দ. কোরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন
উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু কর্মসূচিকে ঘিরে তীব্র উত্তেজনার মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি মোতায়েন স্থলে ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রত্যাশিত সময়ের আগেই বুধবার এ কাজ শুরু করার পর স্থানীয় কয়েকশ’ বাসিন্দা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। উত্তর কোরিয়া হুমকি দিয়ে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও তার দোসরদের ওপর হামলার জন্য আমাদের পরমাণু অস্ত্র এখন প্রস্তুত। খবর বিবিসির। উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি মোকাবেলায় গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের টার্মিনাল হাই অ্যালটিটুড এরিয়া ডিফেন্স (থাড) ব্যবস্থা মোতায়েনে সম্মত হয় দক্ষিণ কোরিয়া। দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য হুমকি সৃষ্টিকারী যে কোনো ক্ষেপণাস্ত্রকে ধ্বংস করে দিতে পারবে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, থাডের কিছু উপাদান দেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি এলাকায় পাঠানো হচ্ছে, যেখানে এক সময় একটি গল্ফ কোর্স ছিল। এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয়টি বলেছে, ‘উত্তর কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থাড সিস্টেমকে প্রাথমিকভাবে অভিযানে সক্ষম করে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে।’ চলতি বছরের শেষদিকে প্রতিরক্ষা এই পদ্ধতিটি কার্যকর হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ফুটেজে দেখা গেছে, সামরিক ট্রেইলারে করে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাটির বড় ধরনের কিছু ইউনিট রাজধানী সিউলের ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে পরিকল্পিত মোতায়েন স্থলের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। স্থানীয় প্রতিবাদকারীরা সামরিক যানগুলোর দিকে পানির বোতল ছুড়ে মারছে আর পুলিশ তাদের আটকানোর চেষ্টা করছে। আসছে ৯ মে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এই নির্বাচনে জনমত জরিপে এগিয়ে থাকা প্রার্থী মুন জায়ে-ইনও এ তৎপরতার নিন্দা জানিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ‘জনগণের মতামত ও যথাযথ প্রক্রিয়া’কে উপেক্ষা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মুন এবং পরবর্তী প্রশাসন দায়িত্বভার গ্রহণ করে তাদের নীতিনির্ধারণ না করা পর্যন্ত এই মোতায়েন প্রক্রিয়া স্থগিত করার দাবি জানিয়েছেন তিনি। দক্ষিণ কোরিয়ায় থাড মোতায়েনে ক্ষুব্ধ চীনও। বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে আপত্তি তুলে বলা হয়, অগ্রসর এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উত্তর কোরিয়াকে নিবৃত্ত করতে তেমন অবদান রাখতে পারবে না বরং ওই অঞ্চলের নিরাপত্তা ভারসাম্য বিনষ্ট করবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র থেকে রক্ষার জন্য দরকারি বিবেচনায় এই ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ব্যবস্থা মোতায়েন করা হচ্ছে এবং ‘যত দ্রুত সম্ভব’ এই মোতায়েনের কাজ সম্পূর্ণ করা হবে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের উদ্দেশে নতুন করে পরমাণু হামলার হুমকি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়ক ইয়ং সিক বলেন, সর্বাধুনিক পরমাণু অস্ত্র ও সরঞ্জামের অধিকারী তার দেশের সেনাবাহিনী আমেরিকায় হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছে। মঙ্গলবার পিয়ংইয়ংয়ে উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীর ৮৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে এ সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন,
উত্তর কোরিয়া আমেরিকার মূল ভূখণ্ডের পাশাপাশি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মোতায়েন মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোতে অনায়াসে আঘাত হানতে সক্ষম। এ লক্ষ্যে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্রগুলো ‘নিক্ষেপণযোগ্য’ অবস্থায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানান প্রতিরক্ষামন্ত্রী। উত্তর কোরিয়াকে কঠোর বার্তা চীনের : পরমাণু প্রকল্প নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি না করতে উত্তর কোরিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চীন। পিয়ংইয়ং ফের পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা করলে সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে বলেও হুশিয়ারি দিয়েছে বেইজিং। বুধবার চীনের ক্ষমতাসীন দলের মুখপত্র গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদকীয় কলামে এসব সতর্কবাণী দেয়া হয়েছে। খবর দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টের। গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ‘কোরীয় সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় চীন। কিন্তু পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেইজিংয়ের প্রভাব সীমিত। ওয়াশিংটন ও পিয়ংইয়ংয়ের এই যুদ্ধ-খেলা সহ্যসীমার দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে। এখন উত্তর কোরিয়া ষষ্ঠবারের মতো পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। সেখান থেকে ফেরার আর পথ থাকবে না।’ উত্তর কোরিয়ার প্রধান বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক বন্ধু চীন। দেশটির জ্বালানি, খাদ্য এমনকি পুরো অর্থনীতির প্রধান উৎস বেইজিং। তবে পিয়ংইয়ংয়ের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্প নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ জাতিসংঘের তীব্র চাপে রয়েছে চীন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অবস্থানের কারণে কোরীয় উপদ্বীপে যুদ্ধের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় বেইজিং উভয় পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।
No comments