ভ্যাটহার হ্রাস ও আবগারি শুল্ক বাতিলের দাবি
প্রস্তাবিত বাজেটে গণহারে ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক আরোপ সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলবে। এতে সংকটে পড়বে আবাসন ও বিদ্যুৎ খাত। আবাসন ব্যবসায়ী ছাড়াও যারা ব্যক্তি পর্যায়ে গৃহনির্মাণ করবেন, তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ফলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে আরও ভাটা পড়বে। সে কারণে ভ্যাটহার কমানো এবং আবগারি শুল্ক পুরোপুরি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন পেশাজীবী ও গবেষকরা। তাদের মতে, ঢালাওভাবে ভ্যাট আরোপ একধরনের অপেশাদার আচরণ। এটি বন্ধ করতে হবে। মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) বেসরকারি সংস্থা সমষ্টির আয়োজনে ২০১৭-১৮ বাজেট-পরবর্তী এক সেমিনারে তারা এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু জাফর মো. শফিউল আলম ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় সেমিনারে আলোচনায় অংশ নেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা ফেলো ড. তৌফিকুল ইসলাম খান, একাত্তর টিভির বার্তা পরিচালক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, দি ইনডিপেনডেন্টের বার্তা সম্পাদক মীর মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ পোস্টের ডেপুটি ম্যানেজিং এডিটর গোলাম শাহানী, সমষ্টির পরিচালক মীর মাসরুর জামান প্রমুখ। সিপিডির গবেষণা ফেলো ড. তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, সব ব্যবসায়ী ভ্যাট দেন না। যেখান থেকে সহজে ভ্যাট ও কর আদায় করা যায়, সেখানে তা আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি কঠিন কোনো খাতে ভ্যাট আরোপ করা হয়নি। বিদ্যুৎ খাতে ৫ শতাংশের পরিবর্তে করা হয়েছে ১৫ শতাংশ, যা কার্যকর হলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, ঢালাওভাবে ভ্যাটারোপ অপেশাদার আচরণ। তিনি আরও বলেন, দেশের অর্থনীতির চাকা নিন্ম ও মধ্যবিত্তরা। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে তাদের জন্য উল্লেখযোগ্য কিছুই নেই। তার মতে, ব্যাংকের আমানতরে ওপর থেকে আবগারি শুল্ক পুরোপুরি বাতিল করা উচিত। বিনিয়োগ ক্ষুধা মেটাতে প্রস্তুতি অপর্যাপ্ত। সে কারণে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কয়েক বছর আগে দেশে বছরে কর্মসংস্থান হতো ১০ থেকে ১২ লাখ লোকের। এখন তা ৩ থেকে ৪ লাখে নেমে এসেছে। তিনি বলেন, কর্মসংস্থানহীন ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আর এত বড় বাজেট কোনো কাজে আসবে না। দেশের ব্যাংকিং খাত বড় ঝুঁকিতে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাত বাঁচাতে হলে একটি স্বাধীন ব্যাংক কমিশন গঠন করতে হবে। দেশ থেকে প্রচুর অর্থ পাচার হলেও প্রস্তাবিত বাজেটে তার কোনো উল্লেখ নেই। একাত্তর টিভির বার্তা পরিচালক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে জনগণের অংশগ্রহণ নেই। পুরোটাই রাজনৈতিক। একই জায়গায় বারবার করের বোঝা বাড়লেও কর দেয়ার সংখ্যা বাড়ছে না।
তিনি বলেন, গত ৯ বছরে ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক লুটপাট করা হয়েছে। বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকে লাগামহীনভাবে লুটপাট করা হয়েছে। এর মাশুল দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। অর্থপাচারের ঘটনাও আগের তুলনায় বেড়েছে। বড় প্রকল্পে দুর্নীতির কথা শোনা যাচ্ছে। কোনো প্রকল্পই সময় মতো শেষ হচ্ছে না। কর্মসংস্থান নেই। বিনিয়োগ থেমে আছে। বিশেষ করে বেসরকারি বিনিয়োগ নেই বললেই চলে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এখন শুধু বেসরকারি ব্যাংকের গভর্নর। সরকারি ব্যাংকে তার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় দায়ী। তিনি আরও বলেন, সারা বিশ্ব জ্বালানি তেলের মূল্য কমার সুফল পেলেও বাংলাদেশের মানুষ তা পায়নি। তার মতে, আবগারি শুল্কের কারণে মানুষ ব্যাংকবিমুখ হতে পারে। বাংলাদেশ পোস্টের ডেপুটি ম্যানেজিং এডিটর গোলাম শাহানী বলেন, গড় অঙ্কের মতো গণহারে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলবে। আবাসন খাতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ব্যক্তি পর্যায়ে যারা গৃহনির্মাণ করবেন, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বেশি। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ আরও সংকটে পড়বে। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দি ইনডিপেনডেন্টের বার্তা সম্পাদক মীর মোস্তাফিজুর রহমান। তার প্রবন্ধেও ভ্যাট ও আবগারি শুল্কের সমালোচনা করা হয়েছে। অধ্যাপক ড. আবু জাফর মো. শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, ব্যাংকিং খাতের দুরবস্থা দূর করতে হবে। দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।
No comments