আরো ৫ বছর ক্ষমতায় থাকতেই ভারতের সাথে চুক্তি : খালেদা জিয়া
আগামী পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার জন্য বর্তমান সরকার দেশ বিক্রি করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গত রাতে গুলশান কার্যালয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিজয়ীদের সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন এ অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে সরকার যাদেরকে বলা হয়, তারা আসলে জনগণের সরকার নয়, তারা জনগণের নির্বাচিত নয়। ভবিষ্যতেও তারা একই পরিকল্পনা করছে কিভাবে আবার মতায় আসবে। আজকে তারা দেশ বিক্রি করে দিয়েছে। সেজন্য পাঁচ বছরের একটা চুক্তি করেছে যে পাঁচ বছর তাকে থাকতে দিতে হবে। এই চুক্তি তো তিনি সেজন্য করলেন। ওই পাঁচ বছর পরে তারা বোধহয় কাগজে-কলমে দেশটাকে লিখে দিয়ে বিদায় নেবেন আর কী? কিভাবে আগামী পাঁচ বছর থাকবেন প্রশ্ন করে খালেদা জিয়া বলেন, কিভাবে তারা পাঁচ বছর থাকবেন? ভোট হবে না, চুরি-চামারি করে, পুলিশকে দিয়ে, ছাত্রলীগ-গুণ্ডালীগ তাদের সবার হাতে হাতে তো অস্ত্র আছেই, তাদের নিয়ে সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন যারা আছে, ভয়ভীতি দেখিয়ে নির্বাচনে তারা জিতে।
আসলে তারা নির্বাচনে জিতেনি, তাদেরকে জেতানো হয়, ওই নিয়ে তারা সন্তুষ্ট। জঙ্গির প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আজকে এটা শুধু তাদের (আওয়ামী লীগ) নয়, আরো অনেকের মহাপরিকল্পনা যে বাংলাদেশের মানুষকে ঠুটো জগন্নাথ বানিয়ে রাখতে হবে, মূর্খ, অকেজো, দুর্বল বানিয়ে রাখতে হবে। এর বিরুদ্ধে আপনাদের মতো শিতি বিবেকবানদের জাগতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে। না হলে এ থেকে রেহাই পাবো না। আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছি, মুক্তিযুদ্ধ করেছি কারো গোলামি করার জন্য নয়, কারো শৃঙ্খলে আবদ্ধ হওয়ার জন্য নয়। আমরা যুদ্ধ করেছি, দেশ স্বাধীন করেছি, এত লোক মৃত্যুবরণ করেছে তাদের এই গোলামির শৃঙ্খলের জন্য? আমরা শৃঙ্খলিত হবো না, হতে দেবো না। প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিরপে নন অভিযোগ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, তিনি নিরপে নন, তার কাছ থেকে নিরপে নির্বাচন আশা করা যায় না। সর্বশেষ কুমিল্লায় নির্বাচন হলো, সেখানে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। তিনি নিরপে হলে কুমিল্লায় আমরা ৫০ হাজার ভোটে জিততাম, সেখানে কেটে কেটে ক্ষমতাসীনরা ব্যবধান কমিয়েছে। তিনি (সিইসি) আগের প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পথই অনুসরণ করে চলেছেন। এর বাইরে তিনি যাচ্ছে না। রাত সাড়ে ৯টায় গুলশান কার্যালয়ে সদ্যসমাপ্ত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিজয়ী সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও পুনর্নির্বাচিত সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকনসহ নির্বাচিত কর্মকর্তারা খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাত উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে নবনির্বাচিত নেতারা বিএনপি চেয়ারপারসনের হাতে পুষ্পস্তবক তুলে দেন। গত ২২ ও ২৩ মার্চে অনুষ্ঠিত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল সভাপতি-সম্পাদকসহ আটটি পদে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী পরিষদ প্যানেল সহসভাপতি, সহসম্পাদক, কোষাধ্যসহ ছয়টি পদ পায়। খালেদা জিয়া বলেন, এরশাদের সাথে আঁতাত করে আওয়ামী লীগ ’৮৬ সালে নির্বাচনে গিয়েছিল। আমরা যায়নি। তারা (আওয়ামী লীগ) তখন সঙ্গী খুঁজে পায় না।
একলা গেলে খারাপ দেখায়, সেজন্য জামায়াতে ইসলামীকে সাথে নিয়ে নির্বাচনে গেল। এখন জামায়াতে ইসলাম রাজাকার, খারাপ। তখন কিন্তু নিজামী সাহেবের (মতিউর রহমান নিজামী) সাথে মিটিং করা, ফটো তোলা এগুলো আছে, মওদুদ সাহেবও সাী আছেন। এ সময় আইনজীবীদের মধ্যে হাসির রোল পড়ে যায়। খালেদা জিয়ার ঠিক পেছনের আসনে বসা মওদুদ আহমেদ দলের চেয়ারপারসনের কাছে এসে নিচুকণ্ঠে বললেন, ম্যাডাম আমি তো গিয়েছিলাম। ছবি আছে। খালেদা জিয়া বলেন, হয়ত আপনি (মওদুদ আহমদ) মাইন্ড সেট করে রেখেছিলেন, বিএনপিতে আসবেন। একটা রেকর্ড রেখেছিলেন। ওইসব ছবিতে তারা কিভাবে মিটিং করছেন, কেউ সালাম করছেন, কেউ ঝুঁকে সালাম করছেন, নানা রকমের অঙ্গভঙ্গির ছবি আছে। জামায়াতে ইসলামীর সাথে সখ্য কাদের বেশি ছিল? তাদের ছিল। এখনো আছে, এখনো বন্ধুত্ব ঠিকই আছে। বিএনপিকে হারানোর জন্য তারা সময়মতো তাদের ব্যবহার করে। ২০০৮ সালে ১/১১-এর সেনা সমর্থিত সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে তার আপত্তি থাকার কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার ও নেতাদের মুক্তির শর্তে আমরা নির্বাচনে গিয়েছিলাম। নির্বাচনে যাওয়াটার ব্যাপারে আমি সন্তুষ্ট ছিলাম না। কিন্তু আমাদের সাথে যারা ছিল তারা খুব বেশি আগ্রহী ছিল নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে। তারা বলল, নির্বাচনে যেতেই হবে, নির্বাচনে না গেলে তি হবে। তখন তাদের কথা শুনে আমরা নির্বাচনে গেলাম। সেই নির্বাচনে যে ফলাফল হয়েছে বিএনপির তা তো কখনোই হতে পারে না। আগে থেকে ঠিক করে রেখেছে বিএনপিকে এত সিট দেবে। আওয়ামী লীগ সরকারকে বিদায় করতে দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালে তারা মতায় এসেছে। আজকে ১০ বছর হতে চলেছে। দেশের কী অবস্থা, অর্থনীতির কী অবস্থা। ব্যাংকগুলো ফোকলা করে দিয়েছে। দেশ একটা কঠিন সময় অতিক্রম করছে। সেজন্য আমরা মনে করি, বাইরে যারা আছেন, দেশকে ভালোবাসেন বুদ্ধিজীবীসহ অন্যরা, হকারেরা, আসুন অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করি, দেশটাকে ঐক্যবদ্ধভাবে বাঁচাই। দেশটা বাঁচলে আপনারা বাঁচবেন, সম্মানের সাথে বাঁচবেন। ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদলের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও সম্পাদক মাহবুবউদ্দিন খোকন বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে দলের ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এ জে মোহাম্মদ আলী, আইনবিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া, ঢাকা বারের মাসুদ আহমেদ তালুকদার, খোরশেদ আলম, মহসিন মিয়া, বোরহান উদ্দিন প্রমুখ আইনজীবী নেতা উপস্থিত ছিলেন। স্থায়ী কমিটির বৈঠক আজ : প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরসহ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে আজ স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকেছেন বেগম খালেদা জিয়া। চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান জানিয়েছেন, রাত ৯টায় গুলশান কার্যালয়ে এ বৈঠক শুরু হবে।
No comments