সিরাজগঞ্জে বৈশাখ উপলক্ষে তাঁতপল্লীতে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা
বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। এ উৎসবকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জের দক্ষিণাঞ্চলের তাঁতশিল্প সমৃদ্ধ চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুর, বেলকুচি ও শাহজাদপুর উপজেলার তাঁতিরা শেষ মুহূর্তের অতিরিক্ত চাহিদার বৈশাখী শাড়ি উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছে। শ্রমিক কর্মচারীরের পাশাপাশি বাড়ির সবাই এখন ব্যস্ত এ কাজে। পহেলা বৈশাখে সিরাজগঞ্জের শাড়ির ব্যাপক চাহিদা থাকায় শাড়ি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, ফতুয়াসহ অন্যান্য বৈশাখী পোশাক তৈরীতে তাঁতপল্লীর পাশাপাশি প্রিন্টিং কারখানার শ্রমিকদের বিশ্রামের সুযোগ নেই। তারা দিনরাত নতুন নতুন ডিজাইনের বিভিন্ন সাইজের শাড়ি ও লুঙ্গিসহ বিভিন্ন পোশাক প্রিন্ট করছেন। এনায়েতপুরের খামারগ্রাম, বেতিল, গোপালপুর, গোপরেখী, গোপিনাথপুর ও শিবপুর, বেলকুচি উপজেলার তামাই, মুকুন্দগাতী ও সেরনগর, শাহজাদপুর উপজেলা সদর সহ এলাকার প্রায় ৬৫টি কারখানায় চলছে শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিছ ও ফতুয়া প্রিন্টের কাজ। এতে বাংলার ঐতিহ্য ঢোল, ডুগি-তবলা, একতারা, দোতারা, হাতি-ঘোড়া, পলো, ইলিশ, নৌকা, ধানের শীষ, লাঙল, হাত পাখা, ঘুড়িসহ নানা ধরনের আল্পনা আঁকা হচ্ছে। এছাড়া রংতুলির আচরে তুলে ধরা হচ্ছে গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐহিত্য ও সংস্কৃতি। সায়দাবাদ এলাকায় বৈশাখী শাড়ি প্রিন্ট কারখানার কয়েকজন শ্রমিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সারা বছর কাজ চললেও পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে তাদের দম ফেলানোর সুযোগ নেই। অতিরিক্ত অর্ডারের জন্য অগ্রিম টাকা নেয়া হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী আমরা সরবরাহ করতে একটু সমস্যা হচ্ছে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের জন্য। তবে অন্য বছরের তুললায় ব্যবসা ভালো পাচ্ছি।
গোপিনাথপুর গ্রামের লোকমান হোসেনের শাড়ি প্রিন্ট কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে, মহিলা-পুরুষ শ্রমিকরা কাপড়ে লাল, নীল, হলুদ রংঙের কাজ করছে, অন্যরা রোদে কাপড় শুকাচ্ছে। কারখানার শ্রমিক শাপলা খাতুনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে মহাজনদের কাপড়ের অতিরিক্ত অর্ডার থাকায় ভোর থেকে রাত অবধি কাজ করতে হয়। পহেলা বৈশাখের দুই সপ্তাহ আগে থেকে নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়ে শুধু কাজ আর কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়ে। এতে একটু কষ্ট হলেও রোজগার বেশি হওয়ায় আমরা খুশি। এদিকে গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের সর্ববৃহৎ এনায়েতপুর কাপড়ের হাট, শাহজাদপুর ও বেলকুচি কাপড়ের হাট ছিল বৈশাখী শাড়ির দখলে। চারিদিকে শুধু বৈশাখী শাড়ি আর শাড়ি। প্রিন্ট করা শাড়ির গায়ে নানা রং বেরংঙের গ্রামীণ বৈচিত্রময় বিভিন্ন ধরনের চিত্র স্থান পায় এই শাড়িতে। বেলকুচির সোহাগপুর হাটের কাপড় ব্যবসায়ী খ ম মাহবুবুর রহমান জানান, তিন সপ্তাহ আগেই বৈশাখী শাড়ি বিক্রি শুরু হয়েছে। সারা দেশে থেকে পাইকাররা এ হাটে শাড়ি কিনতে আসে। এ বছর সিরাজগঞ্জ জেলা থেকে শতকোটি টাকার বৈশাখী শাড়ি-লুঙ্গি বিক্রি হবে। এ ব্যাপারে সোনার বাংলা টেক্সটাইলের স্বতাধিকারী রফিকুল ইসলাম রফিক জানান, এখানকার উৎপাদিত শাড়ি ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান দখল করে নিয়েছে। বর্তমানে অধিক হারে অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে। প্রকারভেদে বৈশাখী শাড়ি ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা পাওয়া যায়।
No comments