অগ্নিশর্মা মমতাকে দেখেই দৌড় বিক্ষোভকারীদের!
তিনি যখন বিরোধী দলনেত্রী ছিলেন, তখন সিপিএমের ক্যাডারদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তিনি রুখে দাঁড়িয়েছেন বারবার৷ এখন তিনি মুখ্যমন্ত্রী৷ সোমবার মিরিকে তাকেই ফের দেখা গেল অগ্নিকন্যার মেজাজে৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কালো পতাকা দেখাতে এসে তার অগ্নিশর্মা মেজাজ দেখে কার্যত পালালেন বিমল গুরুংয়ের সমর্থকরা! তখন বিকেল পাঁচটা ছুঁই ছুঁই৷ মিরিকে ঢোকার কিছুক্ষণ আগে সৌরিনি বাজারে আচমকাই মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ের সামনে এসে হাজির জনা তিরিশেক মোর্চা কর্মী৷ প্রত্যেকের হাতেই ছিল কালো পতাকা৷ মুখে ‘গো ব্যাক মমতা’ স্লোগান৷ মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীদের হাত তখন সার্ভিস রিভলভারে৷ এমন সময় সবাইকে অবাক করে গাড়ির দরজা খুলে নেমে পড়লেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই৷ মোর্চা সমর্থকদের চোখ রাঙিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘আ যাও আ যাও’৷ তা শুনেই দে দৌড় মোর্চা কর্মীদের৷ মুখ্যমন্ত্রীর পাঁচ দিনের পাহাড় সফরকে কেন্দ্র করে বিমল গুরুংদের হুঙ্কারে কয়েক দিন ধরেই উত্তেজনার পারদ চড়ছিল দার্জিলিংয়ে৷ মুখ্যমন্ত্রীর সামনে মোর্চা বিক্ষোভ দেখাতে পারে, এই আশঙ্কা থেকে গোটা পাহাড়ে দুই হাজার পুলিশকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে৷ আধা-সামরিক বাহিনী রয়েছে ৯ কোম্পানি৷ তৃণমূল সমর্থকরা বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে দলীয় পাতাকা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে অভিবাদন জানিয়েছেন৷ গুরুংদের ঘোষিত ‘ব্ল্যাক ডে’র পাল্টা হিসেবে ঝলমলে এলইডি আলোয় মিরিক শহরকে সাজিয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন৷ এর উল্টো দিকে মোর্চা কী করেছে? মুখ্যমন্ত্রী এসে পৌঁছানোর আগেই মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুতুল জ্বালানো হয়৷ দার্জিলিংয়ের সিংমারি থেকে চকবাজার পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিল বার করেন মোর্চা নেতারা৷ তার পর বিমল গুরুং পাহাড়ের বাসিন্দাদের অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধের প্রস্ত্ততি নিতে নির্দেশ দেন৷
তবে বড় কোনও গোলমাল কোথাও হয়নি৷ কী প্রতিক্রিয়া মুখ্যমন্ত্রীর? তিনি যা বলেছেন, তাতে ২০১৩ সালের ফের পাহাড়ে রাজ্য সরকার বনাম মোর্চার মধ্যে যেন ‘যুদ্ধ’ পরিস্থিতি৷ গুরুংদের উপর পাল্টা চাপ সৃষ্টি করতে জিটিএর স্পেশ্যাল অডিট করার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা৷ তাতে অনিয়ম ধরা পড়লে জেলে পোরার হুমকি দিয়েছেন মমতা৷ বলেছেন, ‘জিটিএতে চুরি করলে সচিবকেও ছাড়ব না৷ কোচবিহারের চেয়ারম্যানকেও আমি ছাড়িনি৷’ তার তর্জন, ‘কিছু লোক ওকে ভগবান মনে করে৷ কিন্ত্ত উনি তো শয়তান৷ কিছু লোক আজ কালো পতাকা দেখাতে এসেছিল, আমি যেই বললাম এসো, দেখি ছুটে পালাল৷’ গুরুংকে মমতার হুঁঁশিয়ারি, ‘যাদের বিরুদ্ধে মদন তামাং হত্যাকাণ্ডের মামলা ঝুলছে, চাইলেই সরকার তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে৷ আমরা রাজনৈতিক ভদ্রতার কারণে সে সব করছি না৷’ পাশাপাশি তার অভিযোগ, আসন্ন জিটিএ ভোটের দিকে তাকিয়েই গোর্খাল্যান্ডের দাবি ছেড়ে বাংলা ভাষাকে ইস্যু করে মিথ্যা প্রচারে নেমেছে মোর্চা৷ মমতার কথায়, ‘আমি কখনও বলিনি বাংলা কম্পালসারি করতে৷ পাহাড় এবং তরাই ডুয়ার্সে চতুর্থ ঐচ্ছিক ভাষা হিসেবে বাংলাকে রাখতে বলেছি৷’ মোর্চা নেতা বিনয় তামাংয়ের অবশ্য যুক্তি, ‘কুশপুতুল জ্বালানো কিংবা কালো পতাকা দেখানো গণতান্ত্রিক আন্দোলনেরই অংশ৷ রাজ্য সরকারের কিছু সিদ্ধান্ত আমাদের পছন্দ নয়৷ আমরা তো পুলিশ কিংবা মুখ্যমন্ত্রীকে লক্ষ করে বোমা মারছি না৷’ মিরিকের আলে প্রাঙ্গণে সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠান থেকে এদিন স্থানীয় মানুষের জন্য একগুচ্ছ উন্নয়ন প্রকল্প ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তার মধ্যে মিরিকের রাস্তা সংস্কার খাতে ১২ কোটি টাকার অনুমোদন, কুয়াশা ঢাকা মিরিকের রাস্তায় হাইমাস্ট লাইট বসানোর জন্য ১০ কোটি, নিকাশি খাতে ১০ কোটি এবং মিরিক লেক সৌন্দর্যায়নেও ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে৷ এ ছাড়া মিরিকের জন্য একটি পৃথক দমকল কেন্দ্র এবং ৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি জল প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সূত্র: এই সময়
No comments