ভারতের সেই বিচারপতি জেলে
কলকাতা
হাইকোর্টের বহুল বিতর্কিত সাবেক বিচারক সিএস কারনানের জামিন আবেদন বাতিল
করে তাকে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের
বিচারকদের সঙ্গে সম্প্রতি তার তিক্ত সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে তার
বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ ওঠে। মে মাসে তার বিরুদ্ধে ৬ মাসের জেল দেয়
সুপ্রিম কোর্ট। তারপর থেকেই বিচারপতি সিএস কারনান পলাতক ছিলেন। কিন্তু
মঙ্গলবার তাকে তামিলনাড়ুর কোয়েমবাটোর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার তাকে
গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। বুধবার সুপ্রিম কোর্টে জামিন আবেদন ও
শাস্তি স্থগিত করার আবেদন করেন তিনি। সুপ্রিম কোর্ট তার আবেদন
প্রত্যাখ্যান করেছে। সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন একটি বেঞ্চের বিচারক ডি
ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারক সঞ্জয় কিষাণ কাউল বলেছেন, ওই বিচারকের বিরুদ্ধে ৬
মাসের জেল ঘোষণা করেছেন ৭ জন বিচারকের বেঞ্চ। আমরা ওই আদেশ স্থগিত করতে
পারি না। বিচারক চন্দ্রচূড় জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যান করে বলেন, সরি,
কোনোভাবেই পারছি না। অভিযুক্ত বিচারক কারনানের আইনজীবী ম্যাথিউ জে
নাদুমপারা আদালতে সাবেক এই বিচারকের জামিন আবেদন করেন। তিনি আবেদনে বলেন,
ফের আদালত খোলা পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুরের সব ক্ষমতা আছে এই
আদালতের এবং তা মঞ্জুর করাও উচিত। কিন্তু তা বানচাল হয়ে যায়। ফলে সাবেক এই
বিচারকের স্থান হওয়ার কথা এখন পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার প্রেসিডেন্সি
জেল। উল্লেখ্য, ২০১১ সালের নভেম্বরে ন্যাশনাল কমিশন ফর শিডিউলড ক্যাস্টস
(এনসিএসসি)-এর কাছে একটি চিঠি লেখেন বিচারক সিএস কারনান। তাতে তিনি মাদ্রাজ
হাই কোর্টের অন্য বিচারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। বলেন, তাদের কাছে তিনি
গোষ্ঠীগত হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তিনি বলেন, ২০০৯ সালের এপ্রিল থেকে তিনি
এমন অবমাননার শিকার হচ্ছেন এবং তা চলছেই। একজন বিচারক তাকে পা দিয়ে স্পর্শ
করেছেন এমন একটি ঘটনার পর তিনি মুখ খোলেন। এতে আদালত চত্ত্বরে উত্তেজনার
সৃষ্টি হয়। ফলে এনসিএসসি’র চেয়ারম্যান পি এল পুনিয়া ওই চিঠিটি পঠিয়ে দেন
তখনকার ভারতের প্রধান বিচারপতি এস এইচ কাপাদিয়ার কাছে। এ ছাড়া ২০১৩ সালের
জুনে বিচারক সিএস কারনান বিয়ে নিয়ে একটি বিতর্কিত রায় দেন। তিনি বলেন,
বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে বিবাহ পূর্ববর্তী শারীরিক সম্পর্ককে বিয়ে হিসেবে গণ্য
করা যাবে। তিনি বলেন, একজন যুবকের বয়স যদি ২১ বছর বা তার বেশি হয়, একজন
যুবতীর বয়স যদি ১৮ বছর বা তার বেশি হয় তাহলে তারা সিভিল ফোরাম হিসেবে থাকতে
পারবে। ওই যুবতী স্ত্রীর মর্যাদা দাবি করতে পারবে। এ নিয়ে তীব্র সমালোচনার
মুখে বিচারক কারনান বলেন, তিনি কোনো ধর্ম বা ভারতীয় নাগরিকের বিরুদ্ধে নয় এ
রায়। সুনির্দিষ্ট কিছু বিচারকের নিয়োগ নিয়ে মাদ্রাজ হাই কোর্টের ডিভিশন
বেঞ্চে পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন (পিআইএল) বিষয়ক শুনানি চলছিল। সেখানে
বিচারপতি সিএস কারনান প্রবেশ করে বিতর্কের সৃষ্টি করেন। তিনি উন্মুক্ত ওই
আদালতে বলেন, এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সুষ্ঠু নয়। তিনি নিজের নামের একটি
এফিডেভিট করাতে চান। তার এ আচরণের নিন্দা জানায় সুপ্রিম কোর্ট। ওই সময়
মাদ্রাজ হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি রাজেশ কুমার আগরওয়াল বিষয়টি নিয়ে
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি পি সাথাসিবামের কাছে চিঠি লেখেন। তিনি
বিচারপতি কারনানকে অন্য কোনো হাইকোর্টে স্থানান্তরের সুপারিশ করেন। ওদিকে
সাথাসিবাম ও আগরওয়ালকে উল্টো চিঠি লেখেন বিচারক কারনান। তাতে তিনি বলেন,
তিনি মাদ্রাজ হাই কোর্টেই থাকবেন। থেকে তিনি প্রমাণ করবেন তার অভিযোগ। তিনি
এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতি ও কোর্টের অন্য বিচারকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির
অভিযোগ আনেন। একই সঙ্গে তিনি তথ্য পাওয়ার অধিকার বিষয়ক জয়েন্ট
রেজিস্ট্রারের কাছেও চিঠি লেখেন। তাতে জানান জেলা জজ নিয়োগ প্রক্রিয়ায়
অনিয়ম হয়েছে। ভারতের প্রেসিডেন্টের কাছেও একটি অভিযোগে এ বিষয়ে বিস্তারিত
লেখেন তিনি। ওদিকে আবার মাদ্রাজ হাই কোর্টের ২০ জন বিচারক যৌথভাবে ভারতের
প্রধান বিচারপতির কাছে একটি চিঠি লেখেন বিচারক সিএস কারনানকে বদলী করতে।
২০১৪ সালের আগস্টে মাদ্রাজ হাই কোর্টে প্রধান বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান
বিচারক কাউল। এরপর থেকেই অনেক বিচারকের বিরুদ্ধে একা অভিযোগ সামনে এনে লড়াই
চালিয়ে যেতে থাকেন কারনান। ২০১৫ সালে তিনি আরো একটি ভয়াবহ অভিযোগ আনেন।
বলেন, নিজের চেম্বারে একজন ইন্টার্নকে যৌন হয়রান করেছেন অন্য একজন বিচারক।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিচারক সিএস কারনানকে বদলি করা হয় কলকাতা হাই
কোর্টে। এ বছর ২৩ শে জানুয়ারি তিনি একটি খোলা চিঠি লেখেন প্রদানমন্ত্রীর
উদ্দেশে। তাতে তিনি সুপ্রিম কোর্ট ও হাই কোর্টের বর্তমান ও অবসরপ্রাপ্ত ২০
জন বিচারকের নাম উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনেন। ৮ই মে
তিনি ভারতের প্রধান বিচারপতি জেএস কেহার ও সুপ্রিম কোর্টের অন্য ৭ জন
বিচারকের বিরুদ্ধে ৫ বছরের জেল ঘোষণা করেন। জবাবে ৯ই মে কলকাতা হাই কোর্টের
এই বিচারকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার দায়ে ৬ মাসের জেল ঘোষণা করে সুপ্রিম
কোর্ট।
No comments