জরাজীর্ণ রমনা পদচারী–সেতু by মামুনুর রশীদ
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনের রমনা উদ্যানসংলগ্ন পদচারী–সেতুর নিচের পলেস্তারা খসে গেছে অনেক জায়গায়। পথচারীরা যেমন ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন, তেমনি যানবাহনও ঝুঁকির মধ্যে l ছবি: সাইফুল ইসলাম |
রাজধানীর
রমনা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মধ্যে সংযোগকারী পদচারী সেতুটির সিলিং ভেঙে
নিচের অংশে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। ভাঙা অংশ দিয়ে উঁকি দিচ্ছে লোহার
রড। কার্নিশসহ বাইরের নানা অংশের পলেস্তারা খসে নির্মাণের মাত্র ১৮ বছরের
মধ্যেই জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়া এই পদচারী সেতুটি সংস্কারের জন্য যত দ্রুত সম্ভব উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞসহ এই পথে চলাচলকারী লোকজন এবং যানবাহনের চালকেরা। না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্রে জানা যায়, বরাবরই ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ও নানা সংগঠনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রচুর লোকসমাগম হয়ে থাকে। এ ছাড়া প্রতিবছর পয়লা বৈশাখে রমনার বটমূলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা লোকজন শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবনের মধ্যবর্তী এ জায়গাটি পার হতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হতেন। কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। গত শতকের নব্বইয়ের দশকে কয়েকটি প্রতিবন্ধী সংগঠন ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে ওই স্থানে একটি পদচারী সেতু নির্মাণের দাবি ওঠে। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন অবিভক্ত সিটি করপোরেশন ১৯৯৩ সালে পদচারী সেতুটি নির্মাণ শুরু করে। দুপাশে প্রতিবন্ধীদের চলাচলের উপযোগী র্যাম্পসহ তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন এ পদচারী সেতুটি ১৯৯৭ সালে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় স্থাপনাটি তার জৌলুশ হারিয়েছে অনেক দিন আগেই। সড়কের এপার থেকে ওপার পর্যন্ত কংক্রিটের তৈরি এ স্থাপনাটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১০০ ফুট। মাঝখানে কোনো পিলার নেই। সরেজমিনে দেখা যায়, পদচারী সেতুটির ওপরে মেঝের অংশ অক্ষত থাকলেও কার্নিশসহ এর বহিরাবরণ ও নিচের অংশ জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। কয়েকটি জায়গায় বড় বড় গর্ত ও ফাটল। সেতুতে ওঠার দুপাশে র্যাম্প এবং ওপরের অংশ ময়লা-আবর্জনা ও মল-মূত্রে ভরা।
এ সময় স্থাপনাটির কাছে দাঁড়িয়ে কথা হয় ‘ফোর ওয়ালস ইনসাইড আউটসাইড’ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্থপতি শাহনেওয়াজ খানের সঙ্গে। যানজটের কারণে তিনি প্রায়ই এ অংশটুকু হেঁটে পার হন। ব্রিজটির নিচে বড় বড় ফাটলগুলো দেখিয়ে তিনি বলেন, বালু-সুরকির চাঁইগুলো যেভাবে খসে পড়ছে, তাতে করে সেগুলো কোনো পথচারী কিংবা গাড়ির ওপরেও পড়তে পারে। একই ধরনের দুর্ঘটনায় এর আগে মার্কিন দূতাবাসের সামনে পদচারী সেতু ধসে প্রাণহানির ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
এ আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তা বললেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশের চা-দোকানি আবদুল হালিম। তিনি জানালেন, কয়েক দিন আগেই তাঁর পরিচিত একজনের মাথার ওপর জমাটবাঁধা চুন-সুরকির একটি ছোট আস্তর পড়ে মাথা ফেটেছে। ঠিক পদচারী সেতুর নিচেই যানজটে আটকে পড়া অবস্থায় শিকড় পরিবহনের একটি বাসের চালক মোহাম্মদ মনু মিয়া বললেন, ‘চেষ্টা করি এ জায়গাখান দম ধইরা পার হইতে।’
সেতুটির বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী হাসান আনসারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যেকোনো ধরনের স্থাপনা ভালোভাবে টিকিয়ে রাখার পূর্বশর্ত হচ্ছে সেটি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় রাখা। কিন্তু ওভারব্রিজটি দেখে মনে হচ্ছে সেটি কখনোই করা হয়নি।’
ব্রিজের নিচের অংশে গর্ত এবং ফাটলগুলো সম্পর্কে তিনি জানান, এই ত্রুটিগুলো এখনই সারিয়ে না তুললে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ভূমিকম্প হলে ঝুঁকিটা আরও বেড়ে যাবে।
তবে এ বিষয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে মনে করছেন ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান। তাঁর ভাষ্য, ‘ব্রিজের নিচের যে ফলস সিলিং আছে, তা কোথাও কোথাও খুলে গেছে এটা ঠিক। তবে কংক্রিটের ঢালাই ঠিক আছে।’
এ বছরের মধ্যেই ব্রিজটির সংস্কারকাজ শেষ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সময় এবং অর্থাভাবে এত দিন পর্যন্ত সংস্কারকাজ করা সম্ভব হয়নি।’
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়া এই পদচারী সেতুটি সংস্কারের জন্য যত দ্রুত সম্ভব উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞসহ এই পথে চলাচলকারী লোকজন এবং যানবাহনের চালকেরা। না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্রে জানা যায়, বরাবরই ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ও নানা সংগঠনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রচুর লোকসমাগম হয়ে থাকে। এ ছাড়া প্রতিবছর পয়লা বৈশাখে রমনার বটমূলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা লোকজন শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবনের মধ্যবর্তী এ জায়গাটি পার হতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হতেন। কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। গত শতকের নব্বইয়ের দশকে কয়েকটি প্রতিবন্ধী সংগঠন ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে ওই স্থানে একটি পদচারী সেতু নির্মাণের দাবি ওঠে। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন অবিভক্ত সিটি করপোরেশন ১৯৯৩ সালে পদচারী সেতুটি নির্মাণ শুরু করে। দুপাশে প্রতিবন্ধীদের চলাচলের উপযোগী র্যাম্পসহ তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন এ পদচারী সেতুটি ১৯৯৭ সালে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় স্থাপনাটি তার জৌলুশ হারিয়েছে অনেক দিন আগেই। সড়কের এপার থেকে ওপার পর্যন্ত কংক্রিটের তৈরি এ স্থাপনাটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১০০ ফুট। মাঝখানে কোনো পিলার নেই। সরেজমিনে দেখা যায়, পদচারী সেতুটির ওপরে মেঝের অংশ অক্ষত থাকলেও কার্নিশসহ এর বহিরাবরণ ও নিচের অংশ জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। কয়েকটি জায়গায় বড় বড় গর্ত ও ফাটল। সেতুতে ওঠার দুপাশে র্যাম্প এবং ওপরের অংশ ময়লা-আবর্জনা ও মল-মূত্রে ভরা।
এ সময় স্থাপনাটির কাছে দাঁড়িয়ে কথা হয় ‘ফোর ওয়ালস ইনসাইড আউটসাইড’ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্থপতি শাহনেওয়াজ খানের সঙ্গে। যানজটের কারণে তিনি প্রায়ই এ অংশটুকু হেঁটে পার হন। ব্রিজটির নিচে বড় বড় ফাটলগুলো দেখিয়ে তিনি বলেন, বালু-সুরকির চাঁইগুলো যেভাবে খসে পড়ছে, তাতে করে সেগুলো কোনো পথচারী কিংবা গাড়ির ওপরেও পড়তে পারে। একই ধরনের দুর্ঘটনায় এর আগে মার্কিন দূতাবাসের সামনে পদচারী সেতু ধসে প্রাণহানির ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
এ আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তা বললেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশের চা-দোকানি আবদুল হালিম। তিনি জানালেন, কয়েক দিন আগেই তাঁর পরিচিত একজনের মাথার ওপর জমাটবাঁধা চুন-সুরকির একটি ছোট আস্তর পড়ে মাথা ফেটেছে। ঠিক পদচারী সেতুর নিচেই যানজটে আটকে পড়া অবস্থায় শিকড় পরিবহনের একটি বাসের চালক মোহাম্মদ মনু মিয়া বললেন, ‘চেষ্টা করি এ জায়গাখান দম ধইরা পার হইতে।’
সেতুটির বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী হাসান আনসারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যেকোনো ধরনের স্থাপনা ভালোভাবে টিকিয়ে রাখার পূর্বশর্ত হচ্ছে সেটি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় রাখা। কিন্তু ওভারব্রিজটি দেখে মনে হচ্ছে সেটি কখনোই করা হয়নি।’
ব্রিজের নিচের অংশে গর্ত এবং ফাটলগুলো সম্পর্কে তিনি জানান, এই ত্রুটিগুলো এখনই সারিয়ে না তুললে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ভূমিকম্প হলে ঝুঁকিটা আরও বেড়ে যাবে।
তবে এ বিষয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে মনে করছেন ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান। তাঁর ভাষ্য, ‘ব্রিজের নিচের যে ফলস সিলিং আছে, তা কোথাও কোথাও খুলে গেছে এটা ঠিক। তবে কংক্রিটের ঢালাই ঠিক আছে।’
এ বছরের মধ্যেই ব্রিজটির সংস্কারকাজ শেষ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সময় এবং অর্থাভাবে এত দিন পর্যন্ত সংস্কারকাজ করা সম্ভব হয়নি।’
No comments