ঢাকা দক্ষিণ সিটি- অবৈধ দখলে বালুর মাঠের ১০ বিঘা জমি by অরূপ দত্ত
উটের খামার, টিনের ছাপরা ও খাল ভরাট করে রাজউকের জমি বেদখল। ছবিটি গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন থেকে তোলা l আবদুস সালাম |
অরক্ষিতভাবে
ফেলে রাখায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ভরাট করা জলাধারের ১০ বিঘার মতো
জায়গা চলে গেছে অবৈধ দখলদারদের হাতে। গড়ে উঠেছে শতাধিক গ্যারেজ, অবৈধ
বাসস্ট্যান্ড, বস্তিঘর। নিয়মিত যোগ হচ্ছে টিনের ও বাঁশের নতুন নতুন
স্থাপনা। পানি ধারণের বিশাল অংশ বিলীন হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে মাঝারি ধরনের
বৃষ্টিতেই এলাকার চারদিকে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে প্রায় ১৫ বিঘা জায়গায় জলাধার ছিল। একসময় সেখানে খাল ও ঝিলপথে নৌযান চলত। আশির দশকের শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ভরাট শুরু হয়। নব্বই দশকের মাঝামাঝি পুরোপুরি ভরাট করে ফেলা হয়। স্থাপত্য ইনস্টিটিউটের সাবেক সভাপতি মোবাশ্বের হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘চারদিকে জলাবদ্ধতার জন্য অন্যতম দায়ী জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়া। ঢাকা শহর থেকে এ ধরনের পানি ধারণ ক্ষেত্রগুলোর অস্তিত্ব হারিয়ে গিয়ে নগরবাসীর জন্য স্থায়ী সমস্যার সৃষ্টি করেছে।’
ভারী বা মাঝারি বৃষ্টির পানি গড়িয়ে আগে খালে ও ঝিলে পড়ত। এখন বৃষ্টির পানি জমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে। এই ওয়ার্ডের মধ্যে পড়েছে কমলাপুর, মতিঝিল, বাংলাদেশ ব্যাংক কলোনি, সোনালী ব্যাংক কলোনি, আর কে মিশন রোড ও গোপীবাগ কবি জসীমউদ্দীন রোড, টিটি পাড়া এলাকাগুলো।
ঢাকা ওয়াসা সেগুনবাগিচা খালের ওপরই রমনা মৎস্য ভবন এলাকা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ বক্স কালভার্ট নির্মাণ করে। যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনের জায়গাও রয়েছে। এর বাইরে রাজউক কিছু জায়গা বিক্রি করে এবং কিছু জায়গার বাণিজ্যিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাকি প্রায় ১০ বিঘা জায়গা দখলদারদের হাতে। দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় দখলকারীরা গড়ে তুলেছে পাকা, আধা পাকা স্থাপনা।
বর্তমানে এলাকাটি বালুর মাঠ বলে পরিচিত। সেখানে মেয়র সাদেক হোসেন খোকা সড়ক ও কমিউনিটি সেন্টার রয়েছে। জায়গার মালিক রাজউক সড়কটি নির্মাণ করে ১০ বছর আগে ঢাকা সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করে। কমিউনিটি সেন্টারের জন্য তিন বিঘা জায়গা বরাদ্দ নেওয়া হয়। বিশাল জায়গাজুড়ে রয়েছে উটের খামার।
মোটর গ্যারেজ, বাসস্ট্যান্ড, দোকানপাট: গতকাল সোমবার সকালে এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনের অংশ থেকে শুরু করে টানা দক্ষিণ দিকে অন্তত ৭০টির মতো মোটর গ্যারেজ। টিনের বা বাঁশের বেড়ার এসব স্থাপনার সামনে খোলা জায়গা। সেখানে এবং সামনের রাস্তায় গাড়ির যন্ত্রপাতি বিছিয়ে রেখে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন মালিকেরা। এখানে তিনটি গ্যারেজের মালিক আবদুল হালিম। প্রথম আলোকে তিনি জানান, তাঁর ট্রেড লাইসেন্স আছে। এখানে গ্যারেজ করার জন্য রাজউকের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন যেহেতু ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে, তাই রাজউকের অনুমতির প্রয়োজন নেই।’
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি বিভাগ ও রাজস্ব বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, এখানে গ্যারেজ করার কোনো অনুমতি তারা দেয়নি। রাজস্ব বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয়। কিন্তু সেই লাইসেন্স গ্যারেজ বা দোকান নির্মাণের অনুমতিপত্র নয়।
বালুর মাঠের পূর্ব প্রান্তে এবং বিচ্ছিন্নভাবে রয়েছে আরও ৩০টির গ্যারেজ। অনেককেই মালিক বলে জানা গেলেও তাঁরা কথা বলতে রাজি হননি।
বালুর মাঠের দক্ষিণ দিকে কমিউনিটি সেন্টারের সামনের রাস্তার অর্ধেকটাজুড়ে অবৈধ বাসস্ট্যান্ড। পূর্ব দিকের খোলা জায়গাও এলোমেলোভাবে রাখা হয় বাস। কমলাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছন পর্যন্ত রয়েছে বিভিন্ন দোকানপাট ও বস্তি।
সন্ধ্যার পর এলাকায় ছিনতাই ও নানা অসামাজিক কাজও হয় বলে পথচারী ও ভুক্তভোগীরা বলেন। রামকৃষ্ণ মিশন রোডের দ্বিতীয় লেনের বাসিন্দা ইমরুল আহমেদ প্রথম আলোকে জানান, শাজাহানপুর এলাকায় তাঁর দোকানে যাওয়া আসায় বালুর মাঠের রাস্তা ব্যবহার করেন। কিন্তু ইদানীং সন্ধ্যার পর এ রাস্তায় চলাচল করতে ভয় পান। ১৫ জুন রাত নয়টার দিকে অস্ত্রের মুখে তাঁর মানিব্যাগ ও মুঠোফোন কেড়ে নেয় তিন ছিনতাইকারী। রিকশাওয়ালাকেও মারধর করে।
যোগাযোগ করা হলে রাজউকের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজউকের নিজস্ব জমি অবৈধ দখলমুক্ত করার জন্য যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে রাজউক।’ তবে ঠিক কবে উচ্ছেদ অভিযান চলবে, তা তিনি জানাননি।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে প্রায় ১৫ বিঘা জায়গায় জলাধার ছিল। একসময় সেখানে খাল ও ঝিলপথে নৌযান চলত। আশির দশকের শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ভরাট শুরু হয়। নব্বই দশকের মাঝামাঝি পুরোপুরি ভরাট করে ফেলা হয়। স্থাপত্য ইনস্টিটিউটের সাবেক সভাপতি মোবাশ্বের হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘চারদিকে জলাবদ্ধতার জন্য অন্যতম দায়ী জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়া। ঢাকা শহর থেকে এ ধরনের পানি ধারণ ক্ষেত্রগুলোর অস্তিত্ব হারিয়ে গিয়ে নগরবাসীর জন্য স্থায়ী সমস্যার সৃষ্টি করেছে।’
ভারী বা মাঝারি বৃষ্টির পানি গড়িয়ে আগে খালে ও ঝিলে পড়ত। এখন বৃষ্টির পানি জমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে। এই ওয়ার্ডের মধ্যে পড়েছে কমলাপুর, মতিঝিল, বাংলাদেশ ব্যাংক কলোনি, সোনালী ব্যাংক কলোনি, আর কে মিশন রোড ও গোপীবাগ কবি জসীমউদ্দীন রোড, টিটি পাড়া এলাকাগুলো।
ঢাকা ওয়াসা সেগুনবাগিচা খালের ওপরই রমনা মৎস্য ভবন এলাকা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ বক্স কালভার্ট নির্মাণ করে। যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনের জায়গাও রয়েছে। এর বাইরে রাজউক কিছু জায়গা বিক্রি করে এবং কিছু জায়গার বাণিজ্যিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাকি প্রায় ১০ বিঘা জায়গা দখলদারদের হাতে। দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় দখলকারীরা গড়ে তুলেছে পাকা, আধা পাকা স্থাপনা।
বর্তমানে এলাকাটি বালুর মাঠ বলে পরিচিত। সেখানে মেয়র সাদেক হোসেন খোকা সড়ক ও কমিউনিটি সেন্টার রয়েছে। জায়গার মালিক রাজউক সড়কটি নির্মাণ করে ১০ বছর আগে ঢাকা সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করে। কমিউনিটি সেন্টারের জন্য তিন বিঘা জায়গা বরাদ্দ নেওয়া হয়। বিশাল জায়গাজুড়ে রয়েছে উটের খামার।
মোটর গ্যারেজ, বাসস্ট্যান্ড, দোকানপাট: গতকাল সোমবার সকালে এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনের অংশ থেকে শুরু করে টানা দক্ষিণ দিকে অন্তত ৭০টির মতো মোটর গ্যারেজ। টিনের বা বাঁশের বেড়ার এসব স্থাপনার সামনে খোলা জায়গা। সেখানে এবং সামনের রাস্তায় গাড়ির যন্ত্রপাতি বিছিয়ে রেখে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন মালিকেরা। এখানে তিনটি গ্যারেজের মালিক আবদুল হালিম। প্রথম আলোকে তিনি জানান, তাঁর ট্রেড লাইসেন্স আছে। এখানে গ্যারেজ করার জন্য রাজউকের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন যেহেতু ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে, তাই রাজউকের অনুমতির প্রয়োজন নেই।’
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি বিভাগ ও রাজস্ব বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, এখানে গ্যারেজ করার কোনো অনুমতি তারা দেয়নি। রাজস্ব বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয়। কিন্তু সেই লাইসেন্স গ্যারেজ বা দোকান নির্মাণের অনুমতিপত্র নয়।
বালুর মাঠের পূর্ব প্রান্তে এবং বিচ্ছিন্নভাবে রয়েছে আরও ৩০টির গ্যারেজ। অনেককেই মালিক বলে জানা গেলেও তাঁরা কথা বলতে রাজি হননি।
বালুর মাঠের দক্ষিণ দিকে কমিউনিটি সেন্টারের সামনের রাস্তার অর্ধেকটাজুড়ে অবৈধ বাসস্ট্যান্ড। পূর্ব দিকের খোলা জায়গাও এলোমেলোভাবে রাখা হয় বাস। কমলাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছন পর্যন্ত রয়েছে বিভিন্ন দোকানপাট ও বস্তি।
সন্ধ্যার পর এলাকায় ছিনতাই ও নানা অসামাজিক কাজও হয় বলে পথচারী ও ভুক্তভোগীরা বলেন। রামকৃষ্ণ মিশন রোডের দ্বিতীয় লেনের বাসিন্দা ইমরুল আহমেদ প্রথম আলোকে জানান, শাজাহানপুর এলাকায় তাঁর দোকানে যাওয়া আসায় বালুর মাঠের রাস্তা ব্যবহার করেন। কিন্তু ইদানীং সন্ধ্যার পর এ রাস্তায় চলাচল করতে ভয় পান। ১৫ জুন রাত নয়টার দিকে অস্ত্রের মুখে তাঁর মানিব্যাগ ও মুঠোফোন কেড়ে নেয় তিন ছিনতাইকারী। রিকশাওয়ালাকেও মারধর করে।
যোগাযোগ করা হলে রাজউকের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজউকের নিজস্ব জমি অবৈধ দখলমুক্ত করার জন্য যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে রাজউক।’ তবে ঠিক কবে উচ্ছেদ অভিযান চলবে, তা তিনি জানাননি।
No comments