নেপালের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করছে চীন
নেপালের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের জন্য চীনা একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে স্থলবেষ্টিত দেশটির সরকার। নেপালের জ্বালানিমন্ত্রী জনার্ধন শর্মা রোববার চায়না গেঝুবা গ্রুপ কর্পোরেশনের (সিজিজিসি) সঙ্গে চুক্তি করেন। চুক্তির আওতায় ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বুধি-গান্ধকি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫০ কোটি ডলার বা প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। খবর এএফপির। নদীবেষ্টিত নেপালের পাহাড়ি নদী ব্যবস্থাকে কাজে লাগাতে পারলে দেশটি বিদ্যুৎ উৎপাদনের কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে। তবে দীর্ঘদিন রাজনৈতিক সংঘাতে পর্যুদস্ত দেশটি ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নেপালে ৮৩ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। বর্তমানে এর মাত্র ২ ভাগ উৎপাদিত হচ্ছে। অনুন্নত নেপালে বিনিয়োগ না থাকায় এবং বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা অপ্রতুল হওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি। এ কারণে দেশটিতে শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেনি এবং বিদেশি বিনিয়োগও আসেনি। ২০০৬ সালে দেশটিতে মাওবাদী বিদ্রোহের অবসান এবং তার দুই বছর পর রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হলেও দেশটিতে রাজনৈতিক সংঘাত লেগেই আছে। নেপালে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছে ভারত ও চীন। দুটি দেশই নেপালের বড় বড় অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। সিজিজিসি নেপালে বর্তমানে তিনটি ছোট জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করছে। এছাড়া আরও একটির নির্মাণ শেষ করেছে। চীনের সহায়তায় নেপাল সরকার ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করছে। অন্যদিকে ভারতও নেপালে দুটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
প্রতিটি প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০০ কোটি ডলার করে। কয়েক বছর বিলম্বের পর চলতি বছরের শেষ নাগাদ এর কাজ শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারতবিরোধিতা প্রবল : ভারতীয় কূটনীতিবিদদের একাংশ মনে করে, নেপালে দীর্ঘদিনের অনুন্নয়ন, বেকারত্ব, নাজেহাল পরিকাঠামোর ফলে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তার মুখ সুকৌশলে একদিকে ঘোরানোর প্রয়োজন ছিল। দু’বছর মহাদেশীয়দের বিক্ষোভ সেই জমে থাকা বারুদে দেশলাই কাঠি জ্বেলে দেয়। আর তখনই বড় আকারে খেলায় নামে চীন। নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে চীনের ওপর দৈনন্দিন নির্ভরশীলতার সেই শুরু। নেপালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরি করতে ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দান থেকে শুরু করে পরিকাঠামো, জলবিদ্যুৎ, রেল, সড়ক নির্মাণের মতো বিরাট চীনা প্রকল্পগুলো রমরম করে চলছে। কাঠমান্ডু থেকে পোখরা যাওয়ার ২০০ কিলোমিটার সড়কপথে চীনের প্লাকার্ড দেয়া ছাউনিতে চলছে উন্নয়ন যজ্ঞ। সম্প্রতি প্রথমবারের মতো চীন-নেপাল সামরিক মহড়াও হয়েছে। ভারতীয় দূতাবাস সূত্রের বরাতে আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘চীন এখানে যা করছে তা নিছক মানবপ্রীতির খাতিরে করছে- এমন কেউই বলবে না। এর পেছনে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক, কৌশলগত উদ্দেশ্য রয়েছে।’ ভারতের আরও শঙ্কার কারণ, কেপি ওলির নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (ইউনিফাইড মার্কসিস্ট-লেনিনিস্ট) কেন্দ্রীয় নির্বাচনে নেপাল কংগ্রেস এবং মাওবাদীদের কাছে হেরে গেলেও চলতি স্থানীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনে খুব ভালো ফল করছে। তাদের জনসভায় ভিড়ও হচ্ছে যথেষ্ট। সেই জনসভায় ভারতবিরোধিতার স্বর প্রচ্ছন্ন নয়। ওলি’র নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ই চীনের সঙ্গে ব্যবসা ও ট্রানজিটবিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
No comments