মানুষ ডুবছে হাওরে কর্মকর্তারা বিদেশে
হাওরে যখন মহাবিপর্যয় চলছে, সব হারিয়ে কাঁদছে কৃষক, পুরো দেশই যখন এ নিয়ে উদ্বিগ্ন, তখন বিদেশ সফরে আছেন বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদফতরের মহাপরিচালক মজিবুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট ৯ কর্মকর্তা। হাওরে স্মরণকালের ভয়াবহ এ দুর্যোগের মধ্যেই ১৮ এপ্রিল পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৩ এবং আরেক মন্ত্রণালয়ের ২ কর্মকর্তাসহ কানাডা গেছেন তারা। সিদ্ধান্ত নেয়ার কেউ না থাকায় হাওরের বিপর্যয়ে কার্যত কোনো ভূমিকাই রাখতে পারছে না সরকারের এ অধিদফতর। দুর্যোগ আক্রান্ত মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে ‘হাওর উন্নয়ন নিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য’ এ বিদেশ যাত্রাকে দায়িত্বে অবহেলা বলছেন বিশিষ্টজনরা। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে হবে। দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পেলে অবশ্যই শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া উচিত। গত ২৭ মার্চ থেকে আগাম বন্যায় প্লাবিত হতে থাকে দেশের হাওর অঞ্চল। পানির তোড়ে ভেঙে যায় একের পর এক বাঁধ। এর ফলে তলিয়ে যায় ১৪২টি ফসলি হাওরের সব ফসল। গেল এক সপ্তাহে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। তৎপরতা শুরু করে সরকারি- বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা। হাওরের এই মহাবিপর্যয়ের মধ্যেই ১৮ এপ্রিল কানাডা সফরে যান বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদফতরের শীর্ষ ৫ কর্মকর্তার ৪ জন। এরা হলেন- অধিদফতরের মহাপরিচালক মজিবুর রহমান, পরিচালক (প্রশাসন) নূরুল আমিন, পরিচালক (জলাভূমি) ডক্টর রুহুল আমিন ও উপ-পরিচালক (প্রশাসন) নাজমূল আহসান। সঙ্গে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হাওর সংশ্লিষ্ট ৩ কর্মকর্তা ও অন্য মন্ত্রণালয়ের আরও ২ কর্মকর্তা রয়েছেন। হাওর নিয়ে যখন সারা দেশে তোলপাড়, সরকারের সব আলোচনা-সিদ্ধান্তে যখন হাওর, তখন দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে বিস্মিত ‘হাওর অ্যাডভোকেসি প্লাটফরম’।
সংগঠনটির সদস্য সচিব আনিসুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘এমন মহাবিপর্যয়ের সময় দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যেখানে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে দলমত নির্বিশেষে মানুষ হাওর এলাকায় যাচ্ছেন, সেখানে হাওর নিয়ে যারা কাজ করবেন তারাই বিদেশ সফরে গেছেন। এতেই প্রমাণ হয় তারা কতটুকু দায়িত্বশীল।’ এ প্রসঙ্গে অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকা উপ-পরিচালক (কৃষি ও মৎস্য) মো. নুরুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অধিদফতরের কর্মকর্তারা দেশের বাইরে গেলেও হাওরের বর্তমান পরিস্থিতিতে হাওরাঞ্চলে কাজ করার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। এখন ডিজিটাল যুগ। ডিজি মহোদয়ের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ হচ্ছে। হাওরে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও দুর্গত মানুষদের সহায়তার জন্য নেয়া কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি আমরা।’ অধিদফতরের ৩০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়ে প্রয়োজনীয় সব কাজ করছেন বলে দাবি করেন তিনি। হাওর অঞ্চলের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ হাওর উন্নয়ন বোর্ড গঠিত হলেও ১৯৮২ সালে সরকারের এক আদেশে তা বিলুপ্ত হয়। এরপর ২০০০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ড আবার গঠিত হয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদফতর গঠিত হয়।
No comments