জনগণ যেন কোনোভাবেই নিগৃহীত না হয়
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নৈতিক স্খলন যে কোনো বাহিনীর মনোবল দুর্বল করে দেয়। মনে রাখবেন, জনগণের পয়সায় আমাদের-আপনাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়। আমরা সবাই জনগণের সেবক। সেই জনগণ যেন কোনো ভাবেই নিগৃহীত না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। বুধবার সকালে রাজধানীর কুর্মিটোলার সদর দফতরে র্যাব ফোর্সেসের ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত দরবারে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি একথা বলেন। র্যাব সদস্যদের শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি সদস্যকে দেশপ্রেম, সততা, কর্তব্য নিষ্ঠা, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের মনোভাব নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। মনে রাখতে হবে আপনারা একটি শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। র্যাবের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি বেনজির আহমেদ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, আইজিপি মো. শহীদুল হকসহ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী র্যাব সদর দফতরে এসে পৌঁছলে মেজর মঞ্জুরুল ইসলামের নেতৃত্বে র্যাব ফোর্সেস প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা না থাকলে দেশে বিনিয়োগ আসবে না, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে না। আইন-কানুন এবং নিয়ম-নীতি মেনে আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন- এটাই আমার প্রত্যাশা। শেখ হাসিনা বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় র্যাব যথেষ্ট সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়েছে। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাস, জঙ্গি, চরমপন্থী দমনসহ সব ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে র্যাব অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে।
র্যাবের অভিযানের সাফল্য সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি সিলেটের জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহলকে দক্ষতা ও সাহসিকতার সঙ্গে র্যাব বিস্ফোরকমুক্ত করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সিলেটের জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহলে অভিযান পরিচালনার সময় নিহত র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে তার স্বজনদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থী দমনেও র্যাব কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক চরমপন্থী গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। র্যাব তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করেছে বিপুল পরিমাণ অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ আত্মসমর্পণের পর সুন্দরবন এখন একটি নিরাপদ জনপদ এবং তারা সেখানে (আত্মসমর্পণের পর পুনর্বাসিতরা) জীবন-জীবিকা করেও খাচ্ছে। তারা যেন এ ভুল পথে আর না ফেরে সে জন্য সব রকমের সাহায্য এবং জীবন-জীবিকার সুযোগ আমাদের করে দিতে হবে। জঙ্গিবাদকে একটি বৈশ্বিক সমস্যা আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের অনেক দেশে একটি নতুন উপদ্রব হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আমরা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছি। তিনি বলেন, আমরা যে যেখানে আছি সেখান থেকেই জঙ্গিবাদের মোকাবেলা করতে হবে। তা না হলে আমাদের সব অর্জন বিনষ্ট হয়ে যাবে। পাশাপাশি তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে এবং প্রতিকার নয়, প্রতিরোধের দিকেই বেশি নজর দেয়ার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী র্যাব-৯-এর জন্য নবনির্মিত হেডকোয়ার্টার্স ভবনের ফলক উন্মোচন করেন।
No comments