কোরাম ছাড়াই দুই মাস পার
শুধু একজন সদস্যের অভাবে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা (আইডিআরএ) কার্যত মুখ থুবড়ে পড়তে বসেছে। সব কিছু ঠিকঠাক। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সব প্রক্রিয়াও প্রায় সম্পন্ন। কিন্তু জনপ্রশাসন থেকে ফাইল আর নড়ছে না। ফলে দু’মাসেও সদস্য নিয়োগ চূড়ান্ত হয়নি। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সেবাপ্রার্থীরা ন্যায়বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ সুবাদে গ্রাহকের প্রাপ্য টাকা আত্মসাৎকারী বীমা কোম্পানিগুলো আছে বেশ খোশ আমেজে। ভুক্তভোগীদের অনেকে আশঙ্কা করছেন যোগসাজশর কারণে স্বার্থান্বেষী মহল গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ফাইলটি আটকে রেখেছে। জানা গেছে, বীমা আইন অনুসারে একজন চেয়ারম্যান এবং চারজন সদস্য নিয়ে ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটি (আইডিআরএ) কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়। আর প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান শেফাক আহমেদের মেয়াদ শেষ হয়েছে ৬ এপ্রিল। ওই দিন প্রতিষ্ঠানটির সদস্য গোকুল চন্দ্র দাসকে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়। এর এক মাস আগে দুই সদস্য জুবের আহমেদ খান এবং কুদ্দুস খানের মেয়াদ শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট আছেন মুরশিদ আলম নামে এক সদস্য। অর্থাৎ বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং একজন সদস্য রয়েছেন বোর্ডে। এ কারণে কোনো বোর্ডসভা করতে পারছে না সংস্থাটি। এতে করে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে এক ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থায় সেবাপ্রার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্ত আটকে আছে। এতে করে ভুক্তভোগী বীমা গ্রহীতা ও বিচারপ্রার্থীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে যাদের ক্ষতিপূরণের টাকা আদায়ের বিষয়ে বোর্ড সভায় জরুরি সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন তাদের পুরো প্রক্রিয়া থেমে আছে। আইডিআরের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সুনাম রয়েছে। কিন্তু কোরাম না থাকায় অফিসে সময় কাটানো ছাড়া বর্তমানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ করতে পারছেন না। সূত্র জানায়, দেশের আর্থিক খাতে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান বীমা শিল্প। গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা, অবৈধভাবে অর্থ খরচ, চেক জালিয়াতি, ভুয়া এজেন্ট, ঋণের বিপরীতে ভুয়া ইন্স্যুরেন্স গ্যারান্টি, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে অযোগ্য ব্যক্তি, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ জাল, অতিরিক্ত কমিশন, বাকি ব্যবসাসহ সব ধরনের দুর্নীতি আর অনিয়ম এ খাতের নিয়মিত ঘটনা। এ অবস্থায় দুর্নীতি বন্ধসহ জনদুর্ভোগ ও হয়রানি লাঘবে আইডিআরএ গঠন করা হলেও দক্ষ জনবলের অভাবে এ খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো যাচ্ছে না। এখন আবার ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে বোর্ড সভার কোরাম সংকট। এভাবে প্রতিষ্ঠানটিকে একরকম পঙ্গু বানিয়ে রাখা হয়েছে। অথচ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে যেন ভাবার কেউ নেই। প্রসঙ্গত, কোরাম পূরণের জন্য নতুন সদস্য হিসেবে মে মাসের শুরুতে কমল কুমার সরকার নামে একজনের জীবনবৃত্তান্তসহ অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সারসংক্ষেপ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। নিয়মানুসারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর কথা। অথচ এক মাসের বেশি সময় পার হলেও তা অনুমোদনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
No comments