লতিফ সিদ্দিকী এখনো আ.লীগের সাংসদ- কোনো মামলাতেই সরকারের অনুমোদন নেওয়া হয়নি by জাহাঙ্গীর আলম ও রোজিনা ইসলাম
সাবেক
মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বহিষ্কৃত
হলেও জাতীয় সংসদে এখনো তিনি ওই দলের সংসদ সদস্য হিসেবে রয়েছেন। সংসদে আগের
মতোই সামনের সারির ১৪ নম্বর আসনটি তাঁর জন্য নির্ধারিত আছে। এই সারির
প্রথম আসনটি প্রধানমন্ত্রীর।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ থেকে লতিফ সিদ্দিকীর বহিষ্কারের ব্যাপারে আমি অবহিত নই। আমাকে কিছু জানানো হয়নি। তিনি আগে যেভাবে সংসদে ছিলেন, এখনো তিনি আমার কাছে সেভাবেই আছেন।’
এদিকে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া রাষ্ট্রদ্রোহ এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মামলাগুলোর কোনোটিতেই আইন অনুযায়ী সরকারের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এসব মামলায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না থাকায় মামলাগুলো ত্রুটিপূর্ণ থেকে গেছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। প্রায় সাত মাস জেলে থাকার পর গত সোমবার তিনি জামিনে মুক্তি পান।
লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্যপদ সম্পর্কে প্রথম আলোর এক প্রশ্নের জবাবে স্পিকার বলেন, ‘লতিফ সিদ্দিকীকে বহিষ্কারের বিষয়টি আওয়ামী লীগ থেকে চিঠি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আমাকে জানাতে হবে। তখন আমি আইন অনুযায়ী তাঁর সংসদ সদস্যপদের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে পাঠাব।’
লতিফ সিদ্দিকীর বহিষ্কারের বিষয়টি গত আট মাসেও কেন স্পিকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করা হয়নি, সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগের কেউ কথা বলতে চান না। এ ব্যাপারে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে রয়েছে রহস্যময় নীরবতা। জানতে চাইলে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্পিকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে কি না, বা আদৌ চিঠি দেওয়া হবে কি না, সে ব্যাপারে আমার কাছে কোনো তথ্য নাই। আমি কিছু জানি না। এ বিষয়ে আমি কোনো খবরের অংশীদারও হতে চাই না।’
দল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্পিকারকে কিছু না জানানোয় আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্যপদ নিয়ে এখনো জটিলতা কাটেনি। ফলে সাংসদ হিসেবে তাঁর আগের অবস্থান বহাল রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্পিকার। দীর্ঘ সাত মাস চার দিন কারাভোগের পর জামিনে মুক্ত এই সাবেক মন্ত্রী সংসদ অধিবেশনে যোগ দিতে চান বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে। তবে লতিফ সিদ্দিকীর অধিবেশনে যোগদানের বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু না বললেও স্পিকার জানান, আইনি ব্যাখ্যায় সংসদ সদস্যপদ বহাল থাকলে অধিবেশনে যোগ দিতে আইনি বাধা নেই।
গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে প্রবাসী বাংলাদেশিদের এক অনুষ্ঠানে নবী করিম হজরত মুহাম্মদ (সা.), পবিত্র হজ ও তাবলিগ জামাত সম্পর্কে লতিফ সিদ্দিকী অবমাননাকর বক্তব্য দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এরপর তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করা হয়। পরে গত অক্টোবরে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যপদ ও তার কিছুদিন পরে দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও বহিষ্কার করা হয়।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ে কথা বলে জানা যায়, মূলত দল থেকেই লতিফ সিদ্দিকীর ভাগ্য ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তাঁকে বহিষ্কারের বিষয়ে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত অজ্ঞাত কারণে আটকে আছে। ফলে তাঁর সংসদ সদস্যপদ নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কের অবসান হচ্ছে না। চিঠি ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না সংসদ সচিবালয়ও।
দলীয় সদস্যপদ হারানোর পর লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্যপদ থাকছে কি না, সে বিতর্কের অবসান হয়নি। এ ব্যাপারে সংবিধান এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানো হলে এ বিতর্কের অবসান হতো বলে মনে করছেন আইনজ্ঞরা। সংসদ সদস্যপদ শূন্য প্রসঙ্গে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি যদি উক্ত দল থেকে পদত্যাগ করেন অথবা সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহলে তার সংসদ সদস্যপদ বাতিল হবে’। তবে বহিষ্কার করা হলে কী হবে তা স্পষ্ট কিছু নেই এ ধারায়।
জানতে চাইলে বিশিষ্ট আইনজ্ঞ শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতি সচরাচর ঘটে না। আইনে দল থেকে বহিষ্কার করা হলে কী হবে সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা নাই। কিন্তু ৭০ অনুচ্ছেদের ধারণাটা আমলে নিয়ে যৌক্তিক ব্যাখ্যা হবে তাঁর সংসদ সদস্যপদ শূন্য হয়েছে।
শাহদীন মালিক বলেন, যেহেতু তিনি (লতিফ সিদ্দিকী) সংসদ সদস্য, তাই আওয়ামী লীগের কর্তব্য বিষয়টি স্পিকারকে অবহিত করা। তখন স্পিকার বিষয়টি আইন অনুযায়ী তা নির্বাচন কমিশনে পাঠাবেন।
কোনো মামলায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছিল না: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আনার অভিযোগে দেশের নানা জায়গায় মামলা হলেও এসব মামলা দায়েরের আগে বা পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এ কারণে এসব মামলা আদালতে সাধারণ মামলা বলেই বিবেচিত হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, এসব মামলা অনুমোদনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়নি। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৬ ধারা অনুযায়ী (২৯৫)ক অনুযায়ী রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধের মামলার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, কেন তাঁরা এসব মামলায় মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেননি সে জন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮৮ ধারা অনুযায়ী যখন বাংলাদেশের কোনো নাগরিক বাইরের কোনো স্থানে কোনো অপরাধ করে, তখন তাকে যে স্থানে পাওয়া যাবে অপরাধটি সে স্থানে করা হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো অভিযোগ সম্পর্কে কোনো তদন্ত করা যাবে না। কিন্তু লতিফ সিদ্দিকীর মামলাগুলোর ব্যাপারে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি।
জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের অনুমতি ছাড়া এই দুই ধরনের মামলা চলতে পারে না। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে।
লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ঢাকাসহ সারা দেশে মোট ২৭টি মামলা হয়েছিল। গত ২৩ জুন ১০টি এবং গত ২৬ মে সাতটি মামলায় তাঁকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। বাকি ১০টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা না থাকায় জামিন চাননি লতিফ সিদ্দিকী। তাঁর জামিন আবেদনে বলা হয়, দেশের বাইরে সংঘটিত অপরাধ নিজ দেশে বিচার করতে হলে মামলা দায়েরের আগে সরকারের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু এসব মামলার ক্ষেত্রে কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি।
তবে কারাগারে থাকা অবস্থায় লতিফ সিদ্দিকী একাধিকবার সংসদে যোগ দেওয়ার জন্য কারা অধিদপ্তরের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করলেও তাঁকে সে অনুমতি দেওয়া হয়নি।
গত অক্টোবরে ওই বিতর্কিত মন্তব্যের পর কয়েক দিন আমেরিকা ও কানাডায় মেয়ের বাড়িতে অবস্থান শেষে লতিফ সিদ্দিকী ভারতের কলকাতায় এসে আত্মগোপনে চলে যান। এ অবস্থায় ১২ অক্টোবর ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থেকে লতিফ সিদ্দিকীর অপসারণের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
একই দিন দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে লতিফ সিদ্দিকীকে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর পদ থেকে বহিষ্কার, প্রাথমিক সদস্যপদ স্থগিত এবং কেন তাঁকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নির্ধারিত সময় পার হওয়ার আগেই লতিফ সিদ্দিকী দলীয় সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বরাবর ই-মেইলে এর দীর্ঘ জবাবও পাঠান। তবে দলের কাছে তাঁর ওই জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় ২৪ অক্টোবর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসন থেকে পাঁচবারের নির্বাচিত এই সাংসদকে দল থেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হয়।
গত ২৩ নভেম্বর রাতে অনেকটা নাটকীয়ভাবেই দেশে ফেরেন লতিফ সিদ্দিকী। প্রায় ৪১ ঘণ্টা ‘অজ্ঞাতবাস’-এর পর ২৫ নভেম্বর দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। পুলিশ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করলে আদালতের আদেশে তাঁকে নেওয়া হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখানে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে কয়েক দিন পরই বঙ্গবন্ধু মেডিকেল হাসপাতালের প্রিজন সেলে ভর্তি করা হয় তাঁকে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ থেকে লতিফ সিদ্দিকীর বহিষ্কারের ব্যাপারে আমি অবহিত নই। আমাকে কিছু জানানো হয়নি। তিনি আগে যেভাবে সংসদে ছিলেন, এখনো তিনি আমার কাছে সেভাবেই আছেন।’
এদিকে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া রাষ্ট্রদ্রোহ এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মামলাগুলোর কোনোটিতেই আইন অনুযায়ী সরকারের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এসব মামলায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না থাকায় মামলাগুলো ত্রুটিপূর্ণ থেকে গেছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। প্রায় সাত মাস জেলে থাকার পর গত সোমবার তিনি জামিনে মুক্তি পান।
লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্যপদ সম্পর্কে প্রথম আলোর এক প্রশ্নের জবাবে স্পিকার বলেন, ‘লতিফ সিদ্দিকীকে বহিষ্কারের বিষয়টি আওয়ামী লীগ থেকে চিঠি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আমাকে জানাতে হবে। তখন আমি আইন অনুযায়ী তাঁর সংসদ সদস্যপদের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে পাঠাব।’
লতিফ সিদ্দিকীর বহিষ্কারের বিষয়টি গত আট মাসেও কেন স্পিকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করা হয়নি, সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগের কেউ কথা বলতে চান না। এ ব্যাপারে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে রয়েছে রহস্যময় নীরবতা। জানতে চাইলে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্পিকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে কি না, বা আদৌ চিঠি দেওয়া হবে কি না, সে ব্যাপারে আমার কাছে কোনো তথ্য নাই। আমি কিছু জানি না। এ বিষয়ে আমি কোনো খবরের অংশীদারও হতে চাই না।’
দল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্পিকারকে কিছু না জানানোয় আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্যপদ নিয়ে এখনো জটিলতা কাটেনি। ফলে সাংসদ হিসেবে তাঁর আগের অবস্থান বহাল রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্পিকার। দীর্ঘ সাত মাস চার দিন কারাভোগের পর জামিনে মুক্ত এই সাবেক মন্ত্রী সংসদ অধিবেশনে যোগ দিতে চান বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে। তবে লতিফ সিদ্দিকীর অধিবেশনে যোগদানের বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু না বললেও স্পিকার জানান, আইনি ব্যাখ্যায় সংসদ সদস্যপদ বহাল থাকলে অধিবেশনে যোগ দিতে আইনি বাধা নেই।
গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে প্রবাসী বাংলাদেশিদের এক অনুষ্ঠানে নবী করিম হজরত মুহাম্মদ (সা.), পবিত্র হজ ও তাবলিগ জামাত সম্পর্কে লতিফ সিদ্দিকী অবমাননাকর বক্তব্য দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এরপর তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করা হয়। পরে গত অক্টোবরে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যপদ ও তার কিছুদিন পরে দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও বহিষ্কার করা হয়।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ে কথা বলে জানা যায়, মূলত দল থেকেই লতিফ সিদ্দিকীর ভাগ্য ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তাঁকে বহিষ্কারের বিষয়ে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত অজ্ঞাত কারণে আটকে আছে। ফলে তাঁর সংসদ সদস্যপদ নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কের অবসান হচ্ছে না। চিঠি ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না সংসদ সচিবালয়ও।
দলীয় সদস্যপদ হারানোর পর লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্যপদ থাকছে কি না, সে বিতর্কের অবসান হয়নি। এ ব্যাপারে সংবিধান এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানো হলে এ বিতর্কের অবসান হতো বলে মনে করছেন আইনজ্ঞরা। সংসদ সদস্যপদ শূন্য প্রসঙ্গে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি যদি উক্ত দল থেকে পদত্যাগ করেন অথবা সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহলে তার সংসদ সদস্যপদ বাতিল হবে’। তবে বহিষ্কার করা হলে কী হবে তা স্পষ্ট কিছু নেই এ ধারায়।
জানতে চাইলে বিশিষ্ট আইনজ্ঞ শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতি সচরাচর ঘটে না। আইনে দল থেকে বহিষ্কার করা হলে কী হবে সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা নাই। কিন্তু ৭০ অনুচ্ছেদের ধারণাটা আমলে নিয়ে যৌক্তিক ব্যাখ্যা হবে তাঁর সংসদ সদস্যপদ শূন্য হয়েছে।
শাহদীন মালিক বলেন, যেহেতু তিনি (লতিফ সিদ্দিকী) সংসদ সদস্য, তাই আওয়ামী লীগের কর্তব্য বিষয়টি স্পিকারকে অবহিত করা। তখন স্পিকার বিষয়টি আইন অনুযায়ী তা নির্বাচন কমিশনে পাঠাবেন।
কোনো মামলায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছিল না: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আনার অভিযোগে দেশের নানা জায়গায় মামলা হলেও এসব মামলা দায়েরের আগে বা পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এ কারণে এসব মামলা আদালতে সাধারণ মামলা বলেই বিবেচিত হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, এসব মামলা অনুমোদনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়নি। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৬ ধারা অনুযায়ী (২৯৫)ক অনুযায়ী রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধের মামলার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, কেন তাঁরা এসব মামলায় মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেননি সে জন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮৮ ধারা অনুযায়ী যখন বাংলাদেশের কোনো নাগরিক বাইরের কোনো স্থানে কোনো অপরাধ করে, তখন তাকে যে স্থানে পাওয়া যাবে অপরাধটি সে স্থানে করা হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো অভিযোগ সম্পর্কে কোনো তদন্ত করা যাবে না। কিন্তু লতিফ সিদ্দিকীর মামলাগুলোর ব্যাপারে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি।
জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের অনুমতি ছাড়া এই দুই ধরনের মামলা চলতে পারে না। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে।
লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ঢাকাসহ সারা দেশে মোট ২৭টি মামলা হয়েছিল। গত ২৩ জুন ১০টি এবং গত ২৬ মে সাতটি মামলায় তাঁকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। বাকি ১০টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা না থাকায় জামিন চাননি লতিফ সিদ্দিকী। তাঁর জামিন আবেদনে বলা হয়, দেশের বাইরে সংঘটিত অপরাধ নিজ দেশে বিচার করতে হলে মামলা দায়েরের আগে সরকারের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু এসব মামলার ক্ষেত্রে কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি।
তবে কারাগারে থাকা অবস্থায় লতিফ সিদ্দিকী একাধিকবার সংসদে যোগ দেওয়ার জন্য কারা অধিদপ্তরের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করলেও তাঁকে সে অনুমতি দেওয়া হয়নি।
গত অক্টোবরে ওই বিতর্কিত মন্তব্যের পর কয়েক দিন আমেরিকা ও কানাডায় মেয়ের বাড়িতে অবস্থান শেষে লতিফ সিদ্দিকী ভারতের কলকাতায় এসে আত্মগোপনে চলে যান। এ অবস্থায় ১২ অক্টোবর ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থেকে লতিফ সিদ্দিকীর অপসারণের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
একই দিন দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে লতিফ সিদ্দিকীকে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর পদ থেকে বহিষ্কার, প্রাথমিক সদস্যপদ স্থগিত এবং কেন তাঁকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নির্ধারিত সময় পার হওয়ার আগেই লতিফ সিদ্দিকী দলীয় সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বরাবর ই-মেইলে এর দীর্ঘ জবাবও পাঠান। তবে দলের কাছে তাঁর ওই জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় ২৪ অক্টোবর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসন থেকে পাঁচবারের নির্বাচিত এই সাংসদকে দল থেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হয়।
গত ২৩ নভেম্বর রাতে অনেকটা নাটকীয়ভাবেই দেশে ফেরেন লতিফ সিদ্দিকী। প্রায় ৪১ ঘণ্টা ‘অজ্ঞাতবাস’-এর পর ২৫ নভেম্বর দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। পুলিশ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করলে আদালতের আদেশে তাঁকে নেওয়া হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখানে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে কয়েক দিন পরই বঙ্গবন্ধু মেডিকেল হাসপাতালের প্রিজন সেলে ভর্তি করা হয় তাঁকে।
No comments