রং মেখে চকচকে লক্কড়ঝক্কড় লঞ্চ
ভাঙাচোরা লঞ্চে চলছে মেরামতযজ্ঞ। এরপর দেয়া হচ্ছে রং-তুলির প্রলেপ। পরে শিল্পীর হাতে লেখা হচ্ছে লঞ্চের নাম। ঈদ সামনে রেখে এভাবে লক্কড়ঝক্কড় লঞ্চ হয়ে উঠছে চকচকে। এসব লঞ্চই নামানো হচ্ছে ঈদে যাত্রী পরিবহনের জন্য। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানীর সদরঘাট দিয়ে যাতায়াত করবেন দক্ষিণাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ। কিন্তু নতুন চেহারার ওইসব পুরনো লঞ্চে যাত্রী পরিবহন করায় ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে। সরেজমিন কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন ডকইয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। এ ব্যাপারে নৌপরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমডোর সৈয়দ আরিফুল ইসলাম বলেন, মেরামত বা রঙ যাই করুক না কেন, ফিটনেস ও রেজিস্ট্রেশন নেই এমন লঞ্চে যাত্রী পরিবহন করতে দেয়া হবে না। এজন্য পরিচালনা করা হবে মোবাইল কোর্ট। তিনি বলেন, যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত ও যাত্রী দুর্ভোগ কমাতে আমরা কাজ করছি। লঞ্চে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সামগ্রী মজুদ রাখতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রোববার সরেজমিন দেখা গেছে, বুড়িগঙ্গার তীরে চরকালীগঞ্জ ও চরমিরেরবাগ এলাকার ডকইয়ার্ডগুলোতে ভাসমান অবস্থায় যাত্রীবাহী প্রায় ১৫ থেকে ২০টি লঞ্চের শেষ পর্যায়ের ফিনিশিং কাজ চলছে। মেঝে ও কার্নিশে লাগানো হচ্ছে লোহার পাত। এ ছাড়াও বেশ কয়েকটি লঞ্চের নিচের অংশও মেরামত করতে দেখা গেছে। কেরানীগঞ্জের রহমানের ডকইয়ার্ডে এমভি সোনার তরী লঞ্চের মেরামতের কাজ করতে দেখা যায়। পাশাপাশি রং দিয়ে এই লঞ্চের চেহারা বদলানো হচ্ছে। এমভি ঈগল-৩ ও ৪ মেরামতের কাজ শেষ পর্যায়ে। দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য রং দিয়ে ফিনিশিং দেয়া হচ্ছে। এমভি রাজদূত, এমভি রান নিচের তলা মেরামত করা হচ্ছে। এ ছাড়া অগ্রদূত প্লাস, এমভি যুবরাজ, এমভি দ্বীপরাজ, প্রিন্স আওলাদসহ বেশ কয়েকটি ফিটনেসবিহীন লঞ্চ ঘষামাজা করে চকচকে করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডকইয়ার্ডের মালিক বলেন, ঈদে যাত্রীদের ভিড় থাকায় লঞ্চের চাহিদাও বেড়ে যায়। তাই প্রতি বছরই পুরনো লঞ্চগুলো এভাবে মেরামত করা হয়। তা ছাড়া যাত্রী আকর্ষণ করতে রঙ দিয়ে চকচকে করা হয়। তিনি জানান, ফিটনেসবিহীন লঞ্চও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে টাকা দিলে চলাচলের অনুমতি মিলে যায়। ফলে প্রতি বছর দুর্ঘটনা ঘটে। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এসব লঞ্চ চলাচলের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে বলে জানান তিনি। এদিকে ঈদ সামনে রেখে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) ও সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর নৌপথে যাতায়াতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। লঞ্চে যাত্রী ওঠানামা, পরিবহন ও সার্বিক নিরাপত্তাসহ কোনো রকম দুর্ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারের এসব সংস্থাকে ‘ম্যানেজ’ করে রঙ লাগানো ও ভাঙাচোরা লঞ্চগুলো এবারও নদীতে নামাতে সচেষ্ট লঞ্চ মালিকরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর চৌধুরী বলেন, ঈদ সামনে রেখে লঞ্চের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে রঙ লাগানো হয়। তবে এই সুযোগে কিছু অসাধু লঞ্চ মালিক টাকার লোভে ফিটনেসবিহীন ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চও জোড়াতালি দিয়ে নদীতে নামান। ফিটনেসবিহীন লঞ্চের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
No comments