যানজটে স্থবির: ঢাকার রাস্তায় হাজারো মানুষের ইফতার by কাজী সুমন
বিকাল
৫টা। গাবতলীয় বাসস্ট্যান্ড থেকে লাব্বাইক পরিবহনে ওঠেন সাব্বির। উদ্দেশ্য
মালিবাগের বাসায় গিয়ে ইফতার করবেন। বাইরে ঝুম বৃষ্টিতে কিছুটা তন্দ্রাভাবও
চলে এসেছিল তার। সোয়া ৬টার দিকে হঠাৎ তার ঘুম ভাঙে। চোখ মেলে দেখেন- গাড়িটি
তখনও শ্যামলী শিশুমেলার সিগন্যালে দাঁড়িয়ে। জানালা সরু ফাঁক দিয়ে মাথা বের
করে সামনের রাস্তার দিকে তাকান। দৃশ্য দেখে তার কপালে তখন চিন্তার ভাঁজ।
যতদূর চোখের দৃষ্টি যায় ততদূর শুধু গাড়ি। সামনে-পেছনে সবই ঠাঁয় দাঁড়িয়ে।
যানজটে বসে বারবার তাকাচ্ছিলেন ঘড়ির কাঁটার দিকে। আর হিসেব কষছিলেন ইফতারের
সময়ের। ভাবছিলেন কোনরকম ফার্মগেট পৌঁছলেও নেমে অন্তত ১৭ ঘণ্টার উপস পেটে
কিছু দানাপানি দিতে পারবেন। কিন্তু কচ্ছপ গতিতে গাড়িটি যখন গণভবনের সামনে
এসে পৌঁছায় ততক্ষণে মাগরিবের আজান পড়ে গেছে। সারা দিনের রোজা ভাঙার জন্য
সামান্য পানিটুকু সঙ্গে না থাকায় আশপাশের যাত্রীদের দিকে তাকাচ্ছিলেন তিনি।
কিন্তু সাব্বিরের মতো একই অবস্থা ছিল গাড়ির প্রায় সব যাত্রীরই। কারোই
ইফতারের পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না। এর মধ্যে দুই মহিলা যাত্রী ব্যাগ থেকে দেড়
লিটারের দুটি মাম পানির বোতল বের করেন। নিজেরা রোজা ভেঙে বোতল দুটি দুইপাশে
যাত্রীদের বাড়িয়ে দেন। কিন্তু তিন-চার সিট পেরুনোর পরই বোতলের পানি শেষ
হয়ে যায়। পেছন থেকে বেশ কয়েকজন বলছিলেন- ভাই পানির বোতলটা এদিকে একটু
দিয়েন। খালি বোতল দেখে হতাশায় তাদের মুখগুলো অন্ধকার হয়ে যায়। এরপর এক
যাত্রী হেলপারকে একশ’ টাকার একটি নোট দেন আরও দুটি পানির বোতল আনার জন্য।
বাকি যাত্রীরা ওই দুই বোতল পানি দিয়ে রোজা ভাঙেন। গণভবনের সামনে থেকে
আসাদগেট পৌঁছতেই সাড়ে সাতটা বেজে যায়। আশপাশের হোটেল না থাকায় নামতেও
পারছিলেন না যাত্রীরা। একদিকে পেটের ক্ষুধা আরেকদিকে যানজটের বিড়ম্বনায়
তেতে উঠছিল প্রায় যাত্রীর মেজাজই। আর ক্ষোভ ঝাড়ছিলেন চালকের ওপর। প্রায়
পৌনে ৮টার দিকে গাড়িটি যখন ফার্মগেটে পৌঁছায় প্রায় যাত্রীই নেমে হোটেলে
গিয়ে ইফতার করেন। যানজটের কারণে প্রতিদিনই এ রকম বিড়ম্বনায় পড়ছেন রাজধানীর
হাজারো যাত্রী। চলন্ত বাসে সামান্য পানি কিংবা কয়েক পিস খেজুর, পিয়াজু,
বেগুনি খেয়েই ইফতার করছেন তারা। বাসে যারা বুট, ছোলা, মুড়ি যৎসামান্য যা
নিয়েই ওঠেন সবাই তা ভাগাভাগি করে খান। ইফতারের সময় তাদের জেগে ওঠে
ভ্রাতৃপ্রেম। বিকাল সাড়ে ৪টায় শাহবাগ মোড় থেকে ৮ নম্বর বাসে ওঠেন মুহিন।
উদ্দেশ্য যাবেন মিরপুর-১। কিন্তু আসাদগেট পৌঁছাতেই তার ইফতারের সময় হয়ে
যায়। বাধ্য হয়ে হকার থেকে একটি পানির বোতল কিনে ইফতার করেন তিনি। এদিকে
আরেক বিড়ম্বনায় পড়ছেন অফিস ফেরত মানুষ। প্রিয়জনদের জন্য ইফতার সামগ্রী কিনে
যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকেন। ইফতারের সময় পেরিয়ে গেলেও বাসায়
পৌঁছতে পারেন না তারা। ওদিকে বাসায় বাবার অপেক্ষায় থাকেন তার সন্তানরা।
সময়মতো ফিরতে না পারায় বাবাকে ছাড়াই ইফতার করতে হয় সন্তানদের। বিকালে
রাজধানীর অনেক রাস্তায় যানজটের ভয়াবহ চিত্র দেখা যায়। ধানমন্ডির
গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে ল্যাবএইড হাসপাতাল-সায়েন্স ল্যাবরেটরি-বাটা
সিগন্যাল হয়ে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত প্রায় সময় তীব্র যানজট দেখা দেয় । একই
চিত্র সায়েন্স ল্যাব থেকে আজিমপুর মোড় পর্যন্ত রাস্তায়। তবে
বিপণীবিতানগুলোর আশপাশে যানজট আরও বেশি লক্ষ্য করা যায়।
এরই মধ্যে সাধারণ মানুষ ঈদের কেনাকাটা শুরু করে দেয়ায় বিপণীবিতানের আশপাশে ক্রেতাদের অবৈধ গাড়ি পার্কিং আরও বড় যানজটের কারণ হয়ে উঠেছে। যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, মতিঝিল, গুলিস্তান এলাকায় তীব্র যানজট থাকে। গুলশান-বাড্ডা-মগবাজার-গুলিস্তান ও মহাখালী-প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় এবং ধানমন্ডি ২৭ নম্বর পর্যন্তও দেখা দেয় অসহনীয় যানজট। মৌচাক, মালিবাগ, বাসাবো-খিলগাঁও চৌধুরীপাড়া হয়ে রামপুরা টেলিভিশন সেন্টার, বাড্ডা লিংক রোড পর্যন্ত একই চিত্র থাকে।
এরই মধ্যে সাধারণ মানুষ ঈদের কেনাকাটা শুরু করে দেয়ায় বিপণীবিতানের আশপাশে ক্রেতাদের অবৈধ গাড়ি পার্কিং আরও বড় যানজটের কারণ হয়ে উঠেছে। যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, মতিঝিল, গুলিস্তান এলাকায় তীব্র যানজট থাকে। গুলশান-বাড্ডা-মগবাজার-গুলিস্তান ও মহাখালী-প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় এবং ধানমন্ডি ২৭ নম্বর পর্যন্তও দেখা দেয় অসহনীয় যানজট। মৌচাক, মালিবাগ, বাসাবো-খিলগাঁও চৌধুরীপাড়া হয়ে রামপুরা টেলিভিশন সেন্টার, বাড্ডা লিংক রোড পর্যন্ত একই চিত্র থাকে।
No comments