ঐশীকে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন
রাজধানীর চামেলীবাগে পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যা মামলায় তাদের মেয়ে ঐশী রহমানকে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ঐশীকে পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ডও দেয়া হয়েছে। আলোচিত এ মামলায় ডেথ রেফারেন্স ও আসামির আপিল শুনানি করে সোমবার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। অন্যদিকে ঐশীর বন্ধু মিজানুর রহমান রনিকে বিচারিক আদালতের দেয়া দুই বছরের কারাদণ্ডের রায় হাইকোর্টেও বহাল রাখা হয়েছে। তবে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন ঐশীর আইনজীবী সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী। রায় ঘোষণার সময় আদালত দণ্ড কমানোর পাঁচটি কারণ উল্লেখ করেন।
আদালত বলেন, পাঁচটি কারণে ঐশীর মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন দেয়া হয়েছে।
এক. হত্যাকাণ্ডের সময় ঐশী মাদকাসক্ত ছিলেন। ১৪ বছর বয়স থেকেই তিনি সিসা, ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিল এসব নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করতেন।
দুই. ঐশী বংশগতভাবে মানসিক রোগী। তার চাচা-দাদি-খালা অনেকের মাঝেই মানসিক রোগের লক্ষণ আছে, যা তার মাঝেও ছোটবেলা থেকে বিদ্যমান।
তিন. হত্যাকাণ্ডের দ্বিতীয় দিনে তিনি আত্মসমর্পণ করেন। এতে বোঝা যায়, তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
চার. ঘটনার সময় তার বয়স ছিল ১৯ বছর। ঐশীর বাবা-মা দু’জনেই সন্তানের লালনপালন বিষয়ে উদাসীন ছিলেন। এ বয়সের একটি সন্তানকে তার বাবা-মা যথাযথ দেখভাল করেননি। যে কারণে ছোটবেলা থেকেই তিনি স্নেহবঞ্চিত হয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
পাঁচ. আগের কোনো ক্রিমিনাল অ্যাকটিভিটি নেই। এই পাঁচ কারণ আমলে নিয়ে আদালত ঐশীর মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এর আগে গত ৭ মে হত্যা মামলায় ডেথ রেফারেন্স ও দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে ঐশী রহমানের করা আপিলের ওপর শুনানি শেষ হয়। আদালত সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগের বাসা থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (পলিটিক্যাল শাখা) ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন তাদের মেয়ে ঐশী রহমান গৃহকর্মী সুমিকে নিয়ে রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করেন। ২০১৪ সালের ৯ মার্চ ঐশীসহ ৪ জনকে অভিযুক্ত করে পৃথক দুটি চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করে পুলিশ। গত বছরের ৬ মে ঐশীসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে চার্জ (অভিযোগ) গঠন করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত। দুটি খুনের জন্য পৃথক দুটি চার্জ গঠন করা হয়। ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর এ মামলার বিচার শেষে ঐশী রহমানকে মৃত্যুদণ্ড দেন ঢাকার তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। দুটি অপরাধের জন্য আলাদা আলাদা করে ঐশীকে দু’বার ফাঁসি ও দু’বারে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। মামলার অন্য আসামি ঐশীর বন্ধু মিজানুর রহমান রনিকে খুনের ঘটনার পর ঐশীদের আশ্রয় দেয়ার অপরাধে দু’বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
No comments