প্রকাশিত বক্তব্য ভুয়া।
তবে দৃশ্যত, আরব সংবাদ মাধ্যমের কাছে এ দাবি ধোপে টেকে নি। এর কয়েকদিন পর কাতারের আমীরের সঙ্গে ফোনালাপ করেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি।
অপরদিকে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূতের হ্যাক হওয়া ই-মেইলে দেখা যায়, ইসরাইলপন্থি একটি সংগঠনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ উঠাবসা। ওই থিংকট্যাংকের সঙ্গে আল জাজিরা সহ কাতার সংশ্লিষ্ট অনেক ইস্যুতে আলোচনা করেছেন রাষ্ট্রদূত।
এ সংবাদ প্রকাশের একদিনের মাথায় সম্পর্কচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিলো চারটি আরব দেশ।
এর আগেও মিশরের ব্রাদারহুড সমর্থিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে সেনাবাহিনী ক্ষমতাচ্যুত করলে মুরসির সমর্থনে এগিয়ে যায় কাতার। ব্রাদারহুডকে মিশর সহ আরবের বহু দেশে অবৈধ সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে কাতার ব্রাদারহুডের অনেক নেতাকে আশ্রয় দেয়। এমনকি ব্রাদারহুডের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসকেও সমর্থন দেয় কাতার। হামাসের প্রভাবশালী নেতা খালেদ মেশাল এখন কাতারেই থাকেন। ব্রাদারহুডকে সমর্থন দেয়া নিয়ে সৌদি আরব সহ চার আরব দেশ একবার কাতার থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূত সরিয়ে নেয়। পরে কুয়েতের মধ্যস্থতায় সব ঠিক হয়। বিনিময়ে কাতার ব্রাদারহুডের অনেক নেতাকে বহিষ্কার করে।
এবারের বিরোধ শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইরান নিয়ে, যাকে নিজেদের প্রধান শত্রু মনে করে আরব দেশগুলো। কিন্তু কাতারের প্রায় ১০ শতাংশ নাগরিক শিয়া, যা উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। কিন্তু বেশিরভাগ আরব দেশে শিয়ারা কোণঠাসা থাকলেও, কাতারে তারা অনেক স্বাধীনতা ভোগ করে। কাতারের অনেক ঐতিহ্যবাহী ব্যবসায়ী পরিবার শিয়া। সাম্প্রতিককালে ইরান নিয়ে রূঢ় মন্তব্য করা থেকে বিরত ছিল কাতার। এমনকি যেখানে ইরানের সঙ্গে কূটনীতিক সম্পর্ক নেই বেশিরভাগ আরব দেশের, সেখানে কুয়েতের আমীরের সঙ্গে আলাপ হয় ইরানের প্রেসিডেন্টের। এবারও কুয়েত চেষ্টা করেছিল কাতারের সঙ্গে অন্যান্য আরব দেশের মধ্যস্থতা করার। কিন্তু তা দৃশ্যত সফল হলো না।
এর আগে শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ বাহরাইনে যখন সুন্নি রাজপরিবারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন দানা বাঁধে, তখন প্রতিবেশী সুন্নি দেশ সৌদি আরব সৈন্য পাঠিয়ে সে আন্দোলন দমাতে সহায়তা করে। বাহরাইন এসব বিক্ষোভের জন্য ইরানকে দায়ী করে।
অপরদিকে মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়ায় ইরান সমর্থন দিচ্ছে শাসক প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে। অপরদিকে সৌদি নেতৃত্বাধীন আরব রাষ্ট্রগুলো বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে। কাতার এখন পর্যন্ত সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট হিসেবেই বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়ে আসছে। এছাড়া ইয়েমেনেও ইরান সমর্থিত শিয়া হুতি বিদ্রোহীদের তাড়াতে সৌদি সামরিক অভিযানের অংশ কাতার। তবে সম্পর্কচ্ছেদের কারণে কাতারি সেনাদের বহিষ্কার করেছে সৌদি আরব।
সম্পর্কচ্ছেদের কোনো যৌক্তিকতা নেই: কাতার
সৌদি আরবের নেতৃত্বে চার আরব দেশ মিশর, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রতিবেশী কাতারের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করা নিয়ে মুখ খুলেছে দেশটি। কাতার বলেছে, এই সম্পর্ক ছিন্ন করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
কাতারের বিরুদ্ধে একাধিক সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীকে আশ্রয় দেয়ার অভিযোগ এনেছে সৌদি আরব। বাকি দেশগুলোর সুরও মোটামুটি একই। সম্পর্ক ছিন্ন করার পাশাপাশি স্থল, নৌ ও আকাশ সীমান্তও বন্ধ করে দিয়েছে আরব দেশগুলো।
এ নিয়ে প্রথমদিকে চুপ থাকলেও পরে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে কাতার। দেশটির অর্থায়নে পরিচালিত টিভি স্টেশন আল জাজিরায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, এই ধরনের সিদ্ধান্ত কাতারের সার্বভৌমত্বের পরিপন্থি। দেশটি নিজ দেশের নাগরিক ও শ’ শ’ বাসিন্দাকে আশ্বস্ত করে বলেছে, এ পদক্ষেপের দরুন তাদের কোনো ক্ষতি হবে না।
কাতার সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এ পদক্ষেপের কোনো যৌক্তিকতা নেই। এটি এমন দাবি ও অভিযোগের প্রেক্ষিতে নেয়া যার কোনো সত্যতা নেই।’ বিবৃতিতে বলা হয়, এর কোনো প্রভাব সাধারণ নাগরিক ও বাসিন্দাদের প্রাত্যহিক জীবনে পড়বে না।
কড়া ভাষায় লেখা প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, ‘এর উদ্দেশ্য পরিষ্কার। সেটি হলো, এই রাষ্ট্রের ওপর নিজেদের অভিভাবকত্ব প্রয়োগ করা। এটি এমনিতেই রাষ্ট্র হিসেবে কাতারের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন।’
শান্ত থাকার আহ্বান টিলারসনের
কাতারের সঙ্গে আরব রাষ্ট্রগুলোর সম্পর্কচ্ছেদের পর দেশগুলোর প্রতি শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। উপসাগরীয় দেশগুলোকে তাদের মধ্যকার মতপার্থক্য মিটিয়ে ফেলার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। এ খবর দিয়েছে ফক্স নিউজ। অস্টেলিয়া সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিডনিতে এ প্রসঙ্গে কথা বলছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিসের সঙ্গে। টিলারসন বলেন, চলমান কূটনৈতিক সংকট আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রভাব ফেলবে বলে তিনি মনে করেন না। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা অবশ্যই সব পক্ষকে একসঙ্গে বসে মতপার্থক্য মিটিয়ে ফেলতে অনুপ্রাণিত করবো।
সৌদি রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা এসপিএ বলেছে, কাতারের সঙ্গে নিজেদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে সৌদি আরব। স্থল, সমুদ্র ও আকাশ পথের যোগাযোগও বন্ধ। কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিপদ থেকে জাতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখতে’ এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মিশরও নিজেদের আকাশসীমা ও বন্দর কাতারগামী পরিবহনের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি জানিয়েছে। অপরদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) দেশটিতে নিযুক্ত সকল কাতারি কূটনীতিককে দেশত্যাগের জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়েছে। আবু ধাবির অভিযোগ, সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে সমর্থন, অর্থায়ন ও আলিঙ্গন করছে দোহা। বাহরাইনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা বলেছে, বাহরাইনের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা হুমকিতে ফেলা ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কাতারের নাক গলানোর প্রতিবাদে দেশটির সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করেছে সরকার।
সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন আরব জোট বাহিনী ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়ছে। সেখানে রয়েছে কাতারি সেনা। এই জোট থেকেও কাতারি সেনাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে কাতারের চর্চা সন্ত্রাসবাদকে শক্তিশালী করে।
উল্লেখ্য, কয়েকদিন ধরেই কাতার ও তার প্রতিবেশী আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। মূলত, কাতারের আমীরের একটি ভুয়া বিবৃতি দিয়ে নতুন এই উত্তেজনার শুরু। ওই ভুয়া বক্তব্যের বিবরণীতে কাতারের আমীর ইরানের প্রশংসা করেন। বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে আরব রাষ্ট্রগুলোর শত্রুতা পোষণ করা উচিত নয়। তিনি মুসলিম ব্রাদারহুড সহ ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের প্রতিও সমর্থন ঘোষণা করেন।
ইরানকে নিজেদের সবচেয়ে বড় শত্রু মনে করে সৌদি আরব ও অন্যান্য আরব দেশ। তাই উপসাগরীয় আরব দেশ হয়েও এ ধরনের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে চার আরব দেশেই আল জাজিরা সহ কাতারের অর্থায়নে পরিচালিত সংবাদ মাধ্যমগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে কাতারি কর্তৃপক্ষ দাবি করে, তাদের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা হ্যাক হয়েছে। আর বার্তা সংস্থায় প্রকাশিত বক্তব্য ভুয়া।
তবে দৃশ্যত, আরব সংবাদ মাধ্যমের কাছে এ দাবি ধোপে টেকে নি। এর কয়েকদিন পর কাতারের আমীরের সঙ্গে ফোনালাপ করেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি।
অপরদিকে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূতের হ্যাক হওয়া ই-মেইলে দেখা যায়, ইসরাইলপন্থি একটি সংগঠনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ উঠাবসা। ওই থিংকট্যাংকের সঙ্গে আল জাজিরা সহ কাতার সংশ্লিষ্ট অনেক ইস্যুতে আলোচনা করেছেন রাষ্ট্রদূত।
এ সংবাদ প্রকাশের একদিনের মাথায় সম্পর্কচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিলো চারটি আরব দেশ।
এর আগেও মিশরের ব্রাদারহুড সমর্থিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে সেনাবাহিনী ক্ষমতাচ্যুত করলে মুরসির সমর্থনে এগিয়ে যায় কাতার। ব্রাদারহুডকে মিশর সহ আরবের বহু দেশে অবৈধ সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে কাতার ব্রাদারহুডের অনেক নেতাকে আশ্রয় দেয়। এমনকি ব্রাদারহুডের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসকেও সমর্থন দেয় কাতার। হামাসের প্রভাবশালী নেতা খালেদ মেশাল এখন কাতারেই থাকেন। ব্রাদারহুডকে সমর্থন দেয়া নিয়ে সৌদি আরব সহ চার আরব দেশ একবার কাতার থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূত সরিয়ে নেয়। পরে কুয়েতের মধ্যস্থতায় সব ঠিক হয়। বিনিময়ে কাতার ব্রাদারহুডের অনেক নেতাকে বহিষ্কার করে।
এবারের বিরোধ শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইরান নিয়ে, যাকে নিজেদের প্রধান শত্রু মনে করে আরব দেশগুলো। কিন্তু কাতারের প্রায় ১০ শতাংশ নাগরিক শিয়া, যা উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। কিন্তু বেশিরভাগ আরব দেশে শিয়ারা কোণঠাসা থাকলেও, কাতারে তারা অনেক স্বাধীনতা ভোগ করে। কাতারের অনেক ঐতিহ্যবাহী ব্যবসায়ী পরিবার শিয়া। সাম্প্রতিককালে ইরান নিয়ে রূঢ় মন্তব্য করা থেকে বিরত ছিল কাতার। এমনকি যেখানে ইরানের সঙ্গে কূটনীতিক সম্পর্ক নেই বেশিরভাগ আরব দেশের, সেখানে কুয়েতের আমীরের সঙ্গে আলাপ হয় ইরানের প্রেসিডেন্টের। এবারও কুয়েত চেষ্টা করেছিল কাতারের সঙ্গে অন্যান্য আরব দেশের মধ্যস্থতা করার। কিন্তু তা দৃশ্যত সফল হলো না।
এর আগে শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ বাহরাইনে যখন সুন্নি রাজপরিবারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন দানা বাঁধে, তখন প্রতিবেশী সুন্নি দেশ সৌদি আরব সৈন্য পাঠিয়ে সে আন্দোলন দমাতে সহায়তা করে। বাহরাইন এসব বিক্ষোভের জন্য ইরানকে দায়ী করে।
অপরদিকে মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়ায় ইরান সমর্থন দিচ্ছে শাসক প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে। অপরদিকে সৌদি নেতৃত্বাধীন আরব রাষ্ট্রগুলো বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে। কাতার এখন পর্যন্ত সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট হিসেবেই বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়ে আসছে। এছাড়া ইয়েমেনেও ইরান সমর্থিত শিয়া হুতি বিদ্রোহীদের তাড়াতে সৌদি সামরিক অভিযানের অংশ কাতার। তবে সম্পর্কচ্ছেদের কারণে কাতারি সেনাদের বহিষ্কার করেছে সৌদি আরব।
সম্পর্কচ্ছেদের কোনো যৌক্তিকতা নেই: কাতার
সৌদি আরবের নেতৃত্বে চার আরব দেশ মিশর, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রতিবেশী কাতারের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করা নিয়ে মুখ খুলেছে দেশটি। কাতার বলেছে, এই সম্পর্ক ছিন্ন করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
কাতারের বিরুদ্ধে একাধিক সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীকে আশ্রয় দেয়ার অভিযোগ এনেছে সৌদি আরব। বাকি দেশগুলোর সুরও মোটামুটি একই। সম্পর্ক ছিন্ন করার পাশাপাশি স্থল, নৌ ও আকাশ সীমান্তও বন্ধ করে দিয়েছে আরব দেশগুলো।
এ নিয়ে প্রথমদিকে চুপ থাকলেও পরে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে কাতার। দেশটির অর্থায়নে পরিচালিত টিভি স্টেশন আল জাজিরায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, এই ধরনের সিদ্ধান্ত কাতারের সার্বভৌমত্বের পরিপন্থি। দেশটি নিজ দেশের নাগরিক ও শ’ শ’ বাসিন্দাকে আশ্বস্ত করে বলেছে, এ পদক্ষেপের দরুন তাদের কোনো ক্ষতি হবে না।
কাতার সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এ পদক্ষেপের কোনো যৌক্তিকতা নেই। এটি এমন দাবি ও অভিযোগের প্রেক্ষিতে নেয়া যার কোনো সত্যতা নেই।’ বিবৃতিতে বলা হয়, এর কোনো প্রভাব সাধারণ নাগরিক ও বাসিন্দাদের প্রাত্যহিক জীবনে পড়বে না।
কড়া ভাষায় লেখা প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, ‘এর উদ্দেশ্য পরিষ্কার। সেটি হলো, এই রাষ্ট্রের ওপর নিজেদের অভিভাবকত্ব প্রয়োগ করা। এটি এমনিতেই রাষ্ট্র হিসেবে কাতারের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন।’
শান্ত থাকার আহ্বান টিলারসনের
কাতারের সঙ্গে আরব রাষ্ট্রগুলোর সম্পর্কচ্ছেদের পর দেশগুলোর প্রতি শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। উপসাগরীয় দেশগুলোকে তাদের মধ্যকার মতপার্থক্য মিটিয়ে ফেলার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। এ খবর দিয়েছে ফক্স নিউজ। অস্টেলিয়া সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিডনিতে এ প্রসঙ্গে কথা বলছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিসের সঙ্গে। টিলারসন বলেন, চলমান কূটনৈতিক সংকট আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রভাব ফেলবে বলে তিনি মনে করেন না। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা অবশ্যই সব পক্ষকে একসঙ্গে বসে মতপার্থক্য মিটিয়ে ফেলতে অনুপ্রাণিত করবো।
No comments