উল্টো বিএনপির নেতাকর্মীর বাড়িতে পুলিশি তল্লাশি
তিন দিন পরও মামলা হয়নি * হাছান মাহমুদ এমপির সঙ্গে হামলাকারীদের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের গাড়িবহরে হামলাকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশ তাদের কিছুই বলছে না। উল্টো বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে বলে নেতারা অভিযোগ করেন। বিএনপি নেতারা বলেন, হামলার ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য তাদের নানাভাবে হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় হামলার তিন দিন পরও বিএনপি নেতারা মামলা করেননি। এ ছাড়া ইমন ও মহসীন গাড়িবহরের ধাক্কায় আহত হওয়ার দাবি করেন। স্থানীয় হাসপাতাল থেকে তাদের পরদিনই ছেড়ে দেয়া হয়। তাদের আঘাত খুবই সামান্য বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসক। এদিকে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপির সঙ্গে গাড়িবহরে হামলাকারীদের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। স্থানীয় বিএনপি নেতা অধ্যাপক মহসীন বলেন, তার বাড়িতে পুলিশ এসেছে। আরেক নেতা শওকত আলী বলেন তার বাড়িতেও পুলিশ এসেছে। বেশিরভাগ সময় রাতে পুলিশ আসছে। তারা বলেন, বিএনপি নেতাদের রাঙ্গামাটি যাওয়ার আগে থেকে স্থানীয় নেতাকর্মীদের বাড়িতে পুলিশ হানা দিচ্ছিল। নেতাকর্মীরা নতুন করে হয়রানির আতঙ্কে ভুগছেন। তবে রাঙ্গুনিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইমতিয়াজ মো. আহসানুল কাদের ভূঁইয়া বলেন, পুলিশ বিএনপি নেতাদের বাড়ি বাড়ি হানা দেয়নি। কোনো নেতাকে হয়রানিও করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, বিএনপি এখনও মামলা দেয়নি। চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম বলেছেন, হামলার ঘটনায় বুধবার মামলা করা হতে পারে। এরই মধ্যে হামলার ভিডিও ফুটেজ দেখে এবং ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে দেয়া ফেসবুকের স্থিরচিত্র দেখে হামলাকারী ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীদের অনেককেই চিহ্নিত করা হয়েছে। হামলায় জড়িত, ইন্ধনদাতা ও নির্দেশদাতাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। এরই মধ্যে মামলার এজাহার তৈরি হয়েছে। রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার পথে রোববার সকালে রাঙ্গুনিয়ার ইছাখালী বাজার এলাকায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে হামলা হয়। গাড়ির কাচ ভেঙে মির্জা ফখরুল, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ ছয় নেতা আহত হন। বহরের বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। মহাসচিব দাবি করেন আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা এ হামলা করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাঙ্গুনিয়ায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের গাড়িবহরে হামলার দিন বিকালে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি মাটি কাটছেন এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করা হয়। ওই ছবিতে ড. হাছান মাহমুদের পেছনে দেখা যায় সকালে মির্জা ফখরুলের গাড়িবহরে হামলাকারী কয়েক জনকে। এদের ছবি ভিডিও ফুটেজেও দেখা গেছে। এরা ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মী বলে বিএনপি অভিযোগ করেছে। কাসাফ উদ্দৌজা নামে একজনের ফেসবুক আইডি থেকে এ ছবি পোস্ট করা হয়। হাসান মাহমুদের সঙ্গে এদের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার রাতে হাছান মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, ‘স্বেচ্ছাশ্রমে মাটি কাটার ওই কর্মসূচি অনেক আগে থেকেই সেট করা ছিল। এ জন্য বিভিন্ন মিডিয়াতে চিঠিও দেয়া হয়।
তাছাড়া মাটি কাটার সময় কয়েকশ’ লোক ছিল যাদের ছবি তার সঙ্গে উঠেছে। কিন্তু সেখানে মির্জা ফখরুলের গাড়িবহরে হামলাকারী কেউ ছিল কিনা তা তিনি জানেন না। যারা ছিলেন তারা সবাই এলাকার বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কতজন কত মন্তব্য করবে তা নিয়ে আমি কী বলব।’ এদিকে মির্জা ফখরুলের গাড়িবহরের ধাক্কায় ইমন ও মহিসন নামে দুই যুবক আহত হওয়ার কারণেই উত্তেজিত জনতা গাড়িবহরে হামলা করে বলে দাবি করে আসছে আওয়ামী লীগ। পক্ষান্তরে এ ঘটনাকেও সাজানো নাটক বলে দাবি করেছে বিএনপি। সেই ‘কথিত’ আহত ইমন ও মহসীন ভর্তি হওয়ার একদিন পরই হাসপাতাল ছেড়েছে। তারা ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছুই বলছে না। তবে আহত দু’জনকে ঘটনার দিন বিকালে হাসপাতালে দেখতে যান ড. হাছান মাহমুদ এমপি। রাঙ্গুনিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আয়শা আক্তার জানান, রোববার বেলা ১১টার দিকে হাতে ও কপালে সামান্য ইনজুরি নিয়ে ইমন ও মহসীন নামে দুই রোগী ভর্তি হয়েছিল। পরদিন বেলা ১১টায় তারা হাসপাতাল ছাড়ে। এ সময় ডা. রফিক ছিলেন দায়িত্বে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ‘আহত’ দু’জনের একজন মোহাম্মদ মহসীন। তিনি ইছাখালীর জাকিরাবাদ গ্রামের নুরুল আলমের ছেলে। অপরজন আবদুল আজিজ ইমন। তিনি আদিলপুর গ্রামের আবদুল বারির ছেলে। ঘটনার দিন হাসপাতালে মহসীন বলেন, রাঙ্গুনিয়া হাসপাতালের দিকে তিনি হেঁটে যাচ্ছিলেন। এ সময় একটি গাড়ি ধাক্কা দিলে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর পর আর কী হয়েছে তা তিনি জানেন না। রোববার বেলা ১১টায় রাঙ্গুনিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির পরদিনই সোমবার বেলা ১১টায় তাদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে মঙ্গলবার ইমন ও মহসীন কোথায় আছে তা জানতে তাদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। মহসীনের বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। পরিবারের সদস্যরা জানান, মহসীন কোথায় গেছেন তারা জানেন না। সংসদ সদস্যের মাটি কাটার ছবি ফেসবুকে : আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও রাঙ্গুনিয়ার এমপি ড. হাছান মাহমুদ রোববার বিকালে রাঙ্গুনিয়া পৌর এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি সড়কের স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত কাজ উদ্বোধন করেন। পৌর এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষ্মীরখিল গুচ্ছগ্রামের সড়ক এটি। লুঙ্গি ও স্যান্ডো গেঞ্জি পরা হাছান মাহমুদ নিজেই কোদাল দিয়ে মাটি কাটেন এবং টুকরিভর্তি মাটি মাথায় নিয়ে তা সড়কের খানা-খন্দে দেন। কাদামাটিতে লেপ্টে যায় তার শরীর। এ সময় তার পেছনে শার্ট খুলে উদোম গায়ে ছিল বেশ কয়েকজন। এর মধ্যে যুবলীগের সরওয়ারসহ অন্তত চারজন ছিলেন যারা সকালে মির্জা ফখরুলের গাড়িবহরে হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। হামলার সময় গাড়ির আগে লাঠিসোটা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি এবং হামলার পর পুলিশ ভ্যানের পেছনে মিছিল করতে দেখা যায় তাদের। বিএনপি এরই মধ্যে তাদের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। মামলার এজাহারেও তাদের নাম দেয়া হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
No comments