হতাশার মেঘ সরিয়ে প্রশান্তির ছায়ায় সিদ্দিকুর
‘এখন আমি খেলাটা উপভোগ করি। দিনশেষে নিরাশ হই না। প্রশান্তি অনুভব করি’, বললেন গলফার সিদ্দিকুর রহমান। গেল বছর মনোবিদের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। এখন স্বস্তিতে তিনি। সবে ফিরেছেন থাইল্যান্ড থেকে। সেখানে কুইন্স কাপে খেলেছেন। হয়েছেন ১৫তম। হতাশ নন সিদ্দিকুর। তার কথায়, ‘এখন আমি আগের মতো হতাশ হয়ে পড়ি না।’ গলফ বাংলাদেশে অনেক আগে থেকেই খেলা হয়। তবে বিশ্ব দরবারে এর সাফল্য আসে সিদ্দিকুরের হাত ধরে। একুশ শতাব্দীর শুরুতে যিনি গলফ ক্লাব হাতে টুকটাক খেলায় মনোনিবেশ করতেন, পরে তার থলেতেই জমা পড়েছে দুটি এশিয়ান ট্যুরসহ ১০টি ট্রফি। ২০০৫ সালে পেশাদার গলফার হিসেবে নাম লেখান বিশ্ব গলফে। খেলতে শুরু করেন বিভিন্ন দেশে। তবে আজকের সিদ্দিকুর আবিষ্কৃত হন ২০১০ সালে ব্রুনাই ওপেনে। ওই ট্যুারের শিরোপা তাকে পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে আসে। কলকাতার মিডিয়া ‘বাংলার টাইগার উডস’ তকমা দেয় তাকে। ২০১৩ সালে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় এশিয়ান ট্যুরের শিরোপা জেতেন তিনি। সেবার ভারতে অনুষ্ঠিত হিরো ইন্ডিয়ান ওপেন এশিয়ান ট্যুরের শিরোপা জেতেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। খেলেছেন প্রফেশনাল অনেক টুর্নামেন্ট। কিন্তু হঠাৎ দেখলেন কোর্সে তার মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটছে। খেলছেন, কাট মিস হলে উত্তেজিত হয়ে পড়ছেন। পিছিয়ে পড়লেও মেজাজটা ধরে রাখতে পারছেন না। ২০১৬ রিও অলিম্পিকে প্রথম গলফ অন্তর্র্ভুক্ত হয়। প্রথম আসরেই খেলার সুযোগ পান সিদ্দিকুর। খেলতে যাওয়ার আগে নিজের মনকে শান্ত করতে চাইলেন। মেজাজ হারালে চলবে না। শরণাপন্ন হলেন মনোবিদ ডা. আলী খানের। ঢাকার কুর্মিটোলা গলফ কোর্সে সিদ্দিকুরকে সঙ্গ দিয়ে অস্থিরতা কাটাতে চেষ্টা করেছেন ডা. আলী।
রিও অলিম্পিকে লাল-সবুজের পতাকা বহন করেন সিদ্দিকুর। অলিম্পিকের পর বেশক’টি টুর্নামেন্ট খেলেছেন। ২০১৬ সালে ওমেগা ইউরোপিয়ান মাস্টার্স (কাট এড়াতে ব্যর্থ হন), এশিয়া প্যাসিফিক গলফ (৪৪তম), মারকারিস তাইওয়ান মাস্টার্স (৩২), বিএনআর ইন্দোনেশিয়ান মাস্টার্স (কাট এড়াতে ব্যর্থ হন), ভেনেটিয়ান ম্যাকাও ওপেন (৫৭তম), রিসোর্টস ওয়ার্ল্ড ম্যানিলা মাস্টার্স (২৯তম) এবং ইউবিএস হংকং ওপেনে (৪৫তম) অংশ নেন তিনি। এ বছরের শুরুতে সিঙ্গাপুর ওপেনে কাট এড়াতে ব্যর্থ হলেও ঢাকায় বসুন্ধরা ওপেনে রানারআপ হন। মে ব্যাংক চ্যাম্পিয়নশিপে ৪১তম হলেও কাট এড়াতে ব্যর্থ হন হোন্ডা ওয়ার্ল্ড সুপার সিক্স পার্থ এবং হিরো ইন্ডিয়ান ওপেনে। নবম হয়ে শেষ করেন প্যানাসনিক ওপেনে, ৩৯তম হন জাংদার হেরিটেজে। আর থাইল্যান্ডের কুইন্স কাপে ১৫তম। থাইল্যান্ডে সান্টিবারি সামুই কান্ট্রি ক্লাবে অনুষ্ঠিত কুইন্স কাপ নিয়ে তার কথা, ‘ভালোই কেটেছে এ টুর্নামেন্ট। সান্টিবারি সামুই গলফ কোর্সটি পাহাড়ের অনেক উঁচুতে। পাহাড়ের ওপর বলে ফলাফল ধরে রাখা যায় না। সুন্দর গলফ কোর্স। আমাদের দেশের কোর্সও ভালো।’ তিনি যোগ করেন, ‘আগে পজিশন ওঠানামা করলে মন খারাপ হতো। কষ্ট পেতাম। এখন আর তা হয় না। ডা. আলী খানের চিকিৎসায় উন্নতি হয়েছে। তাই অনেকটা প্রশান্তি নিয়েই এখন কোর্সে নামতে পারি। কুইন্স কাপ শেষ। এখন পরের টুর্নামেন্টের জন্য প্রস্তুতি নেব। ঈদের পর অনুশীলনে নেমে পড়ব।’
No comments