বৈসাবি আনন্দে উৎসবমুখর পাহাড়
বৈসাবিকে ঘিরে পাহাড়ে ্এখন উৎসবের আমেজ। ১২ এপ্রিল তথা চৈত্রের শেষ দুদিন এবং পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষকে ঘিরে পাহড়ের এ সামাজিক উৎসব বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক। এক কথায় বৈসাবি। পাহাড়ের মানুষ নিজস্ব রীতি ও সংস্কৃতিতে উদযাপন করে। আব বাঙ্গালীরাও বাংলা নববর্ষকে ঘিরে পালন করছে নানান আয়োজন। নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্যদিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে পাহাড়ি সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসব বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক। সংক্ষেপে “বৈসাবি ”। যদিও এ নামকরণে বির্তক রয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন নামে হলে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক উৎসবের নামের তিন আদ্যাক্ষর নিয়ে অধুনা “বৈসাবি” নামে এ উৎসব বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে। পুরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করতে চৈত্র সংক্রান্তিতে ভিন্ন নামের এ সামাজিক উৎসবে মেতে উঠেছে পাহাড়ের মানুষ। রাঙ্গামাটির পাহাড়ি জনপদের প্রতিটি পাড়া মহল্লায় চলছে উৎসবের নানা আয়োজন। পাহাড়ের বড় জাতি গোষ্ঠী চাকম দের উৎসবের নাম বিজু, মারমাদের সাংগ্রাই,আর ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের উৎসবের নাম বৈসুক। এছাড়া তংচঙ্গ্যা জাতি বিষু, অহমিয়া ও আসামরা বিহু নামে এ উৎসব পালন করে। আবার কেউ কেউ চংক্রান নামে এ উৎসব উদযাপন করে।
উৎসব প্রিয় পাহাড়ের এ মানুষগুলো মেতে থাকেন নানান অনুষ্ঠানে। সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় চৈত্র সংক্রান্তির বৈসাবি উৎসব এর মাধ্যমে। বৈসাবীকে কেন্দ্র করে তিনদিন ধরে উৎসব করার কথা থাকলেও তা চলবে সপ্তাহ ধরে। সংস্কৃতি মেলা, ঐতিহ্যবাহী খেলাধূলা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, নদীতে ফুল ভাসানো, বয়স্ক ¯œান আর পানি খেলার মধ্যে দিয়ে চলবে এ উৎসব। চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিনকে বলা হয় ফুল বিজু। উৎসবের প্রথম দিনে চাকমা, ত্রিপুরা ও মারমারা বন থেকে ফুল আর নিমপাতা সংগ্রহ করে সেই ফুল দিয়ে ঘর সাজায় ও মা গঙ্গার উদ্দেশ্যে নদীতে ফুল ভাসায়। চাকমাদের উৎসব বিঝু। এ উৎসবের প্রথম দিনকে ফুলবিঝু, দ্বিতীয় দিনকে মূলবিঝু অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তির দিনকে বলা হয় মুল বিজু। এদিন ঘরে ঘরে রান্না হয় ঐতিহ্যবাহী খাবার পাচন। তা দিয়ে দিন ভর চলে অতিথি আপ্যায়ন। আর তৃতীয় দিনকে গোজ্যা পোজ্যা দিন বলা হয়। ত্রিপুরাদের উৎসব বৈসুক। তাদের উৎসবের প্রথম দিনকে হারিকুইসুক, দ্বিতীয় দিনকে বুইসুকমা এবং তৃতীয় দিনকে বিসিকাতাল নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। মারমাদের উসবের নাম সাংগ্রাই। ঐতিহ্যবাহী পানি খেলার মাধমে মারমারা উদযাপন করে এ উৎসব।
বিঝু : চৈত্রের শেষ দুইদিন ও পয়লা বৈশাখ এ তিনদিন চাকমারা মহাসমারোহে বিঝু উৎসব পালন করে। বিঝু এখানে এনে দেয় এক অন্য রকম অনূভূতি আর মোহানীয় আবেশ। তারা মনে করে প্রতি বছরই চাকমা জনপদে একটি পাখির বিজু বিজু ডাক সবাইকে বিঝুর আগাম আগমনী বার্তা জানিয়ে দিয়ে যায়। তাই এ উৎসবের সঙ্গে যেন দূলে উঠে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম। বিঝু উৎসবের সময় তারা কোন প্রাণী হত্যা করে না।
বৈসুক : ত্রিপুরাদের ধর্মীয় এবং সামাজিক উৎসবের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষনীয় এবং প্রধানতম উৎসব হলো বৈসুক। চৈত্রমাসের শেষের দুইদিন ও নববর্ষেও প্রথম দিন মোট তিনদিন পালন করা হয় এই উৎসব। উৎসবের প্রথমদিন ত্রিপুরা ছেলেমেয়েরা ফুল তোলে। ফুল দিয়ে ঘর সাজায়। ত্রিপুরা নারী পুরুষ নদী থেকে কলসি ভরে পানি এনে গুরুজনদের ¯œান কারনোর মাধ্যমে আর্শিবাদ গ্রহণ করে। ছেলেমেয়েদের বিচিত্র পিঠা আর অন্যান্য পানীয় পান করানো হয়। বৈসুক শুরুর দিন থেকে গরাইয়া নৃত্যদল গ্রামে গ্রামে গিয়ে প্রত্যেক ঘরের উঠোনে নৃত্য করে।
সাংগ্রাই: পাহাড়ের মারমা সম্প্রদায়ের লোকজন তিনদিন ধরে সাংগ্রাইং উৎসব পালন করে। মারমাদের অন্যতম সামাজিক উৎসব হলো সাংগ্রাইং। মারমারা সাধারণত মঘিসনের চন্দ্র মাস অনুসারে এ দিনটি পালন করে থাকে। বছরের শেষ দুইদিন ও নববর্ষের প্রথমদিন তারা পালন করে ফারাং রিলংপোয়েহ অর্থাৎ বৃদ্ধের স্নানোৎসব। এই দিন মারমা সম্প্রদায়ের নারী পুরুষ সবাই মিলে বৌদ্ধ মূর্তিগুলোকে নদীর ঘাটে নিয়ে যায়। মারমা সম্প্রদায়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান জলকেলি বা পানি খেলা উৎসব। এ খেলার সময় এক জায়গায় পানি ভর্তি রেখে যুবক-যুবতীরা একে অপরের দিকে পানি ছুড়ে মারে। স্নিগ্ধতায় ভিজিয়ে দেয় পরস্পরকে। বৈসাবি পাহাড়ী সম্প্রদায়ের সামাজিক উৎসব হলেও বাঙ্গালীরাও সমান তালে উপভোগ করে এ উৎসব। এই উৎসবে অংশ নিতে অসংখ্য মানুষ পাহাড়ে ভীড় জমায়। ঘরে ঘরে নামে অতিথির ঢল। জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সকলে একাকার হয়ে যায় বৈসাবি’র আনন্দে। পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ি জাতি গোষ্ঠীর সামাজিক উৎসব বৈসাবি আর বাঙালীদের বাংলা বর্ষবরণ উৎসব পাহাড়ের সকল মানুষকে এক কাতারে নিয়ে এসেছে। আর এতে সৌহার্দ আর সম্প্রীতি নতুন মাত্রা পেয়েছে।
বিঝু : চৈত্রের শেষ দুইদিন ও পয়লা বৈশাখ এ তিনদিন চাকমারা মহাসমারোহে বিঝু উৎসব পালন করে। বিঝু এখানে এনে দেয় এক অন্য রকম অনূভূতি আর মোহানীয় আবেশ। তারা মনে করে প্রতি বছরই চাকমা জনপদে একটি পাখির বিজু বিজু ডাক সবাইকে বিঝুর আগাম আগমনী বার্তা জানিয়ে দিয়ে যায়। তাই এ উৎসবের সঙ্গে যেন দূলে উঠে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম। বিঝু উৎসবের সময় তারা কোন প্রাণী হত্যা করে না।
বৈসুক : ত্রিপুরাদের ধর্মীয় এবং সামাজিক উৎসবের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষনীয় এবং প্রধানতম উৎসব হলো বৈসুক। চৈত্রমাসের শেষের দুইদিন ও নববর্ষেও প্রথম দিন মোট তিনদিন পালন করা হয় এই উৎসব। উৎসবের প্রথমদিন ত্রিপুরা ছেলেমেয়েরা ফুল তোলে। ফুল দিয়ে ঘর সাজায়। ত্রিপুরা নারী পুরুষ নদী থেকে কলসি ভরে পানি এনে গুরুজনদের ¯œান কারনোর মাধ্যমে আর্শিবাদ গ্রহণ করে। ছেলেমেয়েদের বিচিত্র পিঠা আর অন্যান্য পানীয় পান করানো হয়। বৈসুক শুরুর দিন থেকে গরাইয়া নৃত্যদল গ্রামে গ্রামে গিয়ে প্রত্যেক ঘরের উঠোনে নৃত্য করে।
সাংগ্রাই: পাহাড়ের মারমা সম্প্রদায়ের লোকজন তিনদিন ধরে সাংগ্রাইং উৎসব পালন করে। মারমাদের অন্যতম সামাজিক উৎসব হলো সাংগ্রাইং। মারমারা সাধারণত মঘিসনের চন্দ্র মাস অনুসারে এ দিনটি পালন করে থাকে। বছরের শেষ দুইদিন ও নববর্ষের প্রথমদিন তারা পালন করে ফারাং রিলংপোয়েহ অর্থাৎ বৃদ্ধের স্নানোৎসব। এই দিন মারমা সম্প্রদায়ের নারী পুরুষ সবাই মিলে বৌদ্ধ মূর্তিগুলোকে নদীর ঘাটে নিয়ে যায়। মারমা সম্প্রদায়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান জলকেলি বা পানি খেলা উৎসব। এ খেলার সময় এক জায়গায় পানি ভর্তি রেখে যুবক-যুবতীরা একে অপরের দিকে পানি ছুড়ে মারে। স্নিগ্ধতায় ভিজিয়ে দেয় পরস্পরকে। বৈসাবি পাহাড়ী সম্প্রদায়ের সামাজিক উৎসব হলেও বাঙ্গালীরাও সমান তালে উপভোগ করে এ উৎসব। এই উৎসবে অংশ নিতে অসংখ্য মানুষ পাহাড়ে ভীড় জমায়। ঘরে ঘরে নামে অতিথির ঢল। জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সকলে একাকার হয়ে যায় বৈসাবি’র আনন্দে। পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ি জাতি গোষ্ঠীর সামাজিক উৎসব বৈসাবি আর বাঙালীদের বাংলা বর্ষবরণ উৎসব পাহাড়ের সকল মানুষকে এক কাতারে নিয়ে এসেছে। আর এতে সৌহার্দ আর সম্প্রীতি নতুন মাত্রা পেয়েছে।
No comments