বন্যায় সিলেট অঞ্চলে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত
পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির কারণে সিলেটসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা, কুশিয়ারা, মুন, খোয়াই ও ধলাই নদীতে পানি বিপদসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে এ পাঁচ নদীর অববাহিকায় থাকা শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ওসমানীনগরের ১৮ গ্রামের অবস্থা খুবই খারাপ। কুশিয়ারা বাঁধ ভেঙে এসব গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এদিকে আবহাওয়া বিভাগ (বিএমডি) জানিয়েছে, লঘু চাপের বর্ধিতাংশ ভারতের বিহার থেকে উত্তর বঙ্গোপসাগর হয়ে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে অবস্থান করছে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ঢাকা, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগ পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। এ কারণে এসব এলাকায় বৃষ্টিপাত বেড়েছে। বিশেষ করে সোমবার ঢাকাসহ আশপাশ এলাকায় সারা দিনই কমবেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর বাইরে সিলেট এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘ভারতের ত্রিপুরা, আসাম ও মেঘালয় অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। পাশাপাশি সিলেট অঞ্চলেও শনি এবং রোববার প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। ভারতের পাহাড়ি ঢলের পানি ভাটিতে নামছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সিলেট অঞ্চলের বৃষ্টির পানি। এ দুই পানি সুরমা, কুশিয়ারাসহ অন্য নদী দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এটাই বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।’ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের এক বুলেটিনে দেখা যায়, পাঁচ নদীর ৯ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টা ধরে এসব নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা, সুরমা ও কুশিয়ারা নদ-নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টা তা অব্যাহত থাকবে। তবে দু’একদিনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, সুরমা নদী কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৭ মিটার ওপরে আছে। কুশিয়ারার পানি অমলশীদ, শেওলা শেরপুর-সিলেট পয়েন্টে বিপদসীমার ওপরে আছে। এর মধ্যে অমলশীদে সর্বোচ্চ ১০৩ সেন্টিমিটার ওপরে বইছে। মনু নদীর পানি মনু রেলওয়ে ব্রিজ ও মৌলভীবাজার পয়েন্টে বিপদসীমার ওপরে আছে। এর মধ্যে মনু ব্রিজ এলাকায় ১ মিটার ওপরে বইছে। খোয়াই নদী বাল্লা ও হবিগঞ্জে এবং ধলাই নদী কমলগঞ্জে বিপদসীমার ওপরে আছে। এর মধ্যে হবিগঞ্জে ১৪০ সেন্টিমিটার ওপরে বইছে খোয়াই নদীর পানি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন জানান, শনি ও রোববার সিলেট এলাকায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। তবে সোমবার তা অনেকটা কমে যায়। মেঘনা বেসিনে ১৭ স্টেশনে বৃষ্টিপাত পরিমাপ করা হয়। এর মধ্যে ৮ স্টেশনে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা গেছে। এ তথ্য থেকে আশা করা যায়, দু’একদিন পর নদ-নদীতে পানির প্রবাহ কমবে। এ প্রক্রিয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটবে। ওসমানীনগর (সিলেট) প্রতিনিধি জানান, ওসমানীনগরে কুশিয়ারা বাঁধ ভেঙে ১৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সোমবার ভোরে উপজেলার সাদীপুর ইউপির লামা তাজপুর জব্বার মিয়ার বাড়ির পাশে ডাইকের প্রায় ৫০ ফুট এলাকা কুশিয়ারার নদীর পানির প্রবল সে াতে ভেঙে গিয়ে গ্রামগুলো প্লাবিত হয়। এর ফলে সাদীপুর ইউপির ১নং ওয়ার্ডের সুরিকোনা, ইসলামপুর,
দক্ষিণকালনীচর, উত্তরকালনীচর, পূর্ব কালনীচর, ২নং ওয়ার্ডেও সুন্দিখলা, সম্মানপুর, মোকামপাড়া, রহমতপুর, চাতলপাড়, পূর্ব সুন্দিখলা, সম্মানপুর, ৭নং ওয়ার্ডের সাদীপুর, সৈয়দপুর ও ৮নং ওয়ার্ডের লামা তাজপুর, চরা তাজপুর, পূর্ব তাজপুর, টুকরাগাঁও গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার অধিবাসী দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। গত শীত মৌসুমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকাভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবুল হোসেন এন্টারপ্রাইজের অনিয়মের কারণে কুশিয়ারা নদীর পানির চাপের কারণে বাঁধ ভেঙে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন সাদীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রব ও এলাকাবাসী। অনিয়মের বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল লতিফ বলেন, ‘আমি এখানে যোগদান করেছি বেশি দিন হয়নি। সাদীপুর ইউপির চেয়ারম্যানের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে কাজের বিল না দেয়ার কথা নির্বাহী প্রকৌশলী ও আমাকে জানিয়েছেন।’ এদিকে ওসমানীনগরের সাদীপুরে কুশিয়ারা বাঁধ ভেঙে যাওয়ার খবর পেয়ে সোমবার দুপুরে ভাঙনস্থল পরিদর্শ করেছেন সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল লতিফ, ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান ও সাদীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রব।
No comments