কোরীয় উপদ্বীপে যুদ্ধ কি আসন্ন
মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ও সাবমেরিন এখন উত্তর কোরিয়ার নাকের ডগায়। উত্তর কোরিয়াও তার এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়াটি চালিয়েছে। ওয়াশিংটন ও পিয়ংইয়ং প্রতি সপ্তাহেই একে অপরের বিরুদ্ধে উত্তেজনাপূর্ণ মন্তব্য করছে। এমন পরিস্থিতিতে যুদ্ধ আসলেই আসন্ন কিনা, সেটা জানা বেশ কঠিনই। তবে এ অঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিদিন যেসব প্রতিবেদন হাতে আসছে তাতে এ উদ্বেগই জোরালো হচ্ছে যে, যুদ্ধ বাধতে দেরি নেই। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, পরিস্থিতি এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, ছোট্ট একটি উসকানিতেই যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। র্যান্ড কর্পোরেশনের এক সিনিয়র প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ব্রুস বেনেট বলছেন, এখন আসল প্রশ্ন হচ্ছে, ‘বোকার মতো কোনো ভুল কেউ করতে যাচ্ছে কিনা। কারণ ছোট্ট একটি ভুলের কারণেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।’ উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বুধবার সিনেটের সব সদস্যকে হোয়াইট হাউসে ডেকে পাঠান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বুধবারের এ বৈঠকে ট্রাম্প প্রশাসন যদি কৌশলগত কোনো ভুল সিদ্ধান্তও নেয়, তারপরও যুদ্ধ আসন্ন নয়। হাওয়াই প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ইউএস প্যাসিফিক কমান্ডের জয়েন্ট ইনটেলিজেন্স সেন্টারের সাবেক পরিচালক কার্ল শুসটারও এমনটাই মনে করেন। তিনি বলেন, যদি তাই হতো, তাহলে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীকে যুদ্ধ পরিস্থিতির জরুরি অবস্থায় রাখা হতো। যুদ্ধের পরিভাষায় যেটা ডেফকন-২ হিসেবে পরিচিত। শুসটার বলেন, যুদ্ধ পরিস্থিতি হলে সেটা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে। তিনি আরও বলেন, সে ধরনের পরিস্থিতি হলে মার্কিন সেনাবাহিনীও তার সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রস্তুত থাকত এবং আমেরিকা পূর্ব এশিয়ায় তার দ্বিতীয় বিমানবাহী রণতরী পাঠাত।
ইউএস প্যাসিফিক কমান্ড বলেছে, এউএসএস কার্ল ভিনসন স্ট্রাইক গ্রুপ চলতি মাসের শেষ নাগাদ কোরীয় উপদ্বীপ ছেড়ে জাপান সাগরে অবস্থান নেবে। অন্য কোনো রণতরী পাঠানোর ঘোষণাও দেয়নি মার্কিন কর্মকর্তারা। তবে যুদ্ধ শুরু হওয়ার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটা ফ্যাক্টর। একটা ব্যাপার লক্ষণীয়, ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সি বিভিন্ন ইস্যুতে কঠোর কথাবার্তার ক্ষেত্রে একটা নতুন যুগের সূচনা করেছে। ট্রাম্প ও তার মন্ত্রিসভার মূল সদস্যরা সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে তাদের বক্তব্য বেশ কঠোর করেছে। তারা বলেছেন, ‘কৌশলগত ধৈর্যের সময় শেষ হয়ে গেছে এবং উত্তর কোরিয়া সমস্যার সমাধানে সব অপশন এখন টেবিলে রয়েছে।’ তবে উভয়পক্ষই এখনও বেশ সংযত রয়েছে। তাদের এ সংযম নীতিগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এক্ষেত্রে ট্রাম্প এখন চীনকে কাজে লাগাতে চান। ট্রাম্প চাচ্ছেন, প্রেসিডেন্ট কিম জং উনকে পরমাণু কর্মসূচি থেকে সরিয়ে আনতে উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র চীন দেশটির ওপর অধিক অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ করুক। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেছেন, কিমকে ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র তার নিজের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের এবং চীনসহ উত্তর কোরিয়ার প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করবে। উত্তর কোরিয়া সাধারণত এ ধরনের অর্থনৈতিক অবরোধ পরোয়া করে না। এত উত্তেজনা ও কথার যুদ্ধ প্রকৃত যুদ্ধে রূপ নেবে কিনা, সেক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম কী চান, সেটাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যদিও তাকে অল্প বয়স্ক ও বদমেজাজি হিসেবে দেখা হয়। তবে উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত করার একটা আকাক্সক্ষা তার রয়েছে। এবং সেটা তার টিকে থাকা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে। উত্তর কোরীয় পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী নর্থ ৩৮-এর বিশ্লেষক জো বারমুডেজ বলেন, ‘উত্তর কোরিয়া মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া এবং কিমের সরকারের টিকে থাকার একমাত্র পথ হচ্ছে পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী হওয়া।’
No comments