দেশে তৈরি প্রথম বিমানবাহী রণতরী নামাল চীন
দেশে তৈরি প্রথম বিমানবাহী রণতরী সাগরে ভাসিয়েছে চীন। উত্তর কোরিয়া নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনা ও দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে বুধবার এ রণতরীর উদ্বোধন করে দেশটি। এ বিমানবাহী রণতরীটি এর আগে ইউক্রেন থেকে কেনা অপর বিমানবাহী রণতরীর সঙ্গে যোগ দেবে। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের। রোববার চীনা নৌবাহিনীর ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়। এর পরপরই দ্বিতীয় বিমানবাহী রণতরী জলে নামাল বাহিনীটি। নতুন এ রণতরীটি দৈর্ঘ্যে ৩১৫ মিটার, প্রস্থ ৭৫ মিটার। ৭০ হাজার টনের এ রণতরীটি সর্বোচ্চ ৩১ নট গতিতে এগিয়ে যেতে পারবে। ২০১৩ সালে এর নির্মাণকাজ শুরু করা হয়েছিল। মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই এর নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়। ২০২০ সালের আগে এটি সামরিক বাহিনীর দায়িত্বে নিয়োজিত হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানায়, বিমানবাহী রণতরীটির নকশা চীনেই করা হয়েছে এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় লিয়াওনিং প্রদেশের দালিয়ান বন্দরের শিপইয়ার্ডে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে রণতরীটির নাম ‘টাইপ ০০১এ’ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট। লিয়াওনিং নামের চীনের প্রথম বিমানবাহী রণতরীটি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে তৈরি। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ওই রণতরীটির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ইউক্রেনের একটি শিপইয়ার্ডে অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে থাকা রণতরীটি কিনে সংস্কার করে ২০১২ সালে নিজেদের বাহিনীতে কমিশন্ড করে চীনের পিপলস লিবারেশ আর্মি-নেভি। দেশে তৈরি এ রণতরীতে চীনের জে-১৫ যুদ্ধবিমানসহ অন্যান্য বিমান সংযুক্ত করা যাবে।
সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনার জেরে দক্ষিণ কোরিয়ায় পরমাণুচালিত ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিন মোতায়েন করেছে ওয়াশিংটন। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বেইজিং। এছাড়া দক্ষিণ চীন সাগরের মালিকানা নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলো ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বন্দ্ব রয়েছে বেইজিংয়ের। এর মধ্যে চীনের এ বিমানবাহী রণতরীর ‘প্রতীকী তাৎপর্য’ রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাডভান্সড রণতরীর কাছে এ যুদ্ধজাহাজ তেমন কিছুই নয়। অস্ট্রেলিয়া উপকূলে মহড়া দিয়ে ভারত মহাসাগর হয়ে কোরীয় উপদ্বীপে ভেড়া মার্কিন রণতরী কার্ল ভিনসনের শক্তিমত্তা নিয়ে ইতিমধ্যে ওই অঞ্চলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ফ্রান্সভিত্তিক মিলিটারি স্কুল স্ট্রাটেজিক রিসার্চ ইন্সটিটিউটের চীনবিষয়ক গবেষক জুলিয়েট জেনেভাজ বলেন, চীনের নতুন বিমানবাহী রণতরীর উদ্বোধন প্রাথমিকভাবে একটি প্রতীকী ঘটনা। এটাকে সমরসজ্জিত করতে আরও দু’বছর লাগবে। তবে এটা বেইজিংয়ের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের ইঙ্গিত। ভবিষ্যতে তারা নিজেরাই আরও উন্নত বিমানবাহী রণতরী বানাতে পারবে। চলতি বছরের মার্চেই চীন ঘোষণা দিয়েছিল, তারা সামরিক বাজেট বাড়াতে যাচ্ছে। আর এ বর্ধিত বাজেটের অধিকাংশ ব্যয় হবে নৌ-সমরাস্ত্র খাতে। দক্ষিণ চীন সাগরে নিজেদের আধিপত্য বৃদ্ধি ও সমগ্র এশিয়ায় চীনা উপস্থিতি জোরদারে মনোযোগ দিয়েছে বেইজিং। জাপান-ফিলিপাইন-ভিয়েতনামসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে নৌসীমা নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। অন্যদিকে ভারত মহাসাগরে চীনা মহড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বিগ্ন নয়াদিল্লি। ভারতের কাছে একটিমাত্র বিমানবাহী রণতরী রয়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় চীনা আধিপত্যের বিরুদ্ধে নৌশক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে অস্ট্রেলিয়া।
No comments