মিসরে তিন মাসের জরুরি অবস্থা জারি
মিসরের প্রেসিডেন্ট আবুল ফাত্তাহ আল সিসি
সোমবার তিন মাসের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। দেশটির তানতা ও
আলেকজান্দ্রিয়ায় দুটি কপটিক গির্জায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে ৪৪ জন নিহত হওয়ার পর
তিনি এ ঘোষণা দেন। এছাড়া তিনি সারাদেশে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলোর
সুরক্ষার জন্য সেনা মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে প্রেসিডেন্টের এ
পদক্ষেপের জন্য পার্লামেন্টের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। যদিও পার্লামেন্টে
প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে তার। ইসলামিক স্টেট এই হামলার দায়িত্ব
স্বীকার করে বলছে, সংখ্যালঘু এই খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ‘পাম সানডে’র
অনুষ্ঠানে হামলা চালায় তারা। সাম্প্রতিক সময়ে তারা মিসরে বেশ কয়েকটি হামলা
চালিয়েছে। দেশটিতে আরো হামলার হুমকি দিয়েছে তারা। রোববার উত্তরাঞ্চলীয়
তানতা শহরের সেন্ট জর্জ'স কপটিক চার্চে প্রথম বিস্ফোরণটি ঘটে এবং এতে
কমপক্ষে ২৭ জন প্রাণ হারান ও আরো ৭০ জনের বেশি লোক আহত হন। তানতায় এই ভয়াবহ
বিস্ফোরণস্থলের বর্ণনা দিয়ে এক ব্যক্তি জানিয়েছিলেন যে, সকাল ৯টার দিকে এই
হামলা চালানো হয়। সেখানে তখন প্রার্থনা চলছিল। ওই প্রত্যক্ষদর্শী বলেন,
প্রার্থনা চলাকালে আমি গির্জার সামনের দিকে ছিলাম এবং হঠাৎ করে সব অন্ধকার
হয়ে গেলো। আমি দ্রুত সেখান থেকে সরে গেলাম আর কয়েকজন আমাকে সিটের ওপর ঠেলে
দিল। তিনি আরো বলেন, কয়েক সেকেন্ড পর দেখি আমার চারপাশে কয়েকটি লাশ পড়ে
আছে। আমি সেখানে আতঙ্কিত মানুষের চিৎকার শুনতে পাই।
লোকজন সেখান থেকে
বেরিয়ে আসতে বলছে। তানতার হামলার কয়েক ঘণ্টা পরেই আলেকজান্দ্রিয়া শহরে আরেকটি গির্জায় দ্বিতীয় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ নগরীর সেন্ট মার্কস কপটিক চার্চের প্রবেশ পথে এক ব্যক্তিকে থামায়।
লোকটি ছিল আত্মঘাতী হামলাকারী। সে তার শরীরে বেঁধে রাখা বিস্ফোরকের
বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১৭ জন প্রাণ হারান। পোপ ফ্রান্সিস এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তার আগামী মাসে মিশর সফরের কথা রয়েছে। এদিকে হামলার পরপরই ন্যাশনাল ডিফেন্স কাউন্সিলের সাথে বৈঠকে বসেন প্রেসিডেন্ট সিসি। এরপর কঠোর ভাষায় দেয়া এক ভাষণে তিনি জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দেন। দেশটিতে চলমান এই জরুরি অবস্থার কারণে কর্তৃপক্ষ যেকোন ব্যক্তিকে আটক ও যেকোন স্থান তল্লাশির সুযোগ পাবে। সিসি তার ভাষণে হুঁশিয়ার করে বলেন, উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ হবে ‘দীর্ঘস্থায়ী ও কষ্টকর’।
উল্লেখ্য, মিসরের মোট জনগোষ্ঠীর দশ শতাংশ কপটিক খ্রিষ্টান। সাম্প্রতিক
বছরে কপটিক খ্রিস্টানদের ওপর সহিংসতার ঘটনা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে ২০১৩ সাল
থেকে যখন সামরিক বাহিনী দেশটির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে
উৎখাত করে এবং ধরপাকড় শুরু করে তখন থেকে অস্থিরতা বেড়ে যায়। গত ডিসেম্বর
মাসে বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়েছিল কায়রোর কপটিক ক্যাথেড্রাল।
No comments