দলের কারণে জালিয়াতদের ধরা যাচ্ছে না: অর্থমন্ত্রী
দলের বাধার কারণে হল-মার্ক জালিয়াতির আসামি ব্যাংক কর্মকর্তাদের ধরতে পারছেন না বলে অভিযোগ তুলেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। মঙ্গলবার সংসদে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট পাসের আগে ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় মুহিত বলেন, আমরা সোনালী ব্যাংকের একজন ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টরকে জেলে নিতে সক্ষম হই। তিনি জেলেই মারা গেছেন। মনে হয়, আরেকজন ম্যানেজিং ডাইরেক্টরকে জেলে নেয়া হয়েছে। আরও কয়েকজন ডাইরেক্টরকে আমি কোন মতেই জেলে নিতে পারছি না। এরা সকলেই আসামি, জালিয়াতির আসামি। এরা আমাদের লোকজনের সমর্থনে বাইরে রয়েছে। আমি এটাতে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে বরাদ্দের বিরুদ্ধে আনা ছাঁটাই প্রস্তাবে জাতীয় পার্টির ৬ জন ও স্বতন্ত্র ২ জন এমপি বিভিন্ন ব্যাংকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের ঘটনার কড়া সমালোচনা করেন। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থ মঞ্জুরের দাবির বিরোধিতা করে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। আমরা কিসের মাঝে আছি? এই টাকা জনগণের টাকা। এর বিচার হয়নি। কুমিল্লা-৮ আসনের সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম মিলন বলেন, ব্যাংকগুলো তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অব্যবস্থার জন্য আমার এই ছাঁটাই প্রস্তাব। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রস্তম আলী ফরাজী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, ৫৫ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ! সোনালী নাম শুনলে আঁতকে উঠি। এমপিদের বক্তব্যের পর অর্থমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই ব্যাংকে কাজ করলে আস্থা ও বিশ্বাসের প্রয়োজন। সেটার যখন ঘাটতি হয়, তখন অনেক অসুবিধা হয়। আমাদের কিছু ঘাটতি হয়েছে সোনালী ব্যাংকে, বেসিক ব্যাংকে। তার জন্য যথেষ্ট পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। এই ধরনের শাস্তি যেটা কোনদিনই বাংলাদেশে হয়নি। ম্যানেজিং ডিরেক্টর তো দূরের কথা, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর... আনথিংকেবল। এতদিন কেউ সাহস করেনি এদের টাচ্ করতে। আমি তাদের জেলে নিয়েছি, বলেন অর্থমন্ত্রী। তবে ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কাজটি গতিশীল নয় বলে স্বীকার করেন তিনি। একেবারে যে স্পিডে যাওয়া উচিত, সে স্পিডে যেতে পারছি না। বেসিক ব্যাংক প্রসঙ্গে মুহিত বলেন, বেসিক ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদ করেছি। তারা অনুসন্ধান চালিয়ে রিপোর্ট ঠিক করছে। সে রিপোর্ট পাওয়ার পর যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতিমধ্যে আমরা কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি, যাতে বেসিক ব্যাংকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুষ্ট লোক দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে। খেলাপি ঋণের তালিকা নিয়ে প্রশ্ন করার আহ্বান জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, তিনি অবশ্যই তার জবাব দেবেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় খাতে ছাঁটাই প্রস্তাবের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, যেসব উপদেশ দেয়া হয়েছে সেগুলো অদ্ভুত উপদেশ। সংসদ সদস্যরা ভুল পরামর্শ দিয়েছেন। তাই এ মন্ত্রণালয়ের টাকা কমাতে পারছি না। আমরা সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন ভাতার বৈষম্যের পরিত্রাণ চাই। এ জন্য ২০০১ সালে ৬২ শতাংশ বেতনভাতা বাড়িয়েছি। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে যে বেতন দিতে যাচ্ছি, তাতে আর জনপ্রশাসনে অসন্তোষ থাকবে না। মন্ত্রণালয়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য সরকার সবচাইতে বেশি চেষ্টা করে। বেসরকারি খাতের সমান বেতন সরকারি কর্মকর্তাদের কোন দিনই হয় না।
No comments