পাকিস্তানের অধিনায়ক একজন কুরআনের হাফেজ!
পাকিস্তান
ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ। তার নেতৃত্বেই এবার চ্যাম্পিয়ন্স
ট্রফির শিরোপা জিতেছে পাকিস্তান। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে পাকিস্তানের ফাইনাল
খেলার কথা হয়তো কেউ ভাবতে পারেননি। কিন্তু সরফরাজ আহমেদের দারুণ নেতৃত্ব
দাপট দেখিয়ে ফাইনালে ওঠে পাকিস্তান। শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও
ইংল্যান্ডের মতো দলকে হারায় তারা। আর ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে
গুড়িয়ে দিয়ে শিরোপা জেতে পাকিস্তান। পাকিস্তানের এমন অর্জনের পেছনে অধিনায়ক
সরফরাজ আহমেদের অনেক বড় কৃতিত্ব। এ কারণে আইসিসি’র টুর্নামেন্ট সেরা
একাদশের অধিনায়ক করা হয়েছে তাকে। অবাক করা কথা হলো, পাকিস্তানের অধিনায়ক
সরফরাজ আহমেদ একজন কুরআনের হাফেজ। মুসলিম হিসেবে নিয়মিত ধর্মচর্চা করেন।
নিয়মিত নামাজ পড়েন। সরফরাজ যে একজন কুরআনের হাফেজ এটা পাকিস্তানের অনেকেই
জানেন। ২০১৫ সালে শোয়েব মালিক ফেসবুকে নিজের ভেরিফাইড পেজে প্রশ্ন করেন-
‘আপনারা কি জানেন, সরফরাজ একজন কুরআনের হাফেজ?’ তখনই পাকিস্তাসজুড়ে তাকে
নিয়ে আলোচনার ঝড় ওঠে। অনেকেই তার এই বিষয়টি জেনে যান। পরে এ বিষয়ে নিজেই
মিডিয়ার সামনে কথা বলেছেন। কুরআনের হাফেজ হওয়া ও জাতীয় দলে প্রবেশ নিয়ে সব
কথা খুলে বলেছেন। এক সাক্ষাৎকারে সরফরাজ জানান, তারা বাবা শাকিল আহমেদের
প্রবল ইচ্ছায় তিনি ছোটবেলায় কুরআন হিফজ করার মাদরাসায় ভর্তি হন। কুরআন
মুখস্ত করা অবস্থায় তার ভেতরে ছিল ক্রিকেটের প্রতি প্রবল ঝোঁক। সাধারনত
এমন মাদরাসায় পড়াশুনার বাইরে সময় খুব কম পাওয়া যায়। অনেক বিধিনিষেধ থাকে।
বিকেলে ঘণ্টাখানেক সময় পাওয়া যেত। ওই সময়টুকুতে তিনি স্থানীয় ক্রিকেট মাঠে
ছুটে যেতেন। ক্রিকেটের জন্য আলাদা কোনো পোশাক ছিল না। মাদরাসার ওই পোশাক
পরেই তিনি মাঠে নেমে পড়তেন। এরপর বাড়ি ফেরার আগে পোশাক ভালভাবে পরিস্কার
করে নিতেন। যাতে তার বাবা ক্রিকেট খেলার বিষয়টি বুঝতে না পারেন। প্রথমদিকে
তিনি ফাস্ট বোলার হতে চাইতেন। এরপর একসময় লেগ স্পিনার হওয়ার চেষ্টা করেন।
তবে শেষ পর্যন্ত নিজেই নিজের মধ্যে উইকেটরক্ষক হওয়ার গুণাবলী উপরব্ধি করেন।
সঙ্গে ভাল ব্যাটিং করাও শিখে যান। মাদরাসায় কুরআন মুখস্ত ও বিকেল বেলায়
এলাকার ছেলেদের সঙ্গে ক্রিকেট- দু’টোই চলতে থাকে একসঙ্গে। খুবই ভাল খেলতেন
তখন থেকে। এলাকায় তার ক্রিকেট প্রতিভার কথা সবাই জেনে যান। তার বাবা শাকিল
আহমেদও জেনে যান। ছেলের এক আগ্রহকে তিনি অগ্রাহ্য করেননি। কিন্তু সবার আগে
পড়া, কুরআন মুখস্ত করতে মাদরাসায় যওয়া। তিনি সারাদিন মাদরাসায় পবিত্র কুরআন
মখস্ত করতেন আর বিকেলে খেলতেন ক্রিকেট। এভাবেই তিনি এক সময় পুরো ৩০ পারা
কুরআন মুখস্ত করে ফেলেন। ক্রিকেটে প্রতি তার ভালবাসা তখনো প্রবল। এক সময়
করাচির স্থানীয় অনূর্ধ্ব-১৫ দলে ডাক পান তিনি। দারুণ প্রতিভার ঝলক দেখান
সরফরাজ। এরপর পাকিস্তানের অনূর্ধ্ব-১৭ এবং অনূর্ধ্ব-১৯। পাকিস্তানের
অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক নির্বাচিত হন তিনি। ২০০৬ সালে তার নেতৃত্বেই
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের শিরোপা জেতে পাকিস্তাস। সেবার ফাইনালে
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে হারায় তারা। ১১ বছর বাদে সেই ভারতকে হারিয়ে এবার
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জিতেছে পাকিস্তান। এবার জাতীয় দলের অধিনায়ক
কুরআনের হাফেজ সরফরাজ আহমেদ।
No comments